পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫికారి চান করান, থাইয়ে দেওয়া, সব লক্ষ্মী কাছে বসে লক্ষ্য করলে। পরের দিনই আমার জর সেরে গেল । হাতের ব্যথাও ক্রমে সেরে এল। কিন্তু লক্ষ্মীর কাতে জর আমার কোন দিনই সারল না আর হাতের ব্যাথাও ভাল হ’ল না, গায়ে হাত দিয়েই বলে, *উঃ গরম, আজ গাঙে যায় না। এস ছেলে তোমার মাথা ধুইয়ে দি ” ওর খেলবার ছোট মাটির ঘটটায় ক’রে জল এনে এনে আমার মাথা ধুইয়ে দেয়. একদিন ত কানের মধ্যেই খানিকটা জল ঢেলে দিল। মহা মুস্কিল ! ওর রান্না-করা অন্নব্যঞ্জন আমি পারব না । নিজে হাত দিয়ে খেতে বাঃ রে, আমার হাতে যে ব্যথা, আমি কি ক'রে থাব হাত দিয়ে ? ও আমাকে নিজে থাইয়ে দেবে তবে হবে । ইদুরের মাটি হাতে ক'রে ও বলে, “সোনা, লক্ষ্মীছেলে ই কর, হুঁ কর।” মহা বিপদ ! ওর ঐ পরমান্ন যদি ই ক’রে গিলতে হয় তবেই হয়েছে ! বন্ধুরা আমার পরম শত্রু বলে, *একবার প্রাকৃসি ক’রেই দেথ না, মাটি খেয়ে পেট ভরাতে শিথলে ভবিষ্যতে কোন দিন আর অন্নাভাব হবে না । শুনেছি কোন সাধু নাকি সাড়ে তিন-শ বছর বেঁচে ছিলেন শুধু মাটি খেয়ে ।” আমি বলি, “তোমরা তার চেয়েও দীর্ঘজীবী হবে তবে মাটি থেয়ে নয়, গাজী থেয়ে ।” আমাকে কাছে নিয়ে না শুলে ও কিছুতেই ঘুমবে না । কি দুপুরে কি রাত্রে আমাকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে ও নিজে ঘুমিয়ে পড়ে। বাড়ীর সবাই নিশ্চিস্তে মজা দেখে। লক্ষ্মীকে একটি মানুষ-পুতুল জুটিয়ে দিয়ে মাসে মাসে ওঁদের পুতুল-কেনার খরচ বেঁচে গেছে । তা ছাড়া ঝঞ্জাটও পোহাতে হয় না কিছু । আমি মনে মনে বলি, “এ আর ক'দিন । আর দিনপনরর মধ্যেই ত আমার স্কুল খুলবে, তখন এর মজা প্রত্যেকেই টের পাবে।” সত্যি, লক্ষ্মীর আদর-যত্ন ক্রমশ: এতই বেড়ে উঠতে লাগল যে আমি দিন গুনতে লাগলাম কবে আমাদের স্কুল খুলবে আর কবে পালাতে পারব। বাড়ীর আর সকলের প্রবাসী ১৩৪৪ কি, তারা সব পরম আরামে, সকৌতুকে চেয়ে দেখছেন, লক্ষ্মীর ছেলেকে নিয়ে লক্ষ্মীর গৃহিণীপনা। শুধু আমারই প্রাণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্ষাকালে আমাকে ভাঙ্গায় থেকে পড়তে হ’ত । সদরদী থেকে ভাঙ্গ যেতে হ’লে বর্যাকালে নেীক ছাড়া কোন উপায় নেই। আমাদের গ্রাম থেকে ছাত্রদের নৌকা অবশু অনেকই ধায় । কিন্তু সে-সব নৌকায় যেতে দিতে আমাদের বাড়ীর সবারই ভয়ানক আপত্তি। কখন ডুবেঢ়বে বাবে ঠিক কি ! তাই আমি বর্ষার কয়েকট মাস ভাঙ্গায় শু্যামাপদ বাবুর বাসায় থেকে স্কুলে যেতাম । একদিন দুপুর বেলায় লক্ষ্মী তার দহিয়ে ঘুম ছেলেকে থাইয়ে পড়াতে পাড়াতে নিজে একটু ঘুমিয়ে লক্ষ্মীর বাড়ার চাকরকে ডেকে বললে, “সং রঞ্চি, বিছানা আর নিচ্ছে, হঠাৎ ছেলের ঘুম ভেঙে গেল এবং বইয়ের বক্সট নৌকায় তোল, আমি জামটি নিয়ে আসছি ।” আগে থেকে ই সব প্রস্বত্র ছিল । আর কাৰ্ত্তিক দেউড়ীকে দিয়ে একটা বড় রকমের মাটিৰ পুতুলণ্ড গড়িয়ে রাথ! হয়েছিল আমার বদলী-স্বরুপ । কাস্ত একfদল ভাঙ্গায় ঠাট করতে এল ; ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “লক্ষ্মী বুঝি খুব কেঁদেছিল সেদিন, না ? আজকাল ওকি খুব কাদাকাট করে আমার জন্থ' ?” ও বললে, “সেদিন তোমরা হযুৎ প্রাহীদের ঘাটও তথন ছাড়াও নি, ও পটু ক'রে জেগে উঠল । একবার ডান পাশে হাত দিয়ে পরে বা পাশে হাত বুলিয়ে গভীর বিস্ময়ে বললে, "বাঃ রে ছেলেটা গেল কোথায়!" আমি সেখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর ভাবভঙ্গী দেখছিলাম, হঠাৎ আমার দিকে চেয়ে বললে, “দেখেছ রাঙা কাক, ছেলেট কি দুষ্ট, আমি একটু ঘুমিয়েছি অমনি উঠে পালিয়েছে ; দেখি কোথায় গেল । রোদুরে রোদরে শুধু ঘুরে বেড়াবে। এত দুষ্ঠু ছেলে !" আমি কোন রকমে হাসি চেপে বললাম, “নী রে, ছেলে তোর খুবই শাস্ত। মোটেই রৌদ্রে ঘুরে বেড়ায় না। দেখ, গিয়ে দক্ষিণ ঘরের বারান্দার এক কোণে চুপ ক'রে দাড়িয়ে রয়েছে।” লক্ষ্মী তৎক্ষণাৎ ছুটে গেল । আমরা একটু শঙ্কিত হয়ে উঠলাম, হয়ত বা ফাকিটা ধরা পড়ে যায়। আর কেউ