পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆN9R প্রবাসী ১৩৪৪ তাহারই দিকে পাশ ফিরিয়া শুইয়া আছে থোকা । আলোটা উচু করিয়া সে এই বিমল দৃশ্য দেখিতে লাগিল আর তার দুই চোখে জল আসিয়া গেল। সে মনে মনে বলিল, “ভগবান ! এর ভিতরেও অকল্যাণ ! অকল্যাণ এখানে আসতে পারে!” খোকাকে তুলিয়া লইতে যাইতেই মলয়ার ঘুম ভাঙিয়া গেল। সে তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, “কে ?” অঞ্জলি বলিল, “আমি দিদি ” মলয়া বলিল, “কে, অঞ্জলি ? ও !” কিসের যেন বাধা । কেহই কোন কথা কহিতে পারে না। কিছুক্ষণ পরে অঞ্জলি মলয়াকে বলিল, “তুমি আমন ক’রো না দিদি, ওতে আমার ভারী কষ্ট হবে। খোকার ওতে সবচেয়ে বেশী অমঙ্গল হবে । তোমার হাসিমুখ ওর মাথায় আজ দেবতার বরকে ডেকে নিয়ে আসবে I** মলয়া হাসিয়া বলিল, “ন গো রাণী, আমার কোন কষ্ট নেই। আমার খোকনধনের ভাত, আমি হাসব না, হাসবে কে ?” সে জানিত বৃদ্ধি এতক্ষণে হইয়। গিয়াছে। অঞ্জলিকে এক পাইয়া গৌরীপিসি ও নিতাইয়ের দিদিমা বলিল, “হঁ্য গো ছোটবউ, নিজের ভাল ত পাগলেও বোঝে, আর তুমি কি করছ ! শুভকৰ্ম্মে কল্যাণঅকল্যাণ ব’লে একটা কথা আছেই। যে দেখলে না জন্মে ছেলের মুখ, তাকে দিয়ে কি কোন শুভ কাজ হয়, না করাতে আছে ? তাতে ষে খোকার অমঙ্গল হবে ।” অঞ্জলি রাগিয়া বলিল, “হবে হবে, তাতে কার কি। সবাই মিলে কি আমায় পাগল করবেন নাকি।” বলিয়া আর কোন কথা বলিবার বা শুনিবার অবকাশ না দিয়া সে চলিয়া গেল । কিন্তু সারারাত্রি তাহার মনে এই মঙ্গল-অমঙ্গলের দ্বন্দ্ব চলিল এবং শেষ পৰ্য্যস্ত তাহার কোমল মাতৃহৃদয়ে নবজাত শিশুর কল্যাণের শঙ্কার একটা ছায়াপাতও হইল। . সে তাহার অস্তিত্ব টের পাইল, কিন্তু কিছুতেই সেটাকে ঝাড়িয়া ফেলিয়া দিতে পারিল না। মেয়ের জল সইতে যায়। জলে ক্রিয়াকৰ্ম্ম সবই সুখদাসুন্দরীই করিতে লাগিলেন। তিনিই বড়। এদিক ওদিক চাহিয়া কোন ফাকে একটু দূরে গিয়া মলয়া বুকের মধ্য হইতে একটা কাঠের কোটা বাহির করিয়া জলে ডুবাইয়া দিল । ভিতরের তারে সেটা ডুবিয় গেল । বাড়ী আসিয়া পায়রাটাকে বাহির করিয়া দিবার জন্য সে খাচার দুয়ারটা খুলিয়া দিল । কিন্তু সেটা বাহির হইতে চাহে না । অঞ্জলি দেখিয়া বলিল, “ওকি দিদি, ওকে তাড়াচ্ছ ?” হাসিয়া মলয়া বলিল, “আজ খোকনমণির ভাতের দিন। এ জীবটাকে বেঁধে কষ্ট দিই কেন শুধু শুধু। যাক, আমার খোকার আপদবালাই নিয়ে ও উড়ে যাক ৷” সেটাকে সে উড়াইয়া দিয়া শূন্ত খাচাটা ঝুলাইয় রাখিল । হোম শেষ হইয়া গেল, আশীৰ্ব্বাদ করিবার সময় আসিল । সবার আগে ডাক আসে মলয়ার মনে,— খোকনকে আশীৰ্ব্বাদ করিতে হইবে । দুই দিন ধরিয়া যে ঘাত-প্রতিঘাতে হৃদয় চঞ্চল হইয়াছিল, মুহূর্তের প্রসাদে সে-সবই শাস্ত হইয়া গেল। তাহার জীবনের শ্ৰেষ্ঠ লগ্ন আসিয়াছে, খোকনমণির আশীৰ্ব্বাদ। আশীৰ্ব্বাদে বাধা নাই, আশীৰ্ব্বাদে অমঙ্গল নাই,–হৃদয় হইতে আশীৰ্ব্বাদের গোত্র নাই । নানা সাজসজ্জায় ভূষিত পুরনারীর দল আসিয়া নবকুমারকে আশীৰ্ব্বাদ করিতে দাড়াইয়াছে। হাসি-রঙ্গ, তামাশা, আনন্দ-উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিত্র, সকলের মন ভরিয়া আছে । তারই মাঝে জ্যেঠার কোলে চড়িয়া স্বসজ্জিত কুমার। পরনে হলুদ রঙের চেলির জোড়, বেনারসীর জামার উপরে মুন্দর উত্তরীয়, গলায় স্বর্ণহার, মাথার চুলের গোছায় বিনাইয়া গাথ মুক্তার ঝালর— কপালে শ্বেতচন্দনের ফোট,-পরিশ্রমে মুখ-চোখ লাল, অথচ ভিতরের আনন্দে বিস্ফারিত নয়নে কুতূহলী জনতার পানে চাহিয়া আছে । মলয়ার নিকটে সেবেশের তুলনা নাই। নয়ন ভরিয়া সে দেখিতেছে। খোকার দৃষ্টি পড়িল মলয়ার দিকে, অমনি জ্যেঠার কোল হইতে মামিয়া আসার জন্য সে কি প্রয়াস ! হাত বাড়াইয়া অফুট কাকলী করে। মধুর জানন্দে মলয়া