পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র দেশের কাছে এসে জাহাজের निक्वन মহা উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। রাধুনী, বয় সবাই খালি ছুটে ছুটে ম্যাপ আর ঘড়ি দেখছে । প্রথম দিন" থেকে আজ পর্য্যন্ত জাহাজ দিনে যতটা ক'রে চলেছে, কাল বাড়ী পৌছবার উৎসাহে তার চেয়ে অনেক বেশী দৌড়েছে। এক দিন এক রাতে ২৮৫ মাইল এসেছে। ২রা ফেব্রুয়ারী সকালে আমাদের জাহাজ জাপানের কোবে বন্দরে লাগল। ডেকে ভীষণ ঠাণ্ডা হাওয়া, জাহাজের কেবিনের ভিতর গরম হাওয়া দিয়ে গরম ক’রে রেখেছে, উপরে মানুষ সহজে যেতে চায় না । ডেকের দিকের দরজাগুলো বন্ধ করে যাত্রীরা সব ভিতরে ব’লে ছিল কাল সারাদিন । কিন্তু আজ সকাল থেকেই জাপান পৌছবার উৎসাহে সবাই শীত ভুলে মোটা মোটা কোট প’রে, কেউ বা কম্বল নিয়ে ডেকে এসে হাজির হয়েছে। পাহাড়ের উপর বরফ পড়া আমি কখনও দেখি নি গুনে আমাদের জাপানী সহযাত্রী আমাকে ডেকে দেখালেন দুরে পাইন গাছে ঢাকা পাহাড়ের মাথায় বরফ রূপার রেখার মত গড়িয়ে গড়িয়ে যেন পড়ছে। অবশু, কাঞ্চনজঙ্ঘার চিরতুষারাবৃত মূৰ্ত্তি আমি অনেকবার দেখেছি। কিন্তু গাছপালার উপর বরফ পড়া ইতিপূৰ্ব্বে কখনও দেখি নি । 穩 যে-ডেকটা তীরের দিকে সেই খানেই ভীড় বেশী। জাহাজ ঘাটে লাগবার আগে থেকেই তীরের কত লোক রুমাল টুপি নেড়ে বন্ধুদের সাদর অভ্যর্থনা করতে লাগলেন । আমি আশা করেছিলাম দেখব সবাই কিমোনো অার কাঠের জুতা প’রে সার বেঁধে এসে দাড়িয়েছে, কিন্তু হতাশ হয়ে দেখলাম পুরুষরা অধিকাংশই সাহেবদের মত কোট প্যান্ট বুট হাট ওভারকোট ইত্যাদিতে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়ে হাজির। ঘাটে মেয়ে বেশী নেই, রক্ষা এই যে, যে কয়েক জনকে দেখতে পেলাম তারা কেউ বিদেশী পোষাক পরেন নি। সকলেই কিমোনো প'রে ও পায়ে কাঠের জুতা আঁর আঙুলচেরা মোজ প’রে থাটি স্বদেশী পোষাকে হাজির। জাপানী খোপার পঞ্চকুটি কিন্তু তাদের মাথায় নেই। আমাদের দেশের আর্টিষ্টদের আঁকা অজস্তার স্বন্দরীদের বেশভূষার জাপান ভ্ৰমণ b^9్స মত এই পঞ্চকুটিও প্রায় লোপ পেয়েছে। তবু দেখলাম ছুটি মেয়ের মাথায় এই রকম ফাপানো খোপা। জাপান্সে যা দেখব মনে ক’রে এসেছিলাম প্রথম দিনেই মনে হ’ল জাপান ঠিক সে রকম নয়। জাপানে মাঘ মাসের শীত আমাদের একেবারে কুলক্ষি মালাইয়ের মত জমিয়ে দেবে এই রকম ভয় দেশ থেকে পেয়ে গিয়েছিলাম। পথে বরফের উপর ছাড়া পা দেওয়া যাবে না, হাতে দস্তান না দিলে আঙুল ফেটে যাবে ইত্যাদি মনে ক’রে এসে দেখলাম পথে একটুও বরফ পড়ে নেই এবং হাতত্ত্বখানাও খুলে রাখা চলে। কিন্তু জাপানীরা আমাদের চেয়ে ঢের সাবধান, তারা পায়ে ত মোটা মোট বুট পরেইছে, হাতেও গরম দস্তান আছে, তার উপর স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে সিকি ভাগের নাক মুখও অনাবৃত নয়। চামড়ার একটা ষ্টুলির ভিতর তুলা ও ন্যাকড়ায় ওষুধ দিয়ে চশমার মত ক’রে কানে দড়ি বেঁধে সব নাক ও মুখ ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছে । জাপানীরা সৌন্দৰ্য্যপ্রিয় জাত বটে, কিন্তু স্বাস্থ্যের কাছে সৌন্দৰ্য্যকে বোধ হয় তারা বড় ভাবে না। তা না হ’লে সুন্দরী তরুণীরা পাউডার, লিপষ্টিক, রুজের উপর নাকে মুখে ঠুলি দিয়ে রাখত না। আমাদের দেশের অনেক মেয়ে খারাপ দেখাবার ভয়ে চোখে চশমা পৰ্য্যন্ত পরতে চায় না। আমাদের জাপানী সহযাত্ৰীটির জাপানের শীতের উপযুক্ত কোট বোধ হয় সঙ্গে ছিল না। জাহাজ ঘাটে পৌছতেই তার এক বন্ধু দেখলাম ডাঙা থেকে একটা বিরাট কোট ছুড়ে দিলেন তার দিকে । জাহাজে পাসপোর্ট ইত্যাদি পরীক্ষার পর আমাদের দশটার সময় ডাঙ্গায় নামৃতে দিল । 變 ডাঙায় অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর ছোট মাপের রিকশ দাড়িয়ে ছিল, আমাদের দেখেই চালকের ছেকে ধরল। আমরা যখন কোন প্রকারে দর ঠিক ক’রে চড়তে যাচ্ছি, তখন দেখি, জাপান-প্রবণসী সিন্ধী ভদ্রলোকেরা আমাদের দিকে অতি বিস্থিত হয়ে তাকিয়ে আছেন। এক জন বললেন, “ট্যাক্সি এখানে খুব সস্তা।” বুঝলাম আমরা এখানে নূতন, কিছু করছি, এখানে লোকে রিকশ বিশেষ চড়ে না। যাই হোক, তাদের কথা