পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nථිෂ9 প্রবণসী ১৩৪৪ আবার স্বীকার করে নিতে সে আগ্রহাম্বিত হবে তাই বা কে বলতে পারে ? শ্রীরামচন্দ্রের উত্তরাধিকারীর মন আধুনিক শিক্ষা যুক্তি এবং প্রেমের মুক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হ'লেও সীতাহরণের গ্লানি এবং অবসাদ বোধ করি সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারছিল না। তবু কমলার প্রতি তার অভ্যস্ত প্রেমের স্মৃতিপটে কমলার যে নয়নাভিরাম সৌন্দৰ্য্য এবং একান্ত নির্ভরপরায়ণ নারীর যে চিত্তগ্রাহী মূৰ্ত্তি অঙ্কিত ছিল এই অভিনব আবিষ্কারের রহস্যমধুধ্যে অন্তরে অস্তরে তার অাকর্ষণ প্রবল হয়ে উঠছিল । সে নিজের দ্বিধার দুৰ্ব্বলতাকে মনে মনে উপহাস এবং অস্বীকার ক’রে কমলার সন্ধানে ধাবার জন্য প্রস্তুত হ’তে লাগল। এই সমস্ত চিন্তা, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, উচ্ছ্বাস এবং মিলনের আয়োজনের অন্তরালে, সৰ্ব্বক্ষণ নিজের অজ্ঞাতে, পাৰ্ব্বতীর প্রতি তার স্নেহসরস চিত্তের আকাঙ্ক্ষা যেন বিসর্জন-বজনীর দূরাগত শানাইয়ের স্নিগ্ধকোমল স্বপ্নসম!চ্ছন্ন বেদনার স্বরের মত তার মগ্নচৈতন্যকে করুণরসধারায় আচ্ছন্ন ক’রে রইল ; কিন্তু সে কথা যেন আজ কিছুতেই সে স্পষ্ট ক'রে প্রত্যক্ষ করতে ভরসা পেল না । তবু তার মনের মধ্যে অপশ্ৰিয়মান যৌবনের দোলায় অতীত যুগের সমস্ত স্মৃতিসম্ভারপুর্ণ কমলার প্রতি তার প্রেম কমলার প্রস্ফরিত কমনীয় যৌবনলাবণ্যস্থতিকে আশ্রয় ক’রে ধীরে ধীরে তার দেহমনকে উন্মুখ ক'রে তুলছিল। কত দিনের কত তুচ্ছ কথা, কমলার একান্ত সমৰ্পিত প্রেম ও রূপের কত অপরূপ ছন্দোবিলাস, তার সস্তানের তরুণী জননী কমলার সলজ্জ খাবেশতৃপ্ত আননের স্নিগ্ধকোমল অরুর্ণিমা, নিশ্চিন্থনির্ভরে উৎসর্গিত পূজার পুষ্পাঞ্জলির মত তার দেহমনহৃদয়ের পবিত্র সৌরভ যেন ক্রমে ক্রমে শচীন্দ্রের চিত্তে তার আসন্ন মিলনের আকাঙ্ক্ষাকে সজীব ক'রে, উদগীব ক’রে তুলতে লাগল । তার দ্বিধা শঙ্কা সঙ্কোচ আত্মাভিমান দক্ষিণ-পবন-স্পর্শে মেঘের মত অপসারিত হয়ে গেল । আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রসাধনের অবকাশে সে আঞ্জ প্রথম খেন লক্ষ্য করলে তার কপালের রেখা, বিস্তৃত গভীর তার চোখের নিম্প্রভ সঙ্কুচিত দৃষ্টি, সমস্ত মুখের উপর তার আসন্ন যৌবন-বিদায়ের স্বনিশ্চিত ছায়া। একটা স্নান হাসিতে তার মুখটা একটু করুণ হয়ে এল। বেশবাসের প্রতি অতিরিক্ত অমুরক্তিপ্রস্থত কুরুচি তার কোন কালে ছিল না ; কিন্তু আজ বিশেষ যত্নে মুখের অবসন্ন যৌবনের কালিম দূর করে মধ্যের এই কয়েক বৎসর কালের নিষ্ঠুরতার চিহ্ন সে মুছে ফেলতে চায়। বলতে চায় যেন এখনও বিদায় নহে, রহ বন্ধু রহ ক্ষণকাল হে মোর যৌবন। বৃদ্ধ ভোলানাথ তার বাবুর কথায় একটুও কান দেয় নি। আজ তার পক্ষে তার জীবনের সব চেয়ে বড় আনন্দের দিন। এত বড় উৎসব শচীন্দ্রের বিবাহের দিনও তার কাছে মনে হয় নি। আজ প্রথম দর্শনেই সে খোকনবাবুর মনোহরণ করবার উচ্ছ্বসিত আশায় তার সব চেয়ে মূল্যবান রঙীন পোষাক সে পরেছে। মাথায় ফিরোজ রঙের পাগড়ী, ধোপদ্ধরস্ত কাপড়ের উপর সাদা সাটিনের আচকনি, ( পায়জামা সে কোনকালে পরতে পারে না ), শুড়তোলা নাগরা । হাতে একটা রূপার্বাধানো সোট—দেখলে হঠাৎ একটা পশ্চিম রাজারাজড়ার মত মনে হয় । তার প্রকাগু দেহও আজ যেন আর কাজ দেখায় না । শচীন্দ্র তাকে দেখে হেসে ফেললে, “ও কি ভোলাদা, করেছ কি, তোমার বেীম তোমাকে চিনতেই পারবে না যে ! ভাববে কোন রাজ্যবাদশাই বা এল হঠাৎ ৷” ভোলানাথ সