পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র এসে অত্যন্ত কাতুর কণ্ঠে বললে—আমি ত আর নিই নি। আমি কি নিয়েছি—ঠাট্টা করেছি। ও বাবাকে নালিশ করবে। টুমুর চোখে মুখে স্পষ্ট আতঙ্ক ফুটে উঠল। একটা পরিচিত উৎপীড়ন-ভয়ে সে যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে। আমি তাকে আশ্বাস দিলেও মনে মনে ভারি ব্যথা পেলাম। টুম্বকে মোলায়েম কণ্ঠে বললামতোমাকে আমি পাউডার-এসেন্স কিনে দেব। টুমু উজ্জল বিস্থিত চোখে চেয়ে রইল, সম্ভবতঃ তার বঞ্চিত মন এতখানি আশা করতে পারে নি । খুড়ীমা এসে দেখা দিলেন—তোদের গান বাজন হয়ে গেল। টুম্ব এসে জুটেছে বুঝি। খুড়ীমার আরম্ভটা কতকটা ভূমিকার মত মনে হ’ল । আমি কোন কথা বললাম না। খুড়ীমা পুনরায় বললেন—মেয়ে কি আর কেউ পেটে ধরে না কিন্তু সবই কৰ্ম্মফল । পাগল ক’রে তুলেছে আমায়। ওর জালায় ঘরে বাইরে আমি পাগল হয়ে উঠেছি। যোগ্যতা নেই এক ছটাক, সৌর্থীনতা আছে ষোল ছাপিয়ে আঠার আনা । কোন কিছু লুকিয়ে রাখবার পর্য্যন্ত উপায় নেই—পাউডার বল আর স্নো বল । . একটু থেমে খুড়ীমা পুনরায় বললেন—এদিকে বুদ্ধি নেই কিন্তু ওর বাবুয়ানার জালায় আমাকে দিন রাত দুর্ভোগ পোয়াতে হয়। খিটিমিটি ঝগড়া-বাটি লেগেই আছে। যেমন হয়েছে ওরা তেমনি হয়েছে এই হতভাগী। মা হয়ে আমার বলা উচিত নয়—খুড়ীমা একটু ইতস্ততঃ ক’রে পুনশ্চ বললেন—ওর বেঁচে থেকেই বা লাভ কি! খুড়ীমার ষে ব্যথা কোথায় তা হয়ত আমি বুঝতে পেরেছি, কিন্তু তাই ব’লে তাকে নিরপেক্ষ বলতে পারি | || আমি বললাম—যদি একটু সৌধীনতা কিংবা— আমাকে থামিয়ে দিয়ে খুড়ীমা পুনরায় কথা ক'য়ে উঠলেন—সংসারের ধারণা নেই—নইলে একথা বলতে পারতিস না—খুড়ীমা জোর ক’রেই আমাকে থামিয়ে দিলেন। আমি তাই—তাও সহোদর নয় কিন্তু খুড়ীম টুমুর মা একথা আমি ভুলি নি । কাজেই খামক কথা না বাড়িয়ে আমি নীরব রইলাম। আমার বেশী কথা বলতে যাওয়া নিছক খ্ৰীষ্টত মাত্র। তাছাড়া খুড়ীমা সাংলারিক অভিজ্ঞতার যে অকাট্য প্রমাণ চোখের সম্মুখে তুলে ধরেছেন তার পরে আর মাথা তোলবার ভরসা রইল না। কিন্তু সংসারের পূর্ণ অভিজ্ঞতা থাকলৈ যে আমি কি করতাম তা ঠিক ঠাহর হ’ল না। खरखश्विन्ौश्च Ե-ՅՊ খুড়ীমা পুনরায় বললেন—ওকে নিয়ে আমার লোকসমাজে যাবার উপায় নেই। সেদিন দীনেশ-ঠাকুরপোকে বিয়ে করবার জন্য ক্ষেপে উঠল। সবাই হেসে উঠেছে হাসির কথাও বটে। অামাকেও তাদের সঙ্গে যোগ দিতে হয়েছিল। ওকে নিয়ে যে আমি কোথায় যাব বুঝি না । এটা বোঝে ত ওটা নয়, ওটা বোঝে ত সেটা নয় । আমি চুপ ক’রে বসে শুনছিলাম কিন্তু যাকে নিয়ে এত কথা সেই টুচু পরম নিৰ্ব্বিকার চিত্তে তার মুখের দিকে চেয়ে হাসছিল, এবং আমাদের বিস্মিত ক’রে দিয়ে কথা ক’য়ে উঠল—বড়দাদা, আমাকে পাউডার কিনে দেবে.আর এসেন। দিদিকে কিন্তু আমি দেব না। টুম্ব আপন মনে মাথা নাড়তে লাগল। খুড়ীমা সেই দিকে খানিক চেয়ে দেখে একটি নিশ্বাস ফেলে বললেন—কোন দিকে হুস নেই—নিজের খেয়াল নিয়েই আছে। টুলু পুনরায় অন্য প্রসঙ্গে উপস্থিত হ’ল, দিদিকে রবিদাদার বেী গান শেখায়—সে ভাল না—তুমি আমাকে গান শেখাবে –? আমার উত্তরের অপেক্ষ না রেখেই টুম্ব হঠাৎ অত্যন্ত মনোযোগের সহিত হারমোনিয়ামের গোটাকয়েক রীড একসঙ্গে টিপে ধরল। কিন্তু খুড়ীমা ধমক দিতেই সে হাত-পা গুটিয়ে বসল। মুখের হাসি তখন যদিও তার মুখে লেগেছিল কিন্তু তা ভয় এবং,সঙ্কোচে কুঞ্চিত । খুড়ীমা বললেন—কাউকে স্বস্থির হয়ে একটা কথা বলতে পর্য্যস্ত দেবে না। খুড়ীমা একটু থেমে পুনরায় অন্ত প্রসঙ্গে উপস্থিত হলেন—ওকে অযত্ন করতেও দুঃখ হয়, আদর করতেও বাধে। তোরা দোষ দিবি সে আমি বুঝি, নিজেকেই নিজে দোষারোপ করি তবু ঠিক সহজ হয়ে উঠতে পারি না । ভবিষ্যতের দিকে চোখ পড়তেই মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে ওঠে। আমার সঙ্কল্প ভেলে যায় অথচ টুম্ব কোন রকমেই অপরাধী নয়। খুড়ীমার এই স্বীকারোক্তির মধ্যে র্তার অন্তরের কত বড় বেদনা ষে লুকান আছে তা আমি উপলব্ধি করেছি। র্তার মনের এই অসহায় অবস্থা সত্যই ভেবে দেখবার। " & - টুম্ব অন্যত্র প্রস্থান করলে। হয়ত মাবার নূতন কোন খেয়াল তার মাথায় ঢুকেছে। খুড়ীমা পুনরায় , বললেন-লক্ষ্মীর বিয়েতে টুচুর আনন্দই সব চেয়ে বেশী । ওকে বলেছি কিনা—এর