পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

صوأوقاه , অত্যন্ত মৃদু বাতাস বহিতেছিল, ঘন পাতার আবরণের প্ৰতিভৱ দিয়া বাতাস আসিয়া ষে অনৈসর্গিক সঙ্গীতের স্বষ্টি করিতেছিল, তাহা খুব ভাল লাগিল না। কেমন যেন ভয় করিতে লাগিল। কিন্তু বুঝিলাম, দাড়াইয়া থাকিলে সে ভয়ের কোন কিনারা হইবে না, এবং সকলের বড় যে ভয়, অর্থাৎ সাপের ভয়, তাহা কমিবে না। তাহার চেয়ে লক্ষ্যহীন ভাবে চলা ভাল। আবার পথ ধরিলাম । পল্লীর পথে, বিশেষ করিয়া বনপথে, সন্ধ্যার পর লোকচলাচল থাকে না। তাই ইহার পরে আরও প্রায় এক ঘণ্টা ঘুরিয়াও এমন একটি লোকের দেখা পাইলাম না, যাহার কাছে বাড়ীর পথের খবরটা একটু জানিয়া লইব । নিজেরই মনে হইল, “কি লজ্জার কথা ! নিজের বাড়ী হইতে সামান্ত একটু দূরে আসিয়া তুমি নিজের বাড়ীর পথ হারাইয়া ফেল, এই ত তোমার পল্পীজননীর সঙ্গে সম্বন্ধ । আজ যদি সে পচিশ বৎসরের অবহেলার প্রতিশোধ লইতে মনস্থ করিয়া থাকে, তোমার তাহাতে কি বলিবার আছে ?” কিছুই মাই ! রাত্রি গভীর হইয়াছে। হয়ত খানিক পরে চাদ উঠিবে, কিন্তু এই ঘনসন্নিবিষ্ট অগণিত গাছের আড়াল দিয়া ষে আলোটুকু আসিবে, তাহাতে যখন পথ দেখার কোন মুবিধা হইবে না, তখন চাদ উঠিলেই বা কি, আর নাউঠিলেই বা কি ? তবু স্থাটিয়া চলিলাম, জানিতাম, একবার দাড়াইলে আর হাটার শক্তি খুজিয়া পাইব না, পা দুটিকে একটু বিশ্রাম দিলে তাহারা একেবারে জবাব দিবে। ক্লাস্তির অবধি ছিল না, তবু সমস্ত ক্লাস্তি উপেক্ষা “করিয়া অন্ধকারের ভিতর দিয়া নানা অজ্ঞাত জিনিষের উপর সস্তপণে পা ফেলিয়া আগাইয়া চলিলাম। কি অদ্ভূত এই বনের নিন্তব্ধতা ! স্তব্ধতা যখন অসন্ত হইয়া উঠিল, ভাবিলাম একটু বেস্তুরো গলায় চীৎকার করিয়া গান গাহিয়া একটু পরিচিত শব্দ শুনি। কিন্তু একবার মুগ্ধ খুলিতেই নিজের গলার স্বরে এতটা চমকাইয়া উঠিলাম যে মনে হইল, স্তব্ধতাই ভাল, আমার আওয়াজে কাজ নাই। যদি একটা লোকেরও দেখা পাইতাম, তাহাকে কিছু বকশিশ দিয়া বাড়ী পৰ্য্যন্ত লইয়া যাইতে পারিতাম। প্রবাসী SNరిg8 অন্তত বাড়ীর পধটার সম্বন্ধে একটু সচেতন হইতে পারিতাম। হয়ত আমি বাড়ী হইতে বেশী দূরে নাই। শুধু বনের গোলকধাঁধার মধ্যে অবিরত ঘুরিয়া মরিতেছি। এত বিপদের মধ্যেও শুধু দুটি কথা আমার মনে সবচেয়ে বেশী করিয়া জাগিতেছিল। বাড়ীর সকলে, বিশেষ করিয়া মা এবং অন্যান্য মেয়েরা কি পরিমাণ চিন্তিত হইয়াছেন, এই হইল সবচেয়ে বড় চিন্তার কথা, এবং দ্বিতীয়, যদি কোনও উপায়ে বাড়ী ফিরিতে পারি, তবে পুরুষদের কাছে শহুরে ভূত নামে সম্বৰ্দ্ধিত হইয়া কি প্রকার লাঞ্ছনা ভোগ করিব । একেই ত যথেষ্ট চেষ্টা সত্ত্বেও খাটি খুলনার ভাষা বিশুদ্ধ উচ্চারণ সহকারে মুখ দিয়া বাহির করিতে পারি না বলিয়া বেশ একটু ঠাট্ট সহ করিতে হয়। তাহার উপর আবার ७्रं । হঠাৎ মনে হইল জঙ্গল পাতলা হইয়া আসিয়াছে, এবং কয়েক পা আগাইয়া দেখিলাম, জঙ্গল ছাড়িয়া খোলা মেঠে রাস্তায় আসিয়া পড়িয়াছি। মনে ভরসা হইল। যদি কোন লৌকিক অথবা অলৌকিক উপায়ে লোকালয় চোখে পড়ে, তবে বাড়ী ফিরিবার আর বিশেষ কোনও অসুবিধা হইবে না। লাঞ্ছনা ও গঞ্জন ভোগ কপালে আছে, কিন্তু তাহা লইয়া ভাবিয়া মরিলে লাঞ্ছনার মাত্রা কমিবে না । রাত্রি বোধ হয় বারোটা । যখন পা আর চলে না, ঠিক সেই সময়ে দূরে গাছপালার আড়াল দিয়া লোকালয়ের আলো চোখে পড়িল। বুঝিলাম, এত ক্ষণে মামুষের বাড়ীর কাছে আসিয়াছি। বাড়ীতে যে-ই থাক এবং যে-অবস্থাতেই থাক, আমার এই জঙ্গল-জীবন ছাড়িয়া সভ্য জগতের আলো দেখিতেই হইবে, তাহ যত দূর অভদ্রতাই হোক না কেন ! কাছে আসিয়া দেখিলাম পাকা বাড়ী। সেই মধ্যরাত্রির অন্ধকাৱেই বুঝিলাম অত্যন্ত পুরাতন, এবং জীর্ণ। দেওয়ালে বালির আবরণ নাই, ইট বাহির হইয়৷ পড়িয়াছে। বাড়ীর বাহিরে খানিকটা জমি লইয়া বঁাশের বেড়া ।