পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

to-33 সম্পূর্ণ খালি দেখিতে পাইলাম। বোধ হয় ভীমরুলের ঐ সমস্ত গর্তের বাচ্চাগুলি সবই লইয়া গিয়াছিল। আজও দেখিলাম, ভীমরুলের পূর্বের মতই আনাগোনা করিতেছে। কেহ কেহ বাচ্চাগুলিকে লইয়। যাইতেছে, আবার কেহ কেহ রিক্ত হস্তেই ফিরিয়া যাইতেছে । লড়াই তখন এক প্রকার নাই বলিলেই চলে । ভীমরুল আসিবার সঙ্গে সঙ্গেই সেই স্থানের বোলতাগুলি পিছু হটিয়া গিয়া বাসার পশ্চাদ্ভাগে আশ্রয় লয়, আবার চলিয়া গেলেই তাহার স্বস্থানে আসিয়া জমায়েং হয় । এই সময়েও ভীমরুলের সম্মুখে পড়িয়া মাঝে মাঝে দুই-একটা বোলত মারা যাইতেছিল। এবার বিশেষভাবে লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম—অনাবৃত গৰ্ত্তের বাচ্চাগুলি অনবরক্তকেবল মাথা ঘুরাইতেছে। ব্যাপার কি বুঝিতে ন পারিয়া দূরদর্শন-যন্ত্রটাকে আরও নিকটে আনিয়া বসাইলাম। অনেক ক্ষণ লক্ষ্য করিবার পর বুঝিতে পারিলাম বাচ্চাগুলিও বিপদের সন্ধান পাইয়া মুখ ঘুরাইয়া ঘুরাইয় স্থত বাহির করিয়া গর্তের মুখে ঢাকুন প্রস্তুত করিতেছে । "প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কয়েকটা গর্তের ঢাকন গড়িয়া উঠিতে দেখিলাম। বাচ্চার নিজেই মুখ হইতে স্থত বাহির করিয়া গৰ্ত্তের ঢাকৃনা বন্ধ করিয়া থাকে। পুত্তলিতে রূপান্তরিত হইবার পূর্বেই তাহারা ঢাকনা বুনিতে মুরু করে। এই ঢাকুন। এত শক্ত যে হাতে টানিয়া ছেঁড়া যায় না । ভীমরুলের এতক্ষণ ঢাকৃন৷ কাটিয়া পুত্তলি বাহির করিয়া লইবার চেষ্টা করে 'প্রবাসী SNరికB8 so 籃 নাই। খোলামুখ গর্ভের ছোট ছোট বাচ্চাগুলিকেই লইয়াছে। এবার অন্ত কিছু না পাইয় তাহারা ঢাকনা ছিক্তিযু পুত্তলি বাহির করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । এই কাজে অনেক সময় লাগিতেছিল । এই সুযোগে বোলতারা আসিয়া আবার দলবদ্ধভাবে তাহাদিগকে আক্রমণ করিতে লাগিল। কিন্তু ভীমরুল একে বাচ্চার স্বাদ পাইয়াছে তাহাতে অতি দুৰ্দ্ধৰ্ষ কোপনস্বভাব, কিছুতেই হাটবার পাত্র নহে। মারামারিতে দুই-একটা স্থানচ্যুত হইলেও অন্যেরা আসিয়৷ সেই স্থান দখল করিয়া টুপি কাটিয়া পুত্তলি বাহির করিয়া লইতে লাগিল। বোলতার দলে দলে প্রাণ দিয়াও তাহাদিগকে রক্ষা করিতে পারিল না । পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যেই ভীমরুলের বোলতাণের প্রায় সমস্তগুলি বাচ্চা ও পুত্তলি ছিনাইয় লইয়া গেল। অবশিষ্ট বোলতারা ভীমরুল দেখিলেই আর ভয়ে কাছে আসিত না-বাসার পিছনে লুকাইয়া আত্মরক্ষা করিত। বাসায় যে দুই-চারিটি বাচ্চ তখনও অবশিষ্ট ছিল, কৰ্ম্মী ও খাদ্যের অভাবে তাহদের মধ্যে আর এক নূতন উপদ্রব আরম্ভ হইল । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এক প্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাছি আসিয়া তাহদিগকে আক্রমণ করিয়া তাহাদের শরীরের রস চুবিয়া খাইতে লাগিল। এইরূপে প্রায় আট-নয় দিনের মধ্যেই অতবড় বোলতার বাসাটি প্রবল অত্যাচারীর কবলে পড়িয়া একেবারে বিনষ্ট হইয়। গেল । অভাবনীয় শ্ৰীবিভূতিভূষণ গুপ্ত সানাইয়ের করুণ রাগিণীর মধ্যে বিদায়ের ব্যথা ছাপিয়ে মিলনের আনন্দ-উজ্জ্বল সুর কেঁপে কেঁপে জানিয়ে দেয় যে, বিচ্ছেদের ভিতর শুধু ব্যথাই নেই ; একটা মহামিলনের পূর্বাভাস রয়েছে এই স্বরের প্রতি মূর্ছনায়। এ-কথা সবাই জানে, সকলেই উপলব্ধি করে—আমিও করেছি, কিন্তু আজ আর আমার সে-মন নেই। এক জনার মিলনকে কেন্দ্ৰ ক’রে আর একটি অভাগা মেয়ের বিয়োগান্ত অনুষ্ঠানটি আমার মনের মধ্যে গাথা হয়ে আছে। তার পর জীবনের অনেকগুলি বছরই ত শেষ হয়ে গিয়েছে। ছোটবড় নানা কাজের ফঁাকে মনকে শুধু অন্তমনস্ক ক’রে রাখাই চলে, তার স্বভাবকে বদলান স্বায় না। । . . 魏 ছোট বোন রাখুর বিয়েতে বাড়ীময় একটা সাড়া প’ড়ে গিয়েছে। ছাদে মেরাপ বাধা হচ্ছে, বাড়ীর সম্মুখভাগটা বৈদ্যুতিক আলোর সাহায্যে যতটা সম্ভব রুচিসম্মত ক'রে তুলতে নিপু উঠে পড়ে লেগেছে। সৰ্ব্বত্রই একটা নূতন উন্মাদন, শুধু আমি সকলের অলক্ষ্যে নিজের ঘরে এসে নীরবে ব’সে আছি । আজ আবার টুমুর বিশীর্ণ বিবর্ণ মুখখান নূতন ক’রে মনে পড়ে আমাকে রীতিমত চঞ্চল ক’রে তুলেছে। ঘটনাটা অনেক বছর পূৰ্ব্বেকার— কাকার মেয়ে টুচু । জন্মগ্রহণের বছর দুই পরে টাইফয়েডে তার সহজ বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। কিন্তু বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে তার দেহের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক দ্রুত ব'লেই মনে হয়- টুমুর বয়েস বছর-চোদ্ধ, অথচ বড় বোন লক্ষ্মী তার কাছে ছেলেমাকুব ।