পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وقامواه আপনার অজ্ঞাতসারে পালঙ্কের কাষ্ঠে লিখেছে ‘কুমার লগংসিংহ আর সেই লেখা পড়ে লজ্জায় তার মুখ রক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে। জল দিয়ে বারে বারে প্রিয়তমের নামটি ধৌত ক’রেও বীরেন্দ্র সিংহের কস্তার হৃদয়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সেখানে চন্দ্রালোকিত রজনীতে বজরার ছাদের উপরে বহুরত্নমণ্ডিত দেবীচৌধুরাণী বীণা বাজায়, শত শত বীরপুরুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত দেবীর আদেশ পালন করে। সেখানে ভবানী পাঠকের নির্দেশে প্রফুল্ল বাছা বাছা লাঠিয়ালদের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করে, নিস্তৃত মন্দিরমধ্যে চতুভূজ মূৰ্ত্তির সম্মুখে মহেন্দ্ৰসিংহ সস্তানধৰ্ম্মে দীক্ষা নেয়, স্বামীর স্বদেশ-সেবার পথ নিষ্কণ্টক করবার জন্য কল্যাণী বিষ খায়, মুখে বন্দেমাতরম্ গাইতে গাইতে ভবানন্দ মৃত্যুর কোলে ঘুমিয়ে পড়ে। সেখানে মহান্ধকারময় পৰ্ব্বতগুহায় পৃষ্ঠচ্ছেদী উপলশয্যায় গুয়ে কলস্কিনী শৈবলিনী দেখে নরকের বিভীষিকা, চাদের আলোয় স্থির গঙ্গার মাঝে চন্দ্রশেখরের হতভাগিনী স্ত্রী প্রেমাম্পদের হাতে হাত রেখে বাম্পবিকৃত স্বরে প্রতিজ্ঞা করে, শুন, তোমার শপথ ! আজি হইতে তোমাকে ভুলিব । আজি হইতেই আমার সর্বসুখে জলাঞ্জলি ! আজি হইতে আমি মনকে দমন করিব। আজি হইতে শৈবলিনী মরিল । সেখানে শৈবলিনীর আর চন্দ্রশেখরের দাম্পত্যজীবনকে মুখী করবার জন্য প্রতাপ অশ্বারোহণে চলেছে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিতে, রমণীরত্ব আয়েষী স্বহস্তে তিলোত্তমার অঙ্গে পরায় অলঙ্কার। সেখানে নৃত্যগীত-কৌতুকে মত্ত কতলু খার বক্ষঃস্থলে তীক্ষ ছুরিকা আমূল বসিয়ে দিয়ে বিমলা বলছে, “পশাচী নহি, সয়তানী নহি, বীরেন্দ্র সিংহের বিধবা স্ত্রী ।” সেখানে মহামহীরুহের শ্যামল পল্লবরাশির মধ্যে দাড়িয়ে তেজস্বিনী ঐ অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করবার জন্ত জনতাকে দেয় প্রেরণা, একাকিনী চঞ্চলকুমারী সশস্ত্র মোগল অশ্বারোহীদের সম্মুখে যায় এগিয়ে, রূপনগরের বিপন্ন রাজপুরীকে উদ্ধার করবার জন্ত রাজসিংহ করে সৰ্ব্বশ্বপণ। সেখানে বারুদমাখা সীতারামের অব্যৰ্থ সন্ধান -শক্রসেনাকে করে ছিন্নভিন্ন, রাজমহিষী নন্দ অন্তঃপুরের অবরোধ থেকে বেরিয়ে এসে অসহায় জয়ন্তীকে করে উদ্ধার, রুধিরাক্ত কলেবরে বীরেন্স সিংহ নিকোষিত অসি প্রবাসী $Nలి$8 হস্তে করে সংগ্রাম । লেখালে জগৎসিংহের প্রচণ্ড আঘাতে ওসমান ধরাশায়ী, পৰ্ব্বতের শিরোদেশে দাড়িয়ে সহস্ৰ সহস্র রাজপুত পদাতিক মোগল সৈন্তবাহিনীর উপরে করে শিলাবৃষ্টি, শাহানশাহ বাদশাহ হীরকমণ্ডিত শ্বেত উষ্ণীষ নামিয়ে রেখে নতজামু হয়ে মাথায় দেন পৰ্ব্বতের র্কীকর। সেখানে গভীর রাত্রে চন্দ্রশেখর নিদ্রিতা শৈবলিনীর অনিন্দ্যসুন্দর মুখমণ্ডলের পানে চেয়ে নিঃশব্দে করে আশ্রমোচন, অভাগিনী কুন্দনন্দিনী নগেন্দ্রের চরণে মাথা রেখে নবীন যৌবনে মরণের অন্ধকারে যায় বিলুপ্ত হয়ে, অভিমানিনী ভ্রমর গোবিন্দলালের পদরেণু মাথায় নিয়ে চিরনিদ্রার কোলে পড়ে ঘুমিয়ে। সেখানে রোহিণীসুন্দরী বারুণী পুষ্করিণীর নিৰ্ম্মল জলে কলসী ভাসিয়ে দিয়ে নীরবে কাদে, কৃষ্ণকাস্ত রায় শয়নমন্দিরে উপাধানে পৃষ্ঠ রক্ষা ক’রে আফিমের নেশায় বিমায়, রত্নখচিত পালঙ্কে শুয়ে শাহজাদী জেব-উল্লিসা মবারকের জন্য চোখের জলে বুক ভাসায় । বাংলা সাহিত্য যত কাল বেঁচে থাকবে তত কাল, বাঙালীর মনের মধ্যে বঙ্কিমও সগৌরবে বেঁচে থাকবেন। বন্দেমাতরম্ র্যার কণ্ঠ থেকে প্রথম উৎসারিত হয়েছে, কমলাকাস্তের দুর্গোৎসব বেরিয়ে এসেছে র্যার লেখনী থেকে, লোকরহন্ত আর মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত লিখে, দিগগজ গজপতির আর গোবরার মা’র ছবি একে বাংলা দেশের আবালবৃদ্ধবনিতাকে খিনি অফুরন্ত হাস্যরস বিতরণ করেছেন, যার লেখার মধ্যে আজও লক্ষ লক্ষ বাঙালী এবং অবাঙালী খুঁজে পায় চিত্তের অনাবিল আনন্দ– আমাদের মনের মন্দিরে প্রভাত-সূৰ্য্যালোকে আলোকিত কাঞ্চনজঙ্ঘার অভ্ৰভেদী মহিমায় তিনি জেগে রইবেন চিরদিন । চির-অম্লান দিগ্বিজয়ী প্রতিভা নিয়ে তিনি আমাদের হৃদয়সিংহাসনে সমাসীন থাকবেন জাতীয়তার প্রথম পুরোহিতরূপে, বাংলার সাহিত্যিকগণের সর্বপ্রধান তীর্থক্ষেত্ররূপে বিরাজ করবে তার জন্মভিটা, স্বাধীনতার পৰ্ব্বতশিখরে আরোহণের পথে র্তার গ্রন্থ আমাদের অবসাদ করবে দূর, আমাদের হৃদয়ে দেবে প্রেরণা। নবীন বাংলার এবং নবীন ভারতবর্ষের ধারণ শ্ৰষ্টা তাদের সকলের শীর্ষে বঙ্কিমের নাম জেগে থাকবে জাকাশের জল্‌জলে