পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tూoశ్రీ প্রবাসী 'SN988 সহিত এক ব’লে কালের অতীত । “ন জায়তে ম্ৰিয়তে বা বিপশ্চি২" (কণ্ঠ ২১৮ )—জ্ঞানবান আত্মা জন্মেও না, মরেও না। র্যারা আত্মার ভূমিতে দাড়িয়ে পরমাত্মাকে জানেন, পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার একত্ব অতুভব করেন, তারা অবশুম্ভাবীরূপেই জীবাত্মাকে অমর ব’লে বিশ্বাস করেন ; তাদের কাছে ঈশ্বরের অমরত্ব ও জীবের অমরত্ব একই তত্ত্ব, দুই তত্ত্ব নয়। যাদের ঈশ্বরবিশ্বাস আকুমানিক মাত্র, সাক্ষাং আত্মজ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, তারাই বলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, কিন্তু জীবাত্মার অমরত্বে সন্দেহ করি । যা হোক, আমাদের ঔপনিষদ ব্রহ্মধিরা ষে ভাবে আত্মার অমরত্ব ব্যাখ্যা করেন, তার অসন্তোঘকরত্ব এই মাত্র দেখালাম। তারা পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার অভেদ দেখতে গিয়ে ভেদটা একবারেই দেখেন না । ভেদ না দেখতে পেয়ে ঈশ্বরের প্রেমও দেখেন না। কাজেই অমৃতত্ব বিষয়ে তাদের মত অসন্তোষকর । কিন্তু দেবষি ও রাজর্ষিগণ জীব-ব্রহ্মের ভেদাভেদ দুই-ই দেখেছেন, আর স্পষ্টরূপে জীবের প্রতি ব্রহ্মের প্রেম স্বীকার করেছেন। তাতে তাদের অমৃতত্বের মত সন্তোষকর হয়েছে। তারা ব্ৰহ্মলোকে ব্রহ্মসন্নিধানে, মুক্তাত্মাদের চিরবাস যে ভাবে বর্ণনা করেছেন তা আপনারা আমার গত ধংসরের বক্তৃতায় শুনেছেন । এই সমস্ত তত্ত্ব কেবল বিশ্বাস নয়, যে বিশ্বাস আজ আছে, কালই সংশয়বাদের স্পর্শে চলে যাবে। এই সমস্ত তত্ত্ব প্রত্যক্ষ অতুভূতি ও অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেক জ্ঞানক্রিয়ায় অনন্তস্বরূপ তার আশ্রিত জীবকে আত্মপরিচয় দেন । এই আত্মপরিচয়ে জীবের প্রতি তার প্রেম প্রকাশ পায় । জীব যেমন র্তার জ্ঞান ও শক্তির ভাগী, সে তেমনি র্তার প্রেমপুণ্যের ভাগী। আমাদের হৃদয়ে ও বিবেকে তার প্রেমপুণ্যের সাক্ষাং প্রকাশ। আমরা উচ্চ মুহূৰ্ত্তে, বিশেষতঃ প্রত্যক্ষ উপাসনার সময়ে, তার পূর্ণ প্রেমপুণ্য, সৌন্দৰ্য্য, মাধুৰ্য্য উপলব্ধি করি। এই উপলব্ধিই আমাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের পরিমাপক ও পরিচালক । এই উপলব্ধি দ্বারা পরিচালিত হ’লে আর অমৃতত্ব সম্বন্ধে কোন সংশয় থাকে না। সংশয় হ’লেই বুঝতে হবে উপলব্ধি সম্যক হয় নি, পুণু হয় নি। এই উপলব্ধি যেমন নিঃসংশয় বিশ্বাসের ভিত্তি, তেমনি এ’ শান্তি, আনন্দ ও আধ্যাত্মিক শক্তির প্রস্রবণ। অন্য কোন অবস্থায়, পূর্ণ অনন্ত পুরুষের সঙ্গে অভঙ্গ যোগের অবস্থা ছাড়া অন্ত অবস্থায়, সসীম বস্তুর উপর নির্ভরের অবস্থায়, প্রকৃত শাস্তি, গভীর আনন্দ, ও অদম্য শক্তি পাওয়া যায় না। সুতরাং ধৰ্ম্মহীন জীবনাদর্শ মূলে ভ্ৰমাত্মক । সে আদর্শ ব্যক্তিগত, জাতিগত ও অন্তর্জাতীয় জীবনের আদর্শ হ’তে পারে না। ধৰ্ম্মের আদর্শ যে কেবল বিশ্বাস-মূলক নয়, তা যে স্বক্ষ, গভীর ও দর্শন-মূলক আদর্শ, তা আমি সংক্ষেপে দেখাতে চেষ্টা করলাম । এখন “ আবার বলি বিজ্ঞানের কথা । ‘বিজ্ঞান’ বলতে এখন এদেশের লোক বুঝে যাকে পাশ্চাত্যেরা বলেন ‘science’ । এদেশের প্রাচীন সাহিত্যে ‘বিজ্ঞান’ শব্দের অর্থ সম্যক প্রত্যক্ষ জ্ঞান, যে জ্ঞানে বিষয়-বিষয়ী, সসীম-অসীম, জীব-ব্রহ্ম, একত্র প্রত্যক্ষীভূত হয় । পাশ্চাত্য scienceএ তা ত হয় না। পাশ্চাত্য Fcience বিভাগের উপর, একান্ত ভেদের উপর, abstractionএর উপর, প্রতিষ্ঠিত । সুতরাং ‘বিজ্ঞান’ শব্দটা আধুনিক সময়ে প্রথম থেকেই ভুল অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । ভুলের পরাকাষ্ঠী হয়েছে এই ধারণায় ষে তথাকথিত বিজ্ঞানের প্রণালীই খাটি নিশ্চিত প্রণালী, আর সব প্রণালী ভুল, তাতে কেবল অয়ত্য ও কল্পনায়ই নিয়ে যায়। যা হোকৃ, আত্মপ্রতারিত এবং নিজ প্রণালীর অসম্পূর্ণতা সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ বিজ্ঞানের এই ধারণা যে কত ভ্রান্ত, তা বোধ হয় আপনারা এখন বুঝতে পারছেন । বৈজ্ঞানিকেরাও তা ক্রমশঃ বুঝতে পারছেন । বৈজ্ঞানিকের ষত দর্শনালোচনা করবেন ততই তারা জ্ঞানের একত্ব এবং জ্ঞানপ্রণালীরও মৌলিক একত্ব স্পষ্টরূপে উপলব্ধি করবেন । প্রণালীর, একত্ব না দেখলে বস্তুর মৌলিক একত্ব, বিশ্বের একত্ব, উপলব্ধি হবে না। সার জগদীশ তার নিৰ্ম্মিত অতিসূক্ষ্ম যন্ত্রদ্বারা দেখিয়ে গেছেন যে ধাতুখণ্ড পৰ্য্যন্ত বৈদ্যুতিক উত্তেজনায় সাড়া দেয় । কিন্তু এই সাড়া স্বীকার করেও চলিত দ্বৈতবাদ,–আস্থা ও অনাত্মার দ্বৈতবোধ—অচল থাকতে পারে। ইন্দ্ৰিয়, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার অচ্ছেদ্য একত্ব না দেখলে এই দ্বৈতবোধ দূর হয় না। আত্মজ্ঞানই যে সৰ্ব্বপ্রকার জ্ঞানের ভিত্তি,