পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈজ দেখি—আর একটা ভীমরুল আসিয়ু বাদটার চতুর্দিকে চক্রাকারে উড়িতে লাগিল । দুই-চারি বার এরূপ ঘুরিয়া বাসাটার উপর বসিয়াই একটা গৰ্ত্তে মুখ প্রবেশ করাইয়৷ দিল। সঙ্গে সঙ্গেই চারপাচটা বোলত আসিয়া তাহাকে চাপিয়া ধরিল। ভীমরুলটা তাহাতে ক্ৰক্ষেপও না-করিয়া আর একটা গৰ্ত্তে মুখ দুকাইয় একটা অপরিপুষ্ট বোলতার কাঁড়াকে টানিয়। বাহির করিল এবং ঘাড়ের দিকে কামড়াইয়া ধরিয়া উড়িয়া পলায়ন করিল। বোলতাগুলি যেন অসহায় ভাবে কতক্ষণ সেদিকে চাহিয়া থাকিয়া সকলে মিলিয়া অত্যন্ত উত্তেজিত ভাবে ঝনঝন শব্দে ডান কাপাইতে লাগিল । কিন্তু কেহই ভীমরুলের পশ্চাদ্ধাবন করিল না। অপর ভীমরুলটার সঙ্গে মারামারি তখনও থামে নাই। প্রায় পাচ-ছয়টা বোলত। ভীমরুলের দংশনে বিকলাঙ্গ হইয়। নীচে পড়িয়া ছটফট, করিতেছিল। এতক্ষণ লড়াইয়ের ফলে ভীমরুলটাও বিশেষ ভাবে জদ হইয় পড়িয়াছিল—তাহার এক দিকের পা বোধ হয় বোলতার দংশনে অসাড় হইয়া যাওয়ায় সে কাংরাইতে কাংরাইতে এক দিক হইতে আর এক দিকে পলাইবার চেষ্টা করিতেছিল। কিন্তু বোলতার সুযোগ পাইয়া তাহাকে যেখানে সেখানে অবিশ্রাম দংশন করিতে লাগিল ৷ ভীমরুলট অবশেষে একটা বোলতার সহিত জড়াজাড় করিয়া একেবারে চাকটার কিনারায় আসিয়া পড়িতেই আরও দুইটা বোলতা আসিয়া আক্রমণ করিল এবং সকলে জড়াজড়ি করিয়া মাটির উপর পড়িয়া গেল । তাহাতেও কি লড়াই থামে । ধুলায় গড়াগড়ি দিয়া কামড়াকামাড় করতে লাগিল। এদিকে চাকের বোলতাগুলি পুনরায় ব্যুহ রচনা করিয়, ফেলিয়ছে। চাকটার চতুর্দিকে ডানা উচু করিয়া অসংখ্য সান্ত্রী প্রায় নিশ্চলভাবে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দাড়াইয়াছে। সাষ্ট্রীদের পরেই এক দল কৰ্ম্মী বোলতা কেবল গৰ্ত্তের মধ্যে মুখ গুজিয়া গুজিয়া বাচ্চাদের তদারক করিতেছে। বাসার মধ্যস্থলে সাদা টুপি দিয়া মুখ বন্ধ করা কতকগুলি গৰ্ত্তের চতুর্দিকে চাকের” বাকী বোলতাগুলি সমবেত হইয়া মাঝে মাঝে ডান কঁপাইতেছে। তাহদের ডান কাপানোর ঝনঝন আওয়াজ কানে আসিয়া পেWছতেছিল। রোদ প্রায় পড়িয়া আসিয়াছে—এমন সময় দেখি আর একটা ভীমরুল বাসার কাছে আসিয়া উড়িতে লাগিল। বোলতাগুলি ভীমরুলের আগমন বুঝিতে পারিয়াই একসঙ্গে সকলে ডান কঁপাইতে কঁপাইতে মুখ বাড়াইয়। প্রস্তুত হইয় ছিল। ভীমরুলটা একবার বাসার খুব কাছে উড়িয়া আসিয়। আবার দূরে চলিয়া গেল। কিন্তু মিনিট-পাচেক পরেই হঠাৎ কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া বাসার উপর পড়িল এবং বোলতাদের সমবেত বাধাদান সত্ত্বেও প্রায় দুই-এক মিনিটের মধ্যেই আর একটা বাচ্চ মুখে করিয়া উড়িয়া গেল। আলো পড়িয়া আসাতে বোলতার তখন কি করিতেছিল দূর হইতে তাহ পরিষ্কার ভাবে বুঝিতে পারিলাম না। কেবল কতকগুলি বোলতাকে বাসার চতুর্দুিকে উড়িয়া বেড়াইতে দেখিলাম। কাছে গেলে যদি উড়িয়া আসিয়া দংশন করে এই ভয়ে তার পর দিন ট্রলি-মাইক্রোস্কোপের সরঞ্জাম সঙ্গে লইলাম। ভীমরুলের যখন বোলতার বাচ্চাদের সন্ধান পাইয়াছে তখন নিশ্চয়ই আজ তাহারা আরও বেশী সংখ্যায় আসিয়া বাচ্চা চুরি করবে, ইহা অামাৱ নিশ্চিত ধারণা হইয়৷ গিয়াছিল। বেল প্রায় দশটার