পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

25エ “বেশী নিশ্চয়ই, কিন্তু অসুখটা যে ঠিক কি, সেইটেই ত জানি নে। ভুগছে অনেক দিন ধরে। ডাক্তার ত নেই, যে দেখাব ?” e বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “কেন এদিকে ডাক্তার নেই ?” “আছে ; কিন্তু একঘরের বাড়ী কেউ চিকিৎসা করতে আসে না ।” যে-দুৰ্ব্বদ্ধি আজ আমাকে সন্ধ্যার সময় ঘরছাড়া করিয়াছে, তাহারই বশবর্তী হইয়া বলিলাম, “দেখুন, আমি মেডিক্যাল টুডেন্ট। অবশু চিকিৎসার বিশেষ কিছু জানি নে। - তবু আপনার মেয়েকে একবার দেখতে পারি কি ?” প্রৌঢ় যেন হাতে চাদ পাইলেন । সাগ্রহে কহিলেন, “নিশ্চয়, নিশ্চয়! আমার মেয়ের অমুখ হওয়া অবধি এক দিন ডাক্তার দেখাতে পারি নি, অথবা ভাল ওষুধ খাওয়াতে পারি নি। আর্থিক অবস্থা যে কি রকম, তা ত বুঝতেই পারছেন।” বলিয়া তিনি মৃদু হাসিলেন। . আমার কিন্তু চোখে জল আসিল । মেয়েটিকে দেখিয়া বুঝিলাম ইহার রোগনির্ণয় করিতে পাস-কর ডাক্তার, এমন কি মেডিক্যাল ষ্টুডেন্টেরও প্রয়োজন হইবে না। ইহার চোখে, মুখে, সমস্ত দেহে, একটি মাত্র রোগের আগমন-চিহ্ন পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে, তাহা ষক্ষ্মা । ভদ্রলোক ধীরে ধীরে আমার মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “রোগ যে কি তা হয়ত আমিও জানি, হয়ত যা ভাবছি, তাই। কিন্তু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না ।” উভয়ে বাহিরে আসিলাম । আত্মগত ভাবে তিনি বলিতে লাগিলেন, “মীরা আমার কি সুন্দরীই ছিল ! ভাল বিয়ে দিলাম সতের বছর বয়সে ; তার পরে—” বাধা দিয়া বলিলাম, “আমি জানি । ,কিন্তু আপনার · ও-কথা ভেবে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই।” অত্যন্ত অস্ফুট স্বরে তিনি বলিলেন, “আপনি জানেন আমার মেয়ের কলঙ্কের কথা ?” צרף বিত্রত হইয়া বলিলাম, “হয়ত জানি, কিন্তু সে-কথার আলোচনা এখন থাক ।” ... তিনি খানিক ক্ষণ চুপ করিয়া রছিলেন। তার পর চেহারার খানিকটা মিল আছে, তাই প্রথমটা আপনাকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু চেহারায় তফাংও আছে। সে আপনার চেয়ে একটু ফরসা, আর অত লম্বা নয়। আচ্ছ, আপনার বয়েস কত হ’ল ?” “পচিশ ” “মুনীলের বয়েস এত দিনে হ’ল উনত্রিশ। আর আমার মীরার বয়েস হ’ল তেইশ ।” - ভাবিলাম তিনি অ্যাবার তাহার মেয়ের কলঙ্কের কথা তুলিবেন, কিন্তু তিনি আর কিছু বলিলেন না। লণ্ঠনের আলোয় দেখিলাম তাহার দুই চোখ দিয়া জল পড়িতেছে । পাশের ঘরে অস্ফুট শব্দ শুনিয়া সারদাবাবু বুঝিলেন, মীরার ঘুম ভাঙিয়াছে। তিনি উঠিয়া তাহার কাছে গেলেন। আমি খানিক ক্ষণ চুপ করিয়া দাড়াইয়া থাকিয়া ঘুমের ইচ্ছা দমন করিয়া সেই ঘরেই ঢুকিলাম। মীরার ঘুম ভাঙিয়াছে। সে ঘুে এককালে সুন্দরী ছিল, তাহার যক্ষ্মাক্লিষ্ট দেহ দেখিলেও তাহ অস্বীকার করা যায় না। আমি আর একবার তাকাইয়া দেখিলাম । এক মূহূৰ্ত্ত আমার দিকে তাকাইয়া মীরা চীৎকার করিয়া উঠিল, “এসেছ, তুমি ফিরে এসেছ ?” একটুও বিস্থিত হইলাম না। আমি এই জিনিষটারই প্রত্যাশা করিতেছিলাম । সারদাবাবু অভিভূতের মত দাড়াইয়া রহিলেন। আমি এক মুহূৰ্ত্তে কৰ্ত্তব্য স্থির করিয়া সোজা মীরার কাছে গিয়া তাহার বিছানায় বসিয়া বলিলাম, “হ্যা মীরা, আমি এসেছি, আমি স্বনীল ।” সারদাবাবুর মুখের অবস্থা লক্ষ্য করিবার মত সময় আমার তখন ছিল না। আমার শুধু একটি কথা মনে হইল। এই মেয়েটি আজ কয়েক বৎসর রিয়া পরিত্যক্তা। নিঃসন্দেহ সে তার স্বামীকে ভালবাসিয়া