পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وفS تN وهS বিমল এতক্ষণ বৃদ্ধাকে আগলাইয়া বসিয়াছিল। বীরেনবাৰু ফিরিয়া আসাতে সে হাফ ছাড়িয়া বাচিল । বৃদ্ধ এতক্ষণ বসিয়া তাহার সঙ্গে অনর্গল কথা বলিয়াছেন এবং গোটা তিন আত্মীয়তার স্বত্র আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছেন। বিমল বলিল, “এখন তবে আসি ।” বীরেনবাবু বলিলেন, “আসি বললে চলবে না বাপু, খোঁজখবর রাখতে হবে । তোমাদের ভরসাতেই আসা । মায়ের গঙ্গাস্নান, কালীঘাট দেখানো এ সব ক’রে দিতে হবে ।” বিমল বলিল, “আমার আবার পরীক্ষার বছর। আচ্ছা দেখি, কাল আসব একবার। পঞ্চমামা আসবে না ?” বৃদ্ধা বলিলেন, “পঞ্চা ? ওকে দিয়ে কখনও কারও উপকার, হবে না। তুমি দাদা দয়া ক’রে আমার গঙ্গাচানটি করিয়ে দাও । নয়ত আমার বোনঝির শ্বশুরবাড়ী এখানে, তাদের বাসাটি যদি খুজে দাও তাহলে সেখানেই যাই। এ হোটেলে-মোটেলে আমাদের পোষায় না। কে যাচ্ছে কে আসছে তার ঠিক নেই।” বিমল বলিল, “ঠিকানা বললে এখনই বাসা খুঁজে দিতে পারি।” বৃদ্ধ বলিলেন, “ঠিকানা ত জানি না, দাদা। তবে । জামাইয়ের নাম কিশোরীমোহন রায়, খুব বড় সরকারী কাজ করে, তাদের বাড়ীর সামনে দিয়ে টেরাম যায়।” বিমল ভাবিল, হইয়াছে আর কি ? এ যে গ্রামেফোনের সেই রেকর্ডের অবস্থা ! যাহা হউক, বলিল, “আচ্ছ, খুজে দেখব। আমি আসি তবে । ম্যানেজারকে বলে গেলাম, তাল করে আপনাদের দেখাশোনা করবে।” । * বিমল বাহির হইয়া নিজের মেসের দিকে চলিল । বীরেনবাবুর মায়ের পাল্লায় পড়িয়া অনেক রাত হইয়া গেল। অবগু, তাহার সাদাসিধা গ্রাম্য কথাবার্তা বিমলের খুব যে খারাপ লাগিতেছিল’ তাহ নয় । কলিকাতাবাসীদের অতিআধুনিক কথাবার্তা মাঝে মাঝে তাহার কাছে বড় প্রবাসী । సెN988 নিরস ও বিস্বাদ লাগিত, মধ্যে মধ্যে নিজের ছোট গ্রামখানির জন্য মন কেমন করিত। বীরেনবাবু তাহাকে যেমন ধরিয়া পড়িয়াছেন তাহাতে বিমলকে রোজই অন্ততঃ একবার তাহাদের খোজ করিতে যাইতে হইবে । কিশোরীমোহন রায়ের বাড়ীটা বাহির করিতে পারিলে মন্দ হইত না । ঐ হোটেলে বসিয়া বৃদ্ধার মনে ত এক তিলও শাস্তি থাকিবে না। গঙ্গাস্বানের পুণ্যও বুঝি বা মাঠে মারা যায়। পঞ্চমামা হয়ত উক্ত ভদ্রলোকের ঠিকানা জানিলেও জানিতে পারে। কাল সকালে তাহাকে জিজ্ঞাসা করা যাইবে স্থির করিয়া বিমল নিজের মেসে চুকিয়া পড়িল । বিমল সত্যই পঞ্চাননের ভাগ্নে হয়, যদিও সম্পর্কট খুব নিকট নয়। তবে দুইজনেরই জন্মভূমি গ্রাম দুটি কাছাকাছি, এবং সম্প্রতি দু-জনেই কলিকাতায় থাকিয়া পড়িতেছে বলিয়া দেখাশোনা সৰ্ব্বদাই হয় । বিমল বাল্যে পিতৃহীন, মা এখনও বাচিয়া আছেন । তিনি গ্রামের বাড়ীতেই থাকেন। জমিজমা অতি সামান্য আছে, তাহাতে কায়ক্লেশে তাহার একটা মানুষের পেট চুলে। বিমলকে নিজের খরচ বেশীর ভাগ ট্যুশনি করিয়া চালাইতে হয়, এক কাকা গোটা-দশ টাকা সাহাষ্য করেন 鬱 সে সামনের বৎসর বি-এ পরীক্ষা দিবে। পাস যদি করে তাহা হইলে যে কি করিবে, তাহা এখনও স্থির করে নাই। স্কলারশিপ পাইলে আবার পড়িতে পারে, কিন্তু তাহ পাওয়া না-পাওয়ার কোনও স্থিরতা নাই। হয়ত চাকরির চেষ্টা করিতে হইবে, কিন্তু চাকরির বাজারের অবস্থা দেখিয়া কোনও ভরসা হয় না। যাহা হউক, পাচছয় মাস পরে এ-ভাবনা ভাবিলে চলিবে, সম্প্রতি পাস করার ভাবনাটাই ভাবা দরকার । পঞ্চানন বয়সে তাহার চেয়ে এক বৎসরের বড়, কিন্তু পড়ে অনেক নীচে । তাহার কারণ বহু বৎসর পর্য্যন্ত সে নবদ্বীপের টোলে পড়িয়া পণ্ডিত হওয়ার চেষ্টায় ছিল । তাহাদের সাংসারিক অবস্থাও খুব সচ্ছল, চাকরি কখনও করিবে না ইহাই স্থির ছিল । ইংরেজী শিক্ষা ও সভ্যতার প্রতি তাহার বিষ্ণুমাত্রও আস্থা নাই, স্বতরাং সে-সব দিকে