পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوهاه প্রবাসী ১৩৪৪ করিয়া থাকেন। পরিণতবয়স্ক শ্ৰীযুক্ত যোগেন্দ্রনাথ ঘোষ ‘মহাশয়ের এবং তরুণবয়স্ক প্রযুক্ত নলিনীনাথ দাসগুপ্ত মহাশয়ের মূল্যবান ঐতিহাসিক প্রবন্ধাবলী Indian Historical Quarterly or Indian Culture অবলম্বনেই প্রথম সুপরিচিত হইতে আরম্ভ করে। বাংলা দেশে কয়েক জন ঐতিহাসিক প্রশংসনীয় অধ্যবসায়ের সহিত স্থানীয় ইতিহাস লিখিতে আত্মনিয়োগ করিয়াছেন। শ্ৰীযুক্ত যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত মহাশয়ের “বিক্রমপুরের ইতিহাস” ১৯১০ সনে প্রকাশিত হইয়াছিল। সম্প্রতি গুপ্ত মহাশয় এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ সম্পাদনে নিযুক্ত আছেন । ঐযুক্ত যতীন্দ্রমোহন রায়ের ঢাকার ইতিহাস, ঐযুক্ত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় প্রণীত বীরভূম বিবরণ, ঐযুক্ত রাধারমণ সাহার পাবনা জেলার ইতিহাস এবং শ্ৰীঅচ্যুতচরণ চৌধুরী প্রণীত বড় বড় দুই খণ্ডে সমাপ্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত প্রশংসনীয় গ্রন্থ । এই শ্রেণীর স্থানীয় ইতিহাস রচনা স্থানীয় লেখকগণের প্রধানতম কৰ্ত্তব্য বলিয়া গণ্য হওয়া উচিত। বাংলা দেশে ইতিহাসচর্চার এই যে নিতান্ত সংক্ষিপ্ত অসম্পূর্ণ বিবরণী হইতেই পাঠকেরা বুঝিতে পরিবেন নিরাশ হইবার অামাদের কোন কারণ নাই। আর এক জন রাখালদাস বা আর এক জন হরপ্রসাদ,আমরা শীঘ্র নাও পাহতে পারি, কিন্তু বহু জনের সমবেত চেষ্টার ফল দুই-চারি জন অতিমানবের অসাধারণ কীৰ্ত্তি হইতে গুরুত্বে কম হইবার কথা নহে । আমার অজ্ঞতা ও জ্ঞানের পরিধির সঙ্কীর্ণত বশত: ধে-সমস্ত যোগ্য কৰ্ম্মীর কৰ্ম্মের সহিত আমি আজিও পরিচিত হইয়া উঠিতে পারি নাই, এই প্রসঙ্গে অনুল্লেখের জন্য র্তাহাদের ক্ষমা ভিক্ষা করিতেছি । ইতিহাস-ক্ষেত্রের কোনূ কোন অংশে কৰ্ম্মীর অভাব ঘটিতেছে ভারতীয় ইতিহাসচর্চার পরিধি বর্তমানে এত বৃহৎ . ষে কোন এক জন লোকের পক্ষে তাহার সমস্ত বিভাগ আয়ত্ত করা অসম্ভব হইয়া দাড়াইয়াছে। ফলে ইতিহাসে বিষয়-বিভাগ অদিবাৰ্ষ্য হইয়া দাড়াইয়াছে এবং কর্ষিগণ নিজ নিজ অভিরুচি অনুসারে অধীতব্য বিষয় বাছিয়া লইতেছেন। ইহার ফল হইতেছে এই যে, কতকগুলি বিভাগে উপযুক্তরূপ অথবা আদৌ কৰ্ম্মী জুটিতেছে না। বঙ্গীয় মূৰ্ত্তিতত্ত্ব বা ভাস্কৰ্য্য অথবা স্থাপত্য সম্বন্ধে মৌলিক গবেষণা করিতে হইলে মাত্র কলিকাতা রাজশাহী বা ঢাকা যাদুঘরের মূৰ্ত্তি-সংগ্রহ দেখিলে চলে না। উহার জন্য বঙ্গের গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিতে হয়। কারণ যে বিশাল ভাস্কৰ্য্য-বন্যা এক দিন বাংলা দেশের বুকের উপর দিয়া বহিয়া গিয়াছিল, তাহার অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র আমরা এ-যাবৎ যাদুঘরগুলিতে আনিয়া তুলিতে পারিয়াছি। বঙ্গীয় ভাস্কৰ্য্য ও স্থাপত্যের ইতিহাসলেখকের আগমন আমাদিগকে আর কত দিন প্রতীক্ষা করিতে হইবে ? আমি অনেক দিন পূৰ্ব্বে একবার বলিয়াছিলাম, ব্যক্তি-বিশেষের অপরাধে এবং নির্জলা হুজুক বশতঃ দেশের সামাজিক ইতিহাসের এক অমূল্য উপাদান কুলশাস্ত্রগুলিকে বঙ্গের ঐতিহাসিকগণ বহু দিন ধরিয়া অবহেলু করিয়া আসিতেছেন। এই পুরুষানুক্রমে সযত্ন-সঞ্চিত গ্রন্থগুলির সামাজিক প্রয়োজন তিরোহিত হওয়ায় অনাদরে এগুলি দ্রুত ধ্বংসের পথে চলিয়াছে। বঙ্গের প্রত্নপ্রেমিকগণের কৰ্ত্তব্য, এই গ্রন্থগুলিকে সংগ্ৰহ করিয়া কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ, বঙ্গীয় রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথিশালায় ইহাদের রক্ষার ব্যবস্থা করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পুথি সংগ্রহে হাত দিয়া আমি এই বিষয়ে চেষ্টার কোন ক্রটি করি নাই। রাঢ়ী ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের অনেকগুলি কুলগ্রন্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথিশালায় স্থান লাভ করিয়াছে। সযত্নে এগুলি অধ্যয়ন করিলে ইহাদের মধ্যে অনেক অজ্ঞাতপূৰ্ব্ব মূল্যবান তথ্য মিলিবার সম্ভাবনা । কিন্তু এই পরিশ্রমসাধ্য কাধ্যে কেহই অগ্রসর হইতেছেন না। ফলে, ইতিহালের এই মহামূল্য উপাদানগুলি অদ্যাবধি কোন কাজেই লাগে নাই। এস্থলে বলিয়া রাখা ভাল, কুলশাস্ত্র আলোচনা করিয়া যিনি সামাজিক ইতিহাস উদ্ধারের কার্ধ্যে হাত দিবেন, তাহাকে ভীষ্মের ন্যায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং ব্যাসের