পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ASo হবে। আর্ট নয়, নিৰ্ব্বাণ নয়, খ্যাতি নয়, বিষয়সম্পত্তি নয়, ছেলেমেয়ের বিবাহ নয়, পল্লীর নিভৃত বক্ষে আমবাগানের শীতলছায়ায় শাস্তির মধ্যে ডুবে থাকা নয়। দেশবাসীর চিত্তকে সকল ভাবনা থেকে সরিয়ে এনে সেখানে একটিমাত্র সৰ্ব্বগ্রাসী কামনার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সে কামনা হ’ল স্বদেশের মুক্তির কামনা। তেত্রিশ কোটি নরনারীর হৃদয়ে হৃদয়ে একটিমাত্র প্রতিমাকে গড়ে তুলতে হবে, সে প্রতিম হ’ল জন্মভূমির স্বর্ণপ্রতিমা । অমর উপন্যাস আনন্দমঠে মহেন্দ্রকে ভবানন্দ বলছেন, আমরা অঙ্গ মা মানি না । জননী জন্মভূমিশ স্বর্গাদপি গরীয়সী। আমরা বলি জন্মভূমিই জননী, আমাদের মা নাই, বাপ নাই, ভাই নাই,--শ্ৰী নাই, পুত্র নাই, ঘর নাই, বাড়ী নাই, আমাদের আছে কেবল সেই স্থজলা, সুফল, মলয়জ-সমীরণ-শীতলা শস্তস্তামলা— মহেন্দ্র সিংহের কর্ণে এই ষে অমূল্য কথাগুলি ভবানন্দ একদা উচ্চারণ করেছিলেন, এই কথাগুলির মধ্যে বাংলা দেশ একদিন খুজে পেল তার নবপ্রভাতের উদ্বোধন-মন্ত্র। সেই মন্ত্র সমস্ত ভারতবর্ষ আজ একাগ্রচিত্তে জপ করতে সুরু ক’রে দিয়েছে । বঙ্কিম নেই—কিন্তু ভবানন্দের মুখ দিয়ে যে বাণী তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তারই প্রতিধ্বনি ঘুরে বেড়াচ্ছে এই বিরাট দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে । 聯 পারিবারিক জীবনের গওঁী থেকে বাঙালীর চিত্তকে মুক্ত করবার জন্য তিনি যে এতখানি উদগ্রীব ছিলেন তার কারণ তিনি জানতেন দাম্পত্যপ্রেমের সঙ্কীর্ণতা দেশাত্ম বোধের জাগরণের পথে সবচেয়ে প্রবল অস্তুরায় । দেশাত্মবোধের কাজ হচ্ছে মানুষকে বহু জনের সঙ্গে আত্মীয়তার স্থত্নে আবদ্ধ করা, তার চিত্তকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া । দাম্পত্যপ্রেম দু-জনের মধ্যে সংসারকে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়—বাসরঘরের তপ্ত কোটরের মধ্যে সে তৃতীয় ব্যক্তিকে স্থান দিতে একান্ত নারাজ। পারিবারিক জীবনে স্বারা পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত তারা বাহিরের মানুষগুলিকে দূরে ঠেলে রাখতে চায়। এই জন্তই আনন্দমঠের সন্তানদের জন্য গৃহধৰ্ম্ম পরিত্যাগের ব্যবস্থা। সত্য। যতদিন ন মাতার উদ্ধার হয়, ততদিন, গৃহধৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিবে ? প্রবাসী N988 উভ। কৰি। মত্য । মাতাপিত ত্যাগ করিবে ? উভ ৷ করিব । , সত্য । ভ্রাতাভগিনী ? উভ। ত্যাগ করিব। সত্য । দারাসুত ? উভ। ত্যাগ করিব । সত্য | আত্মীয় স্বজন দাসদাসী ? উভ। সকলই ত্যাগ করিলাম । মানব-চরিত্রের দুৰ্ব্বলতার কথা বঙ্কিমের অজানা ছিল না। এই জন্তই ইঞ্জিয়জয় এবং স্ত্রীলোকের সঙ্গে একাসনে না-বস সিস্তানধৰ্ম্মের অপরিহার্ষ্য অঙ্গ। মেয়েদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হ’ল নীড় বাধা । পুরুষের কাজ সভ্যতাকে গড়ে তোলা। সেই কাজকে সফল করতে হ’লে নীড়কে অঁাকড়ে থাকলে চলে না। এই জন্যই দেখা যায়, যেখানে পুরুষের জীবনে সভ্যতার এবং সংস্কৃতির দাবি প্রাধান্ত লাভ করেছে, সেখানে নারীর প্রেমের দাবি গৌণ হয়ে গেছে । zog &R Civilisation and its Discontents of To গ্রন্থে সংস্কৃতির আর দাম্পত্যপ্রেমের এই স্বন্দ্বের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেছেন । তিনি লিখেছেন, Since man has not an unlimited amount of mental energy at his disposal; he must accomplish his tasks by distributing his libido to the best advantage. What he employs for cultural purposes he withdraws to a great extent from women and his sexual life ; his constant association with men and his dependence on his relations with them even estrange him from his duties as husband and father. মামুষের মনের শক্তির একটা সীমা আছে । এই জন্তই তাকে কোন বড় কাজ করবার জন্ত যখন শক্তি ব্যয় করতে হয় তখন নারী এবং যৌন জীবনের দিকে তার মন দেবার অবসর থাকে না। একটা মনকে আর কত দিকে দেওয়ামায় ? স্বামীর আর পিতৃার কর্তব্য পুরাপুরি পালন করতে গেলে বহু মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেশবার সময় থাকে না, আর বৃহৎ জগত থেকে যে মাছধ বিমুখ হয়ে থেকেছে মানুষের সভ্যতার ভাণ্ডারে তার দানের পরিমাণ কখনও বেশী হ’তে