পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাষ্টমী শ্রীতারাপদ রাহা গড়াই হইতে আরম্ভ করিয়া নবগঙ্গা পধ্যস্ত জলে একাকার হইয় গেছে । গড়াইয়ের জল কুমারে, কুমারের জল নবগঙ্গায় মিশিতেছে। এক দিন যে এ পৃথিবীতে সবুজ তৃণ ও ধূসর মাটির পথ ছিল লোকে সে কথা প্রায় ভুলিতে বসিয়াছে । মেয়েদের জল আনিতে আর নদীতে যাইতে হয় না, বাড়ীর পাশে যেখানে একটু বেশী নীচু,সেইখানে আর একটু খুড়িয় কলসী ভরিবার ও স্নামের জায়গ করা হইয়াছে । যাহাদের বাড়ীর পাশ দিয়া ‘নয়ন-জুলি’ গিয়াছে তাহদের আবার একষ্ট৪ করিতে হয় না, তাহারা নয়ন-জুলিতেই কলসী ডুবাইয়া জল ভরে, নয়ন-জুলিতেই স্নান করে আবার মাছ ধরিতে সেইখানেই বিত্তি’, ‘বেনে’, ‘দোয়াড়ি' পাতে । দক্ষিণে মাঠের দিকে যেখানে বিল আসিয়া চাষীদের বাড়ীর উঠানে গা ঢালিয়া দিয়াছে সেখানে লোকে তালের ডোঙায় যাতায়াত করে, যাহাদের ডোঙ্গা নাই তাহারা বড় বড় কলাগাছ কাটিয়া বঁাশের গোজ দিয়া ভেলা তৈয়ার করিয়া লইয়াছে ; বঁাশের লগি ঠোকরাইয়া ঠোকরাইয় তাহাতেই এবাড়ী ওবাড়ী যায়, তাহাতেই হাট করিয়া ফিরে । বড়দের অবর্তমানে ছোটর ভেলা ও ডোঙা লইয়া গলিতে গলিতে খেলা করিয়া বেড়ায়, এত বড় বস্তাতেও তাহাদের রক্ত ঠাণ্ডা হয় নাই । কিন্তু বড়দের রক্ত একেবারে ঠাণ্ড হইয়া যায়—যর্থন তাহারা তাকায় মাঠের দিকে । এত বড় যে বিল—‘বড় বিলে—তাহাতে একটু সবুজের আভা নাই, গো-বিলে,— ‘গড়ের-মাঠ–পদ্মবিলে—সবই জলের তরঙ্গে ধূ-ধু করিতেছে। মাঠের এত বড় বৈধব্যের বেশ গ্রামের অতিবড় প্রাচীনেরাও না কি দেখেন নাই, এমন কি বাপঠাকুর্দার কাছে শোনেন নাই পৰ্য্যস্ত । ‘আকাল এবার হইবেই, সুতরাং যাহাঙ্গের একটু বয়স হইয়াছে তাহারা জলের দিকে তাকাইয়া নিজের আর আপন জনের পেটের কথা ভাবে । প্রতিদিন সন্ধ্যায় গিটওয়াল কঞ্চি পুতিয়া রাখা হয়, জলের সমতলে গিট ; কিন্তু সকালে দেখা যায় গিট ছাড়িয়া জল একটুও কমে নাই, মাঝে মাঝে বরং গিট ডুবাইয়া দেয়। চাষীরা মাথায় হাত দিয়া বসিয়াছে, আল্লা কি পানিই fদল । ভদ্র-গৃহস্থের ও শঙ্কার অস্ত নাচ, তাহাদের অধিকাংশের নির্ভর ঐ দক্ষিণের মাঠ, যাহদের স্বামী পুত্র বিদেশে চাকুরী করে তাহাদেরও তাকাইয়া থাকিতে হয় ঐ দক্ষিণের মাঠের দিকে, মুতরাং তাহারাও চিন্তিত । ছেলেমহলেও চিন্তার দুর্গাপূজায় আমোদ এবার একেবারেই হইবে না,—কলিকাত হইতে বরেন, স্বধীর, প্রতুল সবাই আসিবে, কিন্তু থিয়েটার হইবে কোথায় ? পঞ্চবটীর উঠানে ত এখন জল থইথষ্ট করিতেছে,—বাগচী-বাড়ীর উঠান ত এখন ‘বড়-বিলে’র একটি অংশ । রায়-বাড়ীর মেজবে শাস্তিলতার স্বামী বিদেশে চাকুরী করেন, তবু সেও চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছে । আজকাল্প ভ্র তার সব সময়েই কুঞ্চিত হইয় থাকে। বড়বে সেদিন তাহাকে সাস্তুনা দিবার জন্য নিতান্ত ভাল মনেই বলিয়াছিল, অত ভাবিস্ নে লে, মেজবে, জীব দেছেন যিনি আহার দেবেন তিনি,-আমার ত সোনার দ্যাওর, কিন্তু এ সারা গায়ের মাতুষগুলোর কথা ভাব দেখি একবার ! ঠোট উল্টাইয়। শান্তিলতা বলিয়াছিল, মাথার ঘায়েই কুকুর পাগল ; নিজের ভাবনা ভাবেই থলফুল পাই নে,— আবার সারা গায়ের ভাবনা ! এটুটা লোকের উপর এতগুলো লোকের পেট,—ভাবে দ্যাখে না । তোমার এটুট,-আমার চারডে—ঐ রোগ ভাস্কর,--আমর তিন fতনডে,-চালির দাম ত বাড়লো বুলে,—এত সব আ'সে ক'মতে ভাবে দ্যাখে না একবার ! বড়বেীয়ের স্বামী রসিকের পক্ষাঘাত হইয়া এক অঙ্গ পড়িয়া গিয়াছে, বঁ-হাত ও ব-পা তিনি নাড়িতে পারেন না, অস্ত নাই—জল যদি এমনিই থাকে তবে