পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটির বাসা স্ত্রীসীতা দেবী סיפ পঞ্চাননের সামনাসামনি বসিয়া থাকিতে মৃণালের অসোয়াস্তির সীমা ছিল না । কিন্তু কিই বা করা যায় ? এইটুকু পথ এই উৎপাত সহাই করিতে হইবে। পঞ্চানন সারাপথ বক্‌বক্ করিতে করিতে চলিয়াছে। প্রৌঢ় স্বগ্রামবাসী বীরেনবাবুকে পাইয়াই যে তাহার এত দিলু খুলিয়া গিয়াছে তাহা নয়, মৃণালকে কথাগুলি শোনানোই যে তাহার আসল উদ্দেশ্য তাহা বুঝিতে মুণালের বাকী নাই। পঞ্চানন জিজ্ঞাসা করিল, “এই আপনার প্রথম এখানে পদার্পণ নাকি, বীরেন-কাক ?” বীরেনবাবু বলিলেন, “না বাব, আরও বার-দুই এসেছি বই কি ! তবে তোমাদের যা আজব সহর, যখনই দেখি মনে হয় নৃতন।” পঞ্চানন বলিল, “তা বটে, দেখলে চোখে ধাধ। লাগে। এই-সব মোহে পড়েই না সব মানুষ গ্রাম ছেড়ে এখানে এসে জোটে ? এসে তার পর মরে আর কি ? এত আমাদের দেশের জিনিষ নয়, একেবারে পশ্চিমের আমদানী ব্যাপার। এখানে ধৰ্ম্ম রক্ষা ক'রে চলতে পারে ক'ট মানুষ ?” বীরেনবাৰু ভালমানুষ, তিনি বলিলেন, “সে ত ঠিক কথাই। এখানে সারাক্ষণ ছত্রিশ জাতের সঙ্গে মেশামেশি, খাবার জিনিষে সব ভেজাল ।” পঞ্চানন বলিল, “আহা, ওগুলো ত হ’ল ছোট কথা । খাবারদারারে ছোয়াছুয়ি বঁচিয়ে চলা সহজেই যায়, কিন্তু আদত মানুষের মনটাই যে যায় কলুষিত হয়ে। তাদের ভাবনাচিস্ত সব বিলাতী ছাচে ঢালাই হয়ে যায়। আমাদের দেশের আদর্শ দেখতে দেখতে তাদের মন থেকে মুছে যায়।” মৃণাল ভাবিল, "আচ্ছ এক গোভূতের পাল্লায় পড়া গেছে । এখন শিক্ষিত মেয়েদের সমালোচনামা জুড়লেই বাচি । পঞ্চাননের সেই ইচ্ছাটাই বোধ হয় ছিল। তাহার মনে নারীত্বের কি উজ্জল আদর্শ যে বিরাজ করিতেছে তাহা মৃণালকে জানাইয়া দেওয়া দরকার। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে এই মেয়েই তাহার গৃহলক্ষ্মী হইয়া বিরাজ করিবে । কিন্তু বীরেনবাৰু তখন পঞ্চাননের বক্তৃতা শুনিতে ব্যস্ত ছিলেন না। তিনি সারাপথ যাহা দেখেন তাহারই পরিচয় জিজ্ঞাসা করিয়া পঞ্চাননকে বারবার বাধা দিতে লাগিলেন, কাজেই তাহার বক্তৃতা বিশেষ জমিল না। দেখিতে দেখিতে গাড়ীও মৃণালের বোর্ডিঙে আসিয়া, দাড়াইল । জিনিষপত্র সমেত তাহাকে নামাইয়া দিয়া বীরেনবাৰু বলিলেন, “আমরা এখন ট্রামে ফিরতে পারি না ? আবার হোটেল অবধি গাড়ী ক’রে গেলে অনেক ভাড়া লাগবে ।” পঞ্চানন বলিল, “তা বাসে যেতে পারি। ট্রামে ত আবার জিনিষ নিতে দেবে না। কিন্তু বাসে ত মুচিমুদফরাস সবাই উঠছে, কাউকে না বলবার জো নেই, ঘিটা সঙ্গে রয়েছে কিনা ? তার চেয়ে চলুন একখানা রিকৃশ ভাড় করা যাক, ওতে বেশী খরচ পড়বে না ।” বীরেনবাবু বলিলেন, “যা ভাল বোঝ তাই কর, বাবা ” , দুইজনে রিকৃশ করিয়া ফিরিয়া চলিলেন।. বীরেনবাবুকে তাহার হোটেলে নামাইয়া দিয়া পঞ্চানন এক মুটের মাথায় নিজের জিনিষপত্র চাপাইয়া, ঘিয়ের হাড়িটা হাতে করিয়া নিজের মেসের উদেশে যাত্রা করিল।