পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

عسياسيه প্রবাসী ১৩৪৪ , এই জন্তই কপালকুণ্ডলার মত নিছক সাহিত্য স্বষ্টি ক’রে তার প্রতিভা ক্ষান্ত থাকতে পারে নি। বিষবৃক্ষ, চন্দ্রশেখর, কৃষ্ণকাস্তের উইল প্রভৃতি সামাজিক উপন্যাস লিখেও তার চিত্ত পরিতৃপ্তির আস্বাদ পায় নি। কঠিন বাস্তব তাকে ডাক দিয়েছিল, শৃঙ্খলিত হতভাগ্য জাতিকে নূতন ক’রে তৈরি করবার জন্ত লেখনীকে তরবারির মত ধারণ করতে। বাস্তবের সেই দুর্জয় আহবানে তার দৃপ্ত পৌক্ষ সাড়া ন-দিয়ে থাকতে পারে নি। আর সেই সাড়া দেওয়ার ফলে রাজসিংহ, আনন্দমঠ, সীতারাম, দেবীচৌধুরাণী, কৃষ্ণচরিত্র। নিৰ্ব্বীৰ্য্য, শতধাবিচ্ছিন্ন, কৰ্ম্মকীৰ্ত্তিহীণ স্বদেশকে নবজীবনের প্রভাত-আরুণিমার মধ্যে জাগানোর জন্য সাহিত্যকে আশ্রয় ক’রে তিনি দিকে দিকে প্রচার করতে লাগলেন শৌর্য্যের আদর্শ, ঐক্যের আদর্শ, দেশাত্মবোধের আদর্শ, আত্মসম্মানবোধের আদর্শ, মনুষ্যত্বের আদর্শ। জনসাধারণের চিত্তে যত ক্ষণ একটা বড় আদর্শকে স্বষ্টি করতে না-পারা যায় তত ক্ষণ গণতন্ত্র কেবল কথার কথা হয়ে থাকে। সাহিত্য জাতির মনে এই আদর্শকে স্বষ্টি করে। বঙ্কিম সাহিত্যকে অবলম্বন ক’রে তাই আদর্শ-প্রচারে ব্রতী হলেন । অসামান্ত প্রতিভার আলোকে বঙ্কিম দেখেছিলেন, একজাতীয়ত্ব ভিন্ন ভারতবর্ষের কল্যাণ নেই। ঐক্যের অভাবই ভারতবর্ষের সর্বনাশ করেছে—ঐক্যের প্রতিষ্ঠাই ভারতবর্ষকে নবজীবন দান করবে। এই ঐক্য আসবে জাতি-প্রতিষ্ঠার পথে। ভারতবর্ষে যদি কখনও জাতি-প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় তবেই ভারতবাসীরা ঐক্যস্থত্রে আবদ্ধ হবে। ঐক্যস্থত্রে আবদ্ধ হ’লে জাতীয় স্বাতন্ত্র্য লাভ কঠিন হবে না, আর ভারতবর্ষ যদি একবার স্বাধীনতালাভে সমর্থ হয়, তবে তার সকল দুঃখের অবসান ঘটবে। বঙ্কিম তাই ভারতবর্ষকে কল্যাণের মধ্যে, সৌন্দর্ঘ্যের মধ্যে, জ্ঞানের মধ্যে, শক্তির মধ্যে, আনন্দের মধ্যে রূপান্তরিত দেখবার জন্য দেশাত্মবোধের অাদর্শকে প্রচার করবার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। “ভারত-কলঙ্ক” নামক প্রবন্ধে বঙ্কিম তার মনের কথা খুলে লিখেছেন। সেখানে আছে— ইতিহাস কীৰ্ত্তিত কালমধ্যে কেবল দুই বার হিন্দ্রসমাজমা জাতি-প্রতিষ্ঠার উদয় হইয়াছিল। একবার মহারাষ্ট্রে শিবাজী এই মহামন্ত্র পাঠ করিয়াছিলেন। র্তাহার সিংহনাদে মহারাষ্ট্র জাগরিত হইয়াছিল। তখন মহারাষ্ট্ৰীয়ে মহারাষ্ট্ৰীয়ে ভ্রাতৃভাব হইল। এক আশ্চর্ষ্য মন্ত্রের বলে অজিতপূৰ্ব্ব মোগল-সাম্রাজ্য মহারাষ্ট্রীয় কর্তৃক বিনষ্ট হইল।••• দ্বিতীয় বারের ঐন্দ্রজালিক রণজিৎ সিংহ । ইন্দ্রজাল খালস । জাতীয়বন্ধন দৃঢ় হইলে পাঠানদিগের স্বদেশেরও কিয়দংশ হিন্দুর হস্তগত হইল ।...পটুতর ঐন্দ্রজালিক ডালহৌসির হস্তে খালসা ইন্দ্রজাল ভাঙিল। কিন্তু রামনগর এবং চিলিয়ানওয়াল ইতিহাসে লেখা রহিল । যদি কদাচিৎ কোনো প্রদেশখণ্ডে জাতি-প্রতিষ্ঠার উদয়ে এতদূর ঘটিয়াছিল, তবে সমুদায় ভারত একজাতীয় বন্ধনে বন্ধ হইলে কি না হইতে পারিত ? এইখানেই পাই বঙ্কিমচন্দ্রের চিন্তার মূলসূত্রটি। আনন্দমঠ লেখার নিগুঢ় রহস্ত-সমুদ্রয় ভারতবর্ষকে কি একজাতীয় বন্ধনে আবদ্ধ করা যায় না ? বাংলার সঙ্গে পঞ্জাবকে, মাদ্রাজের সঙ্গে আসামকে, বিহারের সঙ্গে গুজরাটকে, উড়িষ্যার সঙ্গে সিন্ধুকে কি প্রীতির দুশেছদ্য বন্ধনে বেঁধে দেওয়া সম্ভবপর নয় ? বঙ্কিম মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে উপলব্ধি করলেন, দুর্ভাগা ভারতবর্ষের মুক্তির পথ oùù Noy fro–affection shall the problem of freedom yet. atal •R•taCas elfo. দিয়ে ভালবাসতে পারে, জয়লাভ তাদের অনিবাৰ্য্য। একের জন্য যেখানে হাজার জন তাদের জীবনকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, সেখানে অকল্যাণ আসতেই পারে না । বাঙালী, পাঞ্জাবী, তৈলঙ্গী, মহারাষ্ট্রী, রাজপুত, জাঠ, হিন্দু মুসলমান যদি প্রেমের মধ্যে এক হয়ে যায়, ভারতবর্ষের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিড়তে এক মূহুর্ভের বেশী সময় লাগবে না । কিন্তু ঐক্যের পথে, মিলনের পথে সৰ্ব্বাপেক্ষা বড় অন্তরায় আদর্শের অভাব । সেই আদর্শ কোথায় বার পতাকাতলে জামরা হাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সমবেত হতে পারি? আমরা সকলের কথা কখনও ভাবি নি । আমরা ভেবে এসেছি কেবল নিজেদের কথা। আমাদের কল্পনা কেবল নিজের মুক্তিকে কেন্দ্ৰ ক’রে তার চার দিকে solve