পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র তরাইয়ের তরুণী

  • 億°。

উঠিতে লাগিল। সে ভুল করিয়া এমন জায়গায় আসিয়াছে ঘে সৰ্ব্বোচ্চ শিখরের উপর যাইতে হইলে বড় বড় বন্ধুর পাথরের গা বাহিয়া যাইতে হয় । তাহ অত্যন্ত বিপদজনক ; পা পিছলাইলে হাত-পা ভাঙিবার সম্ভাবনা । সে বিপদের কথা ভাল করিয়াই জানিত, কিন্তু তবু সে সম্মুখের দিকেই চলিল, বিপদের সম্মুখীন হওয়া যেন তাহার পক্ষে আনন্দের বিষয় । সে ভাবিল—“যদি আমি হঠাৎ পড়িয়া শেষ হইয়া যাই তবে কেহই আমাকে এখানে খুজিতে আসিবে না—খুজিলেও পাইবে না ; আমার পক্ষে সবই সমান। বৎসরের পর বৎসর জেলখানায় বসিয়া কাটানোর চেয়ে এখানে মরিয়া থাকাই ভাল।” তবুও কোন বিপদই তাহাকে টানিল না। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সে নিৰ্ব্বিবাদে সৰ্ব্বোচ্চ শিখরে গিয়া পৌছিল। অনেক বৎসর পূৰ্ব্বে এই বন একবার আগুনে পুড়িয়া গিয়াছিল, সেজন্য পৰ্ব্বতের শিখরভাগ এখনও তরুগুল্মহীন । গুডমুণ্ড শিখরের উপর হইতে পৰ্ব্বতের পাদদেশ, হ্রদ, নিবিড়ান্ধকার বনানী, আলবাধা কৃষিক্ষেত্র, ছোটবড় গ্রামগুলি দেখিতে লাগিল। অনেক দূরে সাদা মেঘেঢাকা শহরের কতক অংশও দেখা যাইতেছিল। শহরের বড় বড় চুড়াগুলি যেন শুভ্র মেঘকে ভেদ করিয়া উপরে উঠিয়াছে। রাস্তাগুলি সাপের মত আঁকিয়া-বাকিয়া মিলাইয়া গিয়াছে, রেল-লাইন মাঝে মাঝে বনের মধ্য দিয়া খালের মত চলিয়া গিয়াছে। চারি দিকের সমস্ত দুগু ছবির ন্যায় তাহার চোখের সম্মুখে ভাসিতেছিল। সে একবার নিজের পায়ের দিকে চাহিল । চারি দিকের বিপুল দৃশ্য তাহার দৃষ্টিকে আকর্ষণ করিতেছিল, এই বিরাট দৃশ্যের শান্তিময় গভীরতা তাহার মনের মানিকে ক্রমেই দূর করিয়া দিতেছিল। শৈশবের একটা কথা তাহার মনে পড়িল, যীশু খ্ৰীষ্টকে পৃথিবীর বিশাল দৃশ্য দেখাইয়া প্রলুদ্ধ করিবার জন্য পরীক্ষকারী তাহাকে পৰ্ব্বতের উচ্চশিখরে লইয়া গিয়াছিল। ছোটবেল। ইহা পড়িবার সময় গুডমুণ্ড ভাবিত, পরীক্ষাকারী নিশ্চয় এই পাহাড়ের উপর হইতেই খ্ৰীষ্টকে পৃথিবীর: দৃপ্তাবলী:দেখাইয়াছিল। গুডমুণ্ড আবার বাইবেলের সেই কথাগুলি আবৃত্তি করিতে লাগিল—“তুমি যদি হাটুর্ণ গাড়িয়া আমার পূজা কর, তাহা হইলে এ সমস্তই3 তোমাকে দান করিব।” \ হঠাৎ তাহার মনে হইল, গত ব্যয় দিন'-এই একুই । প্রকার প্রলোভন তাহাকেও বশ করিতে চেষ্টা করিতেছিল। যীশুকে পাহাড়ের উপর লইয়া গিয়া পরীক্ষাকারী ' দেখাইয়াছিল যে তাহার ক্ষমতা ও 'ঐশ্বৰ্য্য কত ! সে বলিয়াছিল—“তুমি যদি নীরব থাক তাহা হইলে চারি দিকে যাহা দেখিতেছ তাতার সমস্তই তোমাকে দান করিব।” গুডমুণ্ড এই কথা স্মরণ করিয়া এবার শান্তি বোধ করিতে লাগিল। খ্ৰীষ্ট বলিয়াছিলেন—“আমি ত বলিয়াছি, আমি ইহা চাই না।” তখন গুডমুণ্ড ভাবিল যে তাহার নিজের দোষ লুকাইয়া রাখিলে ফল কি হইত। খ্ৰীষ্ট যদি নীরব থাকিতেন, তাহা হইলে তাহাকে শয়তানের পূজা করিতে হইত ; শুধু ধনসম্পদের দাস হইয় তাহাকে থাকিতে হইত। কখনও তিনি নিজেকুে মুক্ত পুরুষ মনে করিতে পারিতেন না। ’ w গুড়মুণ্ডের মনে গভীর শান্তি আসিল, নিজের স্বীকারোক্তির জন্য সে আনন্দিত হইল । গত কয় দিনের ঘটনার কথা স্মরণ করিয়া তাহার মনে হইল, যেন এতদিন সে চোখ বুজিয়া গভীর অন্ধকারের দিকে যাইতেছিল। তাহার মনে প্রশ্ন জাগিল, কেন সে সেই পথ ছাড়িয়াছে । সে ভাবিয়া দেখিল, পরিবারভুক্ত সকলের প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার ও হেলগার শুভেচ্ছাহ তাহাকে এই পথ ছাড়িতে সহায়তা করিয়াছে । সে শরীরকে হেলাইয়া দিয়া আরও কিছুক্ষণ চুপ করিয়া কাটাইল । তার পর এক সময় তাহার মনে হইল, এইবার বাড়ী ফিরিয়া মাকে বলিতে হইবে, আমার মন এখন সম্পূর্ণ শাস্ত হইয়াছে। যাইবার জন্য সে উঠিয়া দাড়াইয়াছে, এমন সময় দেখিল, হেল্গা শিখরের নীচে সমভূমির উপর বসিয়া আছে। হেলগা যেখানে বসিয়াছিল সেগান হইতে চারিদিকের সমস্ত দৃশ্য চোখে পড়ে না, শুধু পাদদেশের কতক অংশ দেখা যায়। নেরবুদাও ঐদিকে, হয়ত সে নেবুলুন্দার কৃষিক্ষেত্রের কতক অংশ দেপিতে পাইতেছিল । সারাট সকাল গুডমুণ্ড অবস্থাবিপৰ্য্যয়ের মধ্যে নানা অশাস্তিতে কাটাইয়াছে, কিন্তু এখন হেল্গাকে দেখিতে পাইয়া তাহার সমস্ত হৃদয় আনন্দে নাচিয়া উঠিল । সে দৌড়িয়া নামিবে ভাবিয়াছিল, কিন্তু হঠাৎ বিস্ময় বিষ্টের মত থামিয়া গেল । সে মনে মনে ভাবিতে লাগিল—“আমার কি হইয়াছে ! আমার কি হইয়াছে ?” তাহার শরীরের সমস্ত রক্ত যেন চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে, তাহার মনের বিপুল আনন্দ আকস্মিকতা ও আতিশয্যে প্রায় বেদনার পর্য্যায়ে