পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*BS。 প্রতিবাদ করবার মত গুছিয়ে বলবার ভাষা ওর নেই••• শক্তি ওর নেই, শুধু একটা নিৰ্জ্জীব অভিমান টুক্ষকে - ব্যথিত ক’রে তোলে। নিজের দুৰ্ব্বল বুদ্ধি দিয়ে নিজের বিষয় ভাবতে গিয়ে ওর বুঝবার শক্তিকে আরও সাংসারিক জটিলতার পাকে ফেলে শক্তিহীন ক’রে তোলে। দেহে ওর যৌবনের পূর্ণই ফুটে উঠেছে, সে দিক দিয়ে কারুর চেয়েই টুকু হীন নয়, কিন্তু মানসিক দৈন্ত দেহের ত্রকে মূল্যহীন ক’রে তুলেছে—সেখানে ও হাসির চেয়েও ছোট। সংসারের চোখে টুকু বাতিল, কারণ সে সকলের সঙ্গে সমান তালে চলতে পারে না, কারণ চোখের পলকে সব কথা বুঝবার বুদ্ধি তার নেই। মনে যে-কথা জাগে মুখে তা সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ পায়। বুঝে বলবার কিংবা ভেবে দেখবার বুদ্ধি ওর কাচা। ওর বাইরের প্রকাশের সঙ্গে ভিতরের বিকাশ ঘটে নি, সেইটেই হ’ল ওর গুরু অপরাধ । লক্ষ্মী বললে—আপনিও কি টুম্বর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপে গেলেন ? - —তোমার কি তাই মনে হয় ? হেসে তাকে পাণ্টা প্রশ্ন করলাম। লক্ষ্মী একটু অপ্রস্তুত হ’ল। লক্ষ্য আমার স্থানভ্রষ্ট হয় নি। পুনরায় সহজ হেসেই লক্ষ্মীকে বললাম—আজকের সকালটা তোমার মাটি হয়ে গেল, কিন্তু সকালের ঘাটতি বিকেলে তোমায় পুষিয়ে দেব। লক্ষ্মী একটু ক্ষুন্ন হ’ল কিন্তু - এ ছাড়া আমার আর অন্য কোন উপায় নেই। গানের দিকে আমার মন নেই। মন যেখানে বিমুখ সেখানে মিথ্যা পণ্ডশ্রম করতে আমি প্রস্তুত নই। স্বরের আলাপ হয়ত জমতো কিন্তু গানের কসরং আজ সব দিক দিয়েই ব্যর্থ হ’য়ে যাবে। এ-কথা লক্ষ্মী না বুঝলেও আমিত বুঝি। টুম্ব তেমনি ক’রে হেসে হেসে বললে—ওরা রোজ রোজ সেঙ্গেগুজে বেড়াতে যায় । পুকুরে নৌকো ক’রে হাওয়া খায়, আমাকে এক দিনও নিয়ে যায় না। দিদি বকে-•• দাদা মারে। হাসি আবার মুখ ভ্যাংচায়। জান বড়দাদা, দিদির অনেক শাড়ী। সিলুকের শাড়ী। আবার তিন জোড়া জুতো। আমার কিছু নেই। লক্ষ্মী কুঞ্চিত মুখে উঠে গেল। টুম্বর কথা কয়টির সত্যত সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হলাম। কথা হিসাবে এর তুল্যমূল্য হিসেব করতে বসব না কিন্তু ‘মনে মনে আমি ক্ষুব্ধ ইলাম। টুচুর ইচ্ছা অন্বিচ্ছ ত এমনি ক’রেই প্রতিনিয়ত লাতি প্রবাসী SN988 হচ্ছে, কিন্তু এ-কথা কেউ একবার ভেবেও দেখে না যেহেতু ওর প্রতিবাদ করবার সাহস নেই। " নিতান্তই অবহেলার মধ্যে টুকু ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। প্রকৃতির সহজ ধৰ্ম্ম ঐ অৰোধ মেয়েটাকে কিন্তু বাদ দিয়ে যায় নি। তার সহজ স্পর্শ ওর দেহের প্রতিটি অঙ্গে বিকাশ পেয়েছে। দেহের উপর ওর মায়া আছে, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিদির মত মনোহর ক’রে তুলতে ওর আগ্রহের অন্ত নেই, অথচ টুকু সকলের চেয়ে •আলাদা—সকলের মধ্যে একলা । টুম্ব পুনরায় কথা ক’য়ে উঠল—জান বড়দাদা, দিদির বিয়ে হবে। একটু হেসে একটু থেমে পুনরায় সে বললে— মা বলেছে আমারও হবে । . হাসি এসে এতক্ষণ যে আমার পিছনে চুপ ক’ দাড়িয়েছিল তা টের পেলাম ওর হাসির শব্দে–কি বোকা মাগো-হাসি বললে, জান বড়দা, টুকু মাকে জিজ্ঞেস করেছেল, মা আমার বিয়ে হবে কবে—ছি ছি লজ্জা নেই —হাসি অনর্গল হেসে চলল । কিন্তু বোকা মেয়েটা এত ছি-ছিতেও লজ পেল না, বরং সেও হাসির সঙ্গে যোগ দিয়ে । হাসতে লাগল যেন মন্তবড় একটা রসিকতার কথা হয়েছে। টুম্বর বুদ্ধিহীনতার কথা একরত্তি মেয়ে হালি পৰ্য্যস্ত জানে। বিয়ে শব্দটার মধ্যে যে বাঙালী মেয়ের একটা লজ্জ লুকানো আছে এ-কৃথাটা হাসি বুঝলেও টুম্ব বোঝে না, অথচ বিয়ে সব মেয়ের হয় এ-কথাটা সে জানে। তারও দিদির মত বিয়ে হবে এ-কথাটা প্রকাশ করতেও সে আনন্দ পায় এবং সেই আনন্দকে টুম্ব অপরাপর দশ জন মেয়ের মত সঙ্গোপনে উপভোগ করতে শেখে নি। তাই তার মনের ইঙ্গিত স্পষ্ট রূপে ধরা দেয়, কোথাও তার গতিরোধ হয় না । টুচু পুনরায় কথা ক’য়ে উঠল—আমাকে বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যাবে বড়দাদা? আমি ওর মুখের প্রতি দৃষ্টি ফেরাতেই টুম্ব আমার কানের কাছে মুখ এনে অপেক্ষাকৃত মৃদ্ধ কণ্ঠে পুনরায় বললে—আমি ভাল কাপড় পরে আর চুপি চুপি দিদির পাউডার-এসেন্স মেখে তোমার সঙ্গে ধাব। তুমি যেন দিদিকে ব’লে দিও না, ও বাবাকে বলে দেবে। কিন্তু কথাটা সে অত্যন্ত গোপনে বলবার চেষ্টা করলেও ষে আর গোপন নেই এ-কথাটা হাসি তাকে জানিয়ে দিয়ে গেল । টুম্ব অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে আমার আরও নিকটে এগিয়ে