সময় জাসিয়া দেখি—স্বাহ e ==SR পঞ্চশম্ভ} t;~gN9 ভাবিয়ছিলাম তাহাই ঘটিয়াছে। ইতিমধ্যেই তাহার বাচ্চ ছিনাইয়ু লইবার অভিধান সুরু করিয়া দিয়াছে। সকাল হইতে "এতক্ষণ পৰ্য্যস্ত হয়ত তাহার বোলতার অনেক বাচ্চ ছিনাইয়া লইয়া গিয়াছে। যাহা হউক, রাস্তার অপর পার্থে বাস হইতে প্রায় পচিশ ত্রিশ হাত দূরে টেলি-মাইক্রোস্কোপ খাটাইয়া বাসার অবস্থা দেখিতে লাগিলাম। বাসার সান্ত্রীদের ব্যুহ পূৰ্ব্বমতই রহিয়াছে, কিন্তু বোলতার সংখ্যা অনেক কম বোধ হইল। তাহারা অনেকেই কেবল ঘন ঘন গৰ্ত্তের মধ্যে মুখ দুকাইয়ু বাচ্চাদের তদারক করিতেছিল। আর কতকগুলি কেবল ডানা উচু করিয়া নিশ্চল অবস্থায় দাড়াইয়া ছিল । ইতিমধ্যেই একসঙ্গে দুইটা ভীমরুল উড়িয়া আসিয়া বাসার উপর পড়িল। বোলতাকুর সঙ্গে দুই স্থানে ভীমরুলের জড়াজড়ি কামড়াকামড়ি মুরু হইয় গেল । দুই-এক মিনিটের মধ্যেই প্রায় তিন-চারটা বোলতা সাংঘাতিকভাবে আহত হইয়া বাস হইতে নীচে পড়িয়া গেল। ইহার মধ্যে কোন ফঁাকে যেন ভীমরুল দুইট বাচ্চ মুখে করিয়া উড়িয়া গেল । রাস্তার উপর আসিয়া দেখিলাম নীচে কয়েকট বোলত পড়িয়া ছটফট করিতেছে। একটা বিকলাঙ্গ ভীমরুলও দেখিতে পাইলাম । পিপড়েদের মহোৎসব লাগিয়া গিয়াছে। তাহার। অনেকে মিলিয়৷ বোলতার মৃতদেহ বহন করিয়া গৰ্ত্তের দিকে লইয়া চলিয়াছে। একটা অৰ্দ্ধমৃত ভীমরুলকেও তাহারা আক্রমণ করিয়াছে, কিন্তু তাহার সঙ্গে অপটিয়া উঠিতে পারিতেছে না। পিপড়ের তাহার ঠ্যাং ধরিয়া টানিয়া আনিবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু সে তাহাদিগকে লইয়াই কাংরাইতে কাংরাইতে লাইন ছাড়াইয়া বহুদূর চলিয়। যাইতেছে। এদিকে বোলতাদের অবস্থা দেখিয়া বোধ হইল যেন তাহার খুবই ভয় পাইয়া গিয়াছে। কারণ এ দৃশ্ব দেখিতে রাস্তায় অনেক লোক জড় হইয়াছিল । তাহাদের কেহ কহ একটু আগাইয়া যাইতেই বোলতাদের অনেকেই পিছু হটতে হটিতে একেবারে বাসার পিছন দিকে গিয়া লুকাইয়া রহিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার পূর্ব স্থানে ফিরিয়া আসিতে লাগিল। যতই বেলা বাড়িতেছিল ভীমরুলের সংখ্যা যেন ততই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল । একটার পর একটা ত আসিতেছিলই, আবার মাঝে মাঝে একসঙ্গে দুই-তিনটা আসিয়াও বোলতার বাচ্চাগুলি মুখে করিয়া পলাইতেছিল। এখন মারামারি বড় একটা দেখিতে পাইলাম না। খণ্ডযুদ্ধে দুই-একটা বোলত প্রাণ হারাইতেছিল। কয়েকটা ছোট ছেলেকে ভীমরুলগুলিকে অমুসরণ করিয়া তাহাদের বাসস্থান নির্ণয় করিতে বলিয়া দিয়াছিলাম। সন্ধ্যার সময় তাহারা আসিয়া বুলিলপ্রায় মাইলখানেক দূরে রাস্ত হইতে কিছু তফাতে একটা নাটঝোপের ভিতর ভীমরুলের প্রকাগু বাস ৰাধিয়াছে। সেখান হইতেই উড়িয়া আসিয়া ভীমরুল বোলতার চাকের উপরে এইরূপ রাহাজানি করিতেছে । চতুর্থ দিনে সকালে গিয়া দেখিতে পাইলাম—বোলতার সংখ্যা খুবই কম। তাহারা সকলে মিলিয়া চাকটার মধ্যস্থলে জমায়ং হঠয়াছে। পূর্বেই বলিয়াছি, মধ্যস্থলে সাদা টুপি ঢাকা কতকগুলি গৰ্ত্ত ছিল । তাহার আশপাশের গর্তগুলির মুখ থোলা এবং টেলি-মুইক্রোস্কোপের সাহায্যে তাহার-ভিতরের বাচ্চাগুলিকে পরিষ্কার দেখ ৰাইতেছিল। কিন্তু বাসার কিনারার চতুর্দিকস্থ গর্তগুলিকে