পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ogسb শ্রেণীর লোক প্রকৃত পক্ষে ঈশ্বরও মানে না। ঈশ্বর ও পষ্মকাল দুটা মত নয়, এক মতেরই দুটা দিক। তরল যুক্তিতর্ক, অনিশ্চিত অনুমান, এ-সকলের দ্বারা যে ঈশ্বর মানা হয়, সেই ঈশ্বর মানার সঙ্গে পরলোক মানার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ না থাকতে পারে। কিন্তু আত্মজ্ঞানের উপর দাড়িয়ে যে-ঈশ্বর মানা হয়, যে-ঈশ্বর আত্মার আত্মা, পরম আত্মা, যে-ঈশ্বরের অচ্ছেদ্য অংশ জীবাত্মা, যে-ঈশ্বর মানবের পিতা,মাতা, সখা, স্বহৃদ, প্রভু, স্বামী, সে ঈশ্বর মানলে অবশ্যম্ভাবীরূপেই মানবাত্মার অমরত্ব মানতে হয়। প্রকৃতিস্থ মায়ের পক্ষে সস্তান বধ করা যত দূর অসম্ভব, পূর্ণ প্রেমময় ঈশ্বরের পক্ষে তার প্রেমপাত্র মানবাত্মাকে বধ করা তার চেয়ে অনন্ত গুণে অসম্ভব । এই অসম্ভবত্বের ধারণা তত ক্ষণ উজ্জ্বল হয় না যত ক্ষণ না বাহিক পৰ্য্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান আত্মজ্ঞানমূলক দর্শনে পরিণত হয় । এই উজ্জল ধারণা স্থায়ী হয় না তত ক্ষণ, যত ক্ষণ না জ্ঞানসাধন ঐকাস্তিক যোগ, ভক্তি ও প্রেমসাধনে পরিণত হয় । যাহোক, এখন ঔপনিষদ ব্রহ্মবাদের কথা আবার বিশেষ ভাবে বলি । যে ব্ৰহ্মবাদ পাশ্চাত্য প্রণালীতে এইমাত্র ব্যাখ্যা করলাম, ঔপনিষদ ব্রহ্মবাদ মূলে তার সঙ্গে এক। কিন্তু ঔপনিষদ ব্রহ্মধিদের ব্যাখ্যাত মূল ব্ৰহ্মবাদ যেমন দৃঢ়রুপে ধরা দরকার, ব্রহ্মর্ষিরা এই ব্যাখ্যায় যে ভুল করেছেন, ষে ভুল দেবর্ষিরা ও রাজৰ্ষিরা দেখিয়ে দিয়েছেন, তাও তেমনি স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার । এ-বিষয়ে এ-দেশের দর্শনালোচনায় অনেক দিন থেকেই খুব ভুল ও ক্রটি চলে আসছে আর তাতে দেশে সত্য ও স্থায়ী ধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠার খুব ব্যাঘাত হয়েছে। রামামুজ, নিন্ধীক প্রভৃতি বৈষ্ণবাচাৰ্য্যগণ শাস্কর মায়াবাদের ভুল দেখিয়েছেন, কিন্তু মায়াবাদের বীজ ষে উপনিষদেই আছে, আর সেই বীজের দোষ যে স্বাধীনচেতা রাজর্ষির দেখিয়েছেন, তা বৈষ্ণবাচার্ধ্যেরা বুঝতে পারেন নি। আধুনিক বৈদাস্তিকেরাও ঋষিদের এই মতভেদের কথা বলছেন না, বরঞ্চ মায়াবাদই বেদান্তের একমাত্র মত, কেউ - কেউ এই ভাবই প্রকাশ করছেন । কিন্তু মায়াবাদ ভক্তিধর্মের বিরোধী, প্রকৃত পক্ষে সৰ্ব্বপ্রকার সাধনেরই বিরোধী প্রকারান্তরে সামাজিক ও জাতীয় উন্নতিচেষ্টারই প্রবাসী SN983 বিরোধী, স্বতরাং সাধননিষ্ঠ ব্যক্তিদের পক্ষে এই মতের ভ্রম বোঝা ও বুঝাবার চেষ্টা একান্ত আবশ্বক। আরুণি, স্বাঙ্গবন্ধ্য, পিপ্পলাদ, অঙ্গির, মাণ্ডুক্য, এই ব্রহ্মধিদের মূল ভ্রম হচ্ছে দ্যায়ের অন্বয়প্রণালী ( method of comprehension) so wrot also I wrof. স্বষ্টিতত্ত্ব ব্যাখা করতে গিয়ে মূল সদবস্তুকে দিয়ে বলিয়েছেন— “বহু স্তামূ", আমি বহু হই । একের ভিতর বহু, বহর ভিতর এক, এক ও বহুর ভেদাভেদ, অস্বয়-ব্যতিরেক, না থাকলে এক কেমন ক’রে বহু হবেন, বহুর চিস্তাই বা র্তার কেমন ক’রে হবে । আরুণির অদ্বৈতবাদ নির্বিশেষ ; তিনি কেবল এককেই প্রকৃত মনে করেন, বহুকে মসৎ, কাল্পনিক মনে করেন, সুতরাং তার দর্শনে জীব ও জগতের স্থায়ী অস্তিত্ব নেই, সাধ্য-সাধক-ভেদের অভাবে সাধনের কোন ভিত্তি নেই। যাজ্ঞবন্ধ্যের সম্বন্ধেও এই কথা ঠিক । তিনি স্থানে স্থানে জীব ও জগতের বিচিত্রতা উজ্জল ভাবে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু স্বযুপ্তিতে সব একাকার হয়ে যায়, বহুত্ব থাকে না, এই ভেবে তিনি একত্বকেই প্রকৃত বলেছেন, বহুত্ব র্তার কাছে "ইব', যেন, অর্থাৎ কাল্পনিক হয়ে গেছে । পিপ্পলাদ স্বযুপ্তিতে সমুদয় বস্তু ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠিত থাকে একথা স্বীকার করেও মুক্তির অবস্থায় বহুর অস্তিত্ব স্বীকার করেন নি। অঙ্গিরা ও মাণ্ডুক্যও এই মতাবলম্বী। এই ব্রহ্মর্ষিরা সকলেই অমৃতত্বের প্রয়াসী এবং অমৃতত্বকে পরম শান্তি ও আনন্দের অবস্থা মনে করেন । কিন্তু ষে অবস্থায় জ্ঞাতৃ-জ্ঞেয়ের ভেদ নেই, একের সঙ্গে অন্যের সম্বন্ধ নেই, কোনও বাসনা নেই, আকাঙ্ক্ষা নেই, আকাঙ্ক্ষার তৃপ্তিও নেই, সেই অবস্থা শান্তি ও আনন্দপূর্ণ কেমন ক’রে হবে, সেই অবস্থা কিসের জন্তে স্পৃহণীয়, তা বোঝা যায় না। স্বযুপ্তি সম্বন্ধে প্রজাপতিকে ইন্দ্র যা বলেছিলেন, আর প্রজাপতি যা স্বীকার ক’রে প্রকৃত মুক্তির অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন ( ছান্দোগ্য ৮১১১ ) তাই আমার কাছে ঠিক বোধ হয়। সেই অবস্থা মৃত্যু না হোক কাৰ্য্যতঃ মৃত্যুরই মত, তাতে স্পৃহণীয় কিছুই নেই। ব্রহ্মের সঙ্গে আমি যুক্ত হয়েছি, এক হয়েছি, এই বোধ যদি না রইল, তবে একে মুক্তি বলার, অমৃতত্ব বলার, সার্থকতা কি ?