পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*8 প্রবাসী SNరి88 দাতের কাজ এখানে প্রসিদ্ধ, কত মূৰ্ত্তি, খেলনা, কোঁটা, গহনা, ছুরি, কাগজকাটা যে হাতীর দাতের তৈরি বলবার নয়। চীনেদের স্বতা ও রেশমের স্থচিশিল্প যে প্রসিদ্ধ তা ত সকলেই জানে। আমরা খুব ভাল কাজ বেশী দেখবার সুযোগ পাই নি, অল্পস্বল্প দেখেছি। রেশমের উপর হাতে আঁকা ছবি এখানে জলের দরে বিক্ৰী হয়। তবে দর করতে না জানলে যথেষ্ট ঠকৃতে হয়। চীনেরা শুধু’যে কলকাতায় দর করে তা নয়, স্বদেশে অনেক স্থলে দুই-তিন গুণ দাম বলে স্বরু করে । আমরা কিছু জিনিষ কিনে পরে জানতে পেরেছি। আধুনিক সত্যিকারের চীনার চেয়ে চীনা পুতুলগুলি দেখতে বেশী সুন্দর। দুধারে টিকিবাধ, পাজামা পরানো, জরির কোমরবন্ধ-দেওয়া থোকা, উচু ঝুটি-বাধা জোব্বাপর মুসজ্জিত মহিলা, লম্ব দাড়িওয়ালা বুড়ে সব আসল সেকেলে চীনা মূৰ্ত্তি। দেখলেই নিয়ে আসতে ইচ্ছা করে। কিন্তু বিদেশে বেরলে এত জিনিষই নিতে ইচ্ছা করে যে সব নিতে হলে ফেরবার পয়সাটা থাকে না। গোটাতিনেক দোকান ঘুরে আমরা একটু শহরে বেডাব ঠিক করলাম। দোকানদারদের একজন টেলিফোন করে মস্ত একটা মোটর গাড়ী নিয়ে এল। আমরা চার জন ছিলাম, দোকানদারও আমাদের সঙ্গে উঠে পড়ল। গাড়ীর ভাড়া তার যা খুলী ঠিক করল। গাড়ীটা বাজারের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে ক্রমে উপরের রাস্তায় উঠতে লাগল । রাস্তাঘাট লোকে লোকারণ্য ; চীন দেশের লোকসংখ্যা অগুস্তি যে বলে, তা একটা শহর দেখে স্বীকার করতে হল । পৃথিবীতে এত চীনে যে থাকতে পারে সহজে বিশ্বাস হয় না। বড় বড় রাস্তার দুই পাশ দিয়ে সরু সরু গলি পাহাড় বেয়ে নেমে গিয়েছে । সেখানেও দোকানপাট পথচারী নাগরিক নাগরিকার ভীড় লেগে রয়েছে। মনে হয় যেন কি একটা উৎসবের দিনে সারা শহর জুড়ে মেলা বসেছে। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল, পথে পথে নানা রঙের আলো জলে উঠে আর পূর্ণিমার চাদের আলো পড়ে রাত্রির রহস্যময় রূপ আর উৎসবমত্তত যেন আরও বেড়ে উঠল। বন্ধ গাড়ীতে পথ খুব স্পষ্ট দেখা যায় না, ছাড়া ছাড়া, কাটা কাটা, যেন স্বপ্ন দেখছি, চীনরাজকুমারী বেছরর দেশে অকস্মাং ভ্রম এসেছি । মন্দির, বাজার, গলি ; অনেক উপরে হংকঙের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়ী। লোকটি বলল, সাত বছর আগে এই সব বাড়ী শেষ হয়েছে । আমরা - মিনিটের জন্যে নামলাম । ভারি সুন্দর জায়গা, এক দিকে প্রশস্ত পথের নীচে দৃষ্টি নেমে যায় গভীর অতল সমুদ্রের বুকে, আর এক দিকে পাহাড়ের উচু চূড়া চাদের আলোয় প্লাবিত হয়ে আছে। পাহাড়ের মাথা সেখান থেকে অনেক উপরে। আমাদের সেই মাথ৷ পৰ্য্যস্ত নিয়ে যাবে বলে আমরা তখুনি আবার গাড়ীতে উঠে পড়লাম । চুড়ায় উঠবার মোটর ছাড়া ট্রাম পথও আছে । অনেকে সিডান-চেয়ারে করে ওঠে । আমরা সামান্য সময়ের জন্য এসে যা পেলাম তাই ধরেই যেতে বাধ্য হলাম। এই রাজপথটির দুধারেই যেরকম মোটা মোট পাথরের পাচিল-ঘেরা ভারী ভারী বাড়ী তাতে সন্ধা বেলায় সব জড়িয়ে হংকংটাকে একটা বিরাট দুর্গ মনে হয় । পাহাড়ের গায়ে অনেকখানি করে জমি অনেক জায়গায় সমুদ্রের উপর ঝুকে রয়েছে। তার উপর হোটেল প্রভৃতির ভাল ভাল বাড়ী । অবশু, এ-সবই বেশীর ভাগ ইউরোপীয়ানদের । উপর দিকে এক জায়গায় সাধারণের প্রবেশ নিষেধ লেখা রয়েছে । হয়ত সমর বিভাগ, কি গবর্ণমেণ্ট-হাউসের পথ হবে । পৃথিবীর মধ্যে হংকঙের মত সুন্দর ও ভাল বন্দর কমই আছে। পাহাড়ের চুড়া থেকে সন্ধ্যায় এর সৌন্দৰ্য্য সব চেয়ে স্বন্দর দেখায়। এতটা ষে আশ্চৰ্য সুন্দর হতে পারে দেখবার আগে বুঝতে পারি নি। প্রায় দশ বর্গমাইল ব্যাপী এই বন্দর জুড়ে অসংখ্য বাণিজ্য-জাহাজ, নান দেশীয় যুদ্ধ জাহাজ, চীন শাম্পান, ষ্টীম-লঞ্চ, ডিঞ্জী নৌকা মালবোঝাই গাধাবোট, লক্ষ লক্ষ দীপ জেলে আকাশের তারার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। দূর থেকে মালবোঝাইয়ের চীৎকার, দালাল ও কুলীদের নোংরামি চোখে কানে কিছু আসে না, মনে হয় যেন নীরবে দীপাৰিতার উৎসব চলেছে। উপরে পূর্ণিমার চাদের আলোঃ