পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శీSR অমৃতের পথে পরিচালিত করেছে। বঙ্কিমের প্রতিভার এই দিকটার কথা উল্লেখ ক’রে স্বৰ্গীয় রামেন্দ্রমুন্দর ত্রিবেদী মহাশয় লিখেছেন, ঈশ্বরের ঐশ্বৰ্য্যমণ্ডিত মূৰ্ত্তি ভারতবর্ষের উপাসক-সম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ তৃপ্তি জন্মাইতে পারে নাই ; ভারতবাসী ঐশ্বর্ঘ্যের অপেক্ষ মার্ঘ্যের উপাসনায় পক্ষপাতিত্ব দেখাইবে, ইহাতেও বিস্থিত হইব না। বঙ্কিমচন্দ্র মহাভারত-সাগর মন্থন করিয়া ষে মূৰ্ত্তিকে স্বদেশবাসীর সম্মুখে স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহ যুগধৰ্ম্ম-প্রবর্তকের মূৰ্ত্তি, তাহ ধৰ্ম্মরাজ্য-সংস্থাপকের মূৰ্ত্তি—ধশ্বের সহিত অধৰ্ম্মের সংঘর্ষ উপস্থিত হইলে যে মূৰ্ত্তি গ্রহণ করিয়৷ তিনি সস্তুত হন উহা সেই মূৰ্ত্তি ; রাষ্ট্রবিপ্লব উপস্থিত করিয়া যিনি রাষ্ট্র রক্ষা করেন, উহ। তাহার মূৰ্ত্তি ; লোকস্থিতির অনুরোধে যিনি নিৰ্ব্বিকার ও নিক্ষরুণ হইয়। বস্তুস্করাকে শোণিতক্লিন্ন দেখিয়া থাকেন, উহ। তাহারই মূৰ্ত্তি ।...বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠে আঁর বঙ্কিমচন্দ্রের কৃষ্ণচরিত্রে আমরা এই যুগধৰ্ম্মপ্রতিষ্ঠার বিশিষ্ট চেষ্টা দেখিতে পাই । বঙ্কিমচন্দ্র দেখেছিলেন নূতন স্বাধীন ভারতবর্ষকে স্বষ্টি করবার জন্য অন্যায়ের ধ্বংসের প্রয়োজন আছে । পুরাতনের মৃত্যুর পথে আসে নবজীবনের সমারোহ। সেই পুরাতনকে, সেই অমঙ্গলকে, সেই নিষ্ঠুর অন্যায়কে আর দুনীতিকে ভাঙতে গেলে ভগবানের বংশীধারী প্রেমিক রূপের উপাসনা করলে হবে না। বৃন্দাবনের রাধিকামোহন কৃষ্ণঠাকুরটিকে বঙ্কিম তাই আনন্দমঠে স্থান দেন নি । তিনি আবাহন গেয়েছেন সেই কুরুক্ষেত্রের শ্ৰীকৃষ্ণের যিনি শক্তিময়, যিনি ইন্দ্রের বঞ্জে, যিনি সৰ্ব্বগ্রাসী বন্যায়, যিনি দুর্ভিক্ষে, মহামারীতে যুদ্ধে আর ভুমিকম্পে, ধিনি গড়বার জন্ত বঞ্জ দিয়ে অন্যায়কে ভাঙেন। বঙ্কিম বিবেকানন্দের মতই ভারতবর্ষের কানে দিয়েছেন শৌর্য্যের বাণী। বঙ্কিম বাংলার নীটশে । - + স্বাধীনতার আদর্শের সঙ্গে অার একটি আদর্শ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, সে অাদর্শটি হ’ল সাম্যের অাদর্শ। স্বাধীনতার যেমন প্রয়োজন, সাম্যেরও তেমনি প্রয়োজন। বঙ্কিম এই সাম্যের আদর্শকেও জয়ী করেছেন তার লেখায়। বঙ্কিম লিখেছেন, বড়লোকে ছোটলোকে এ প্রভেদ কিসে ? রাম বড়লোক, বহু ছোটলোক কিসে?...ধন্থ চুরি করিতে জানে না, বঞ্চনা করিতে জানে না, পরের সর্বস্ব শঠতা করিয়া গ্রহণ করিতে জানে না, সুতরাং ছোটলোক ; রাম চুরি করিয়া, বঞ্চনা করিয়া, শঠতা করিয়া ধনসঞ্চয় করিয়াছে, সুতরাং রাম বড়লোক। অথবা রাম নিজে নিরীহ ভালমামুখ, কিন্তু তাহার প্রপিতামহ চোবঞ্চনাদিতে সুদক্ষ ছিলেন ; «धचां★ौ Nరీ$8 মনিবের সর্বস্থাপহরণ করা বিয় করিয়া গিয়াছেন, রাম জুরাচোরের প্রপৌত্র, সুতরাং সে বড়লোক । বস্তুর পিতামহ আপনি আনিয়া আপনার খাইয়াছে-সুতরাং সে ছোটলোক। অথবা রাম কোনও বঞ্চকের কঙ্কা"বিবাহ করিয়াছে, সে সম্বন্ধে সে বড়লোক । রামের মাহাক্স্যের উপর পুষ্পবৃষ্টি কর। বঙ্কিম কখনও ধনের আভিজাত্যকে সম্মান দান করেন নি। যাদের টাকা আছে . কিন্তু চরিত্র নেই, কৰ্ম্মক্ষমতা নেই, তাদের প্রতি বঙ্কিমের বিতৃষ্ণ কি স্বতীব্র ছিল, মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিতে তার অজস্র প্রমাণ আছে । অর্থের প্রাচুর্য্যের মাপকাঠি দিয়ে তিনি যেমন মামুষের মূল্য নিৰ্দ্ধারণ করতেন না, কুলমৰ্য্যাদাও তেমনি র্তার কাছে মানুষের মূল্য-বিচারের কষ্টিপাথর ছিল না। বর্ণবৈষম্যকে ধনবৈষম্যের মতই তিনি অশ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। ভারতবর্ষের অবনতির একটি মূল কারণ তিনি দেখেছিলেন বর্ণবৈষম্যের মধ্যে। তার পর নারীপুরুষের যে বৈষম্য সেই বৈষম্যকেও তিনি সমর্থন করেন নি । মনুষ্যে মমধ্যে সমানাধিকারবিশিষ্ট। স্ত্রীগণও মনুষ্যজাতি, অতএব স্ত্রীগণও পুরুষের তুল্য অধিকারশালিনী । যে যে কার্থেী পুরুষের অধিকার আছে, স্ত্রীগণেরও সেই সেই কার্য্যে অধিকার থাকা স্কায়সঙ্গত । এ-কথা বঙ্কিমের কথা । বঙ্কিম যেমন স্বাধীনতা-মন্ত্রের উপাসক ছিলেন, সাম্য-মন্ত্রেরও তেমনি উপাসক ছিলেন। র্তার “সাম্য” প্রবন্ধটি পড়লেই বোঝা যাবে মানুষকে তিনি কতখানি ভালবাসতেন এবং কাঞ্চনকৌলিন্তের প্রতি তার কতখানি ঘৃণা ছিল । বঙ্কিম আজ স্থদুরে, কিন্তু মৃত্যু তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। তার আরন্ধ সাধনা আজ সমস্ত ভারতবর্ষের সাধনা হয়ে দাড়িয়েছে। তার একাকী কণ্ঠের উচ্চারিত বন্দেমাতরম্ আজ সমস্ত ভারতবর্ষের গায়ত্রীমন্ত্রে পরিণত হয়েছে। জন্মভূমিকে মুক্ত দেখবার যে নিবিড় আকাঙ্ক্ষা এক দিন তিনি আপন অস্তরে অনুভব করেছিলেন, লে আকাজ আজ অগণিত মনে বাসা নিয়েছে। • স্বাধীন ভারতবর্ষের স্কে স্বপ্ন দেখে কত দিন তার চিত্ত পুলকের আতিশয্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে—সেই স্বপ্ন আজ সমস্ত ভারতবাসীর স্বপ্ন। বঙ্কিমের অমরত্ব এইখানেই । বন্দেমাতরম্