পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԳo , অকৃতজ্ঞের মত মনে হইল, ভদ্রলোকের এতখানি শ্চন্টজন্য, এবং সম্পূর্ণ অপরিচিতকে বিনাবাক্যব্যয়ে রাত্রিতে আশ্রয় দেওয়া, এ সকলের মূলে রহিয়াছে এই মুনীলের সহিত আমার চেহারার সাদৃশু । এমন সময় ভদ্রলোক ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, “জলগায়ের কোন বাড়ীর ছেলে আপনি ?” “পশ্চিম বাড়ীর ” “অনন্তবাবু আপনার কে হন ?” “জ্যেঠামশায় ।” “কিছু যদি মনে না করেন, আপনার নাম—” নাম বলিলাম । তিনি খানিক ক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, "আচ্ছা, এ-গ্রামের নাম কি ?” “কালীহাট।” খানিকট আত্মগত ভাবেই তিনি বলিলেন, “আপনার জ্যেঠামশায় আমাকে চিনতেন। সমস্ত বন্ধুবান্ধব যখন শত্রু হয়ে দাড়িয়েছে, শুধু তার কাছ থেকেই আমি সহানুভূতি পেয়েছি।” সহসা তিনি আমার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “আপনি নিশ্চয় আমার নাম শোনেন নি, আমার নাম সারদাচরণ বক্ষ । চেনেন ?” মনে পড়িল না । তিনি কহিলেন, “আপনার একটু খাবার জোগাড় করতে পারলে হ’ত, কিন্তু—” ব্যস্ত হইয়া কহিলাম, “একটুও দরকার নেই, একটুও না। আমার এখন একমাত্র দরকার ঘুম। আর কিছু "ן הס-- তিনি ধীরে ধীরে বলিলেন, “তা ছাড়া এদিকের কেউ ত আমার হাতে খায় না, আমি একঘরে ।” সবিস্ময়ে কহিলাম, “একঘরে ?” “হ্যা " . এইবার তাহাকে চিনিলাম। কালীহাটের সারদা • বন্ধ । সুন্দরী মেয়ের বিবাহ দিয়াছিলেন বড় ঘরে কলিকাতায়। ছেলেটি স্বত্র এবং সচ্চরিত্র। র্তাহার মেয়ে এবং জামাতার মধ্যে মনের যে-মিল হইয়াছিল, প্রবাসী ১৩৪৪ এতখানি নাকি সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু বিবাহের দু-তিন বছর পরে মেয়ের নামে কুৎস। রটে, এবং ফলে পিতৃভক্ত জামাই আবার বিবাহ করেন, এবং কলঙ্কিনী মেয়েকে ঘরে স্থান দেওয়ার অপরাধে সারদাবাৰু একঘরে। যত দূর গুনিয়াছি তিনি ও র্তাহার মেয়ে ভিন্ন বাড়ীতে আর কেহ নাই, এবং এই প্রৌঢ়ের উপর সংসারের সমস্ত ভার। মেয়েটি ঘটনার পর হইতেই রুগ্নী । সব দিক বিচার করিয়৷ দেখিলে মনে হয় ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক। প্রকৃতই মেয়েটির কোন অপরাধ ছিল কি না, জানি না ; যদি থাকে, তাহা হইলে সুনীলকেও খুব বেশী দোষ দেওয়া ধায় না। তবু এইখানে এই বাড়ীতেই বসিয়া সমস্ত ঘটনা মনে পড়িয়া মনটা বেদনায় ব্যথিত হইয়া উঠিল। বোধ হয় একটু বেশী ক্ষণ চুপ করিয়া ছিলাম। তিনি বলিলেন, “আপনিও নিশ্চয়ই একঘরের বাড়ী খাবেন F-?” সমস্ত মনটা লজ্জায় নীচু হইয়া গেল ; জোর করিয়া বলিলাম, “নিশ্চয়ই খাব । আপনি এখনই দিন ।” সেই রাত্রে মধ্যরাত্রি পর্য্যন্ত বনের ভিতর ঘুরিয়া যে ক্ষুধা পাইয়াছিল, তাহাতে আহারের উপকরণ বিচার করা চলে না। অত্যন্ত পরিতৃপ্তির সহিত বাসি মুড়ি গুড় দিয়া থাইয়া এক ঘটি জল নিঃশেষ করিয়া কহিলাম, “আর না, আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম, যত দূর সম্ভব ! আপনি আর কষ্ট করবেন না, গুয়ে পড়ুন গে ; আমিও একটু শুই ।” তিনি মান মুখে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, "ঘুমোবার ত উপায় নেই, মেয়ের অমুখ, তার ঘরেই এক বার झाझे ।” অত্যন্ত লজ্জিত বোধ করিলাম। মেয়ের কঠিন অমুখ, এবং তাহার মধ্যে আমি সম্পূর্ণ অপরিচিত লোক আসিয়া এইরূপ উৎপাতু আরম্ভ করিয়াছি, পাড়াগায়েও সকলে ইহ সহ করেন ; শহরে ত ইহা রূপকথা ! অপ্রতিভ ভাবে জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি অসুখ ? অম্লখ কি খুব বেশী ?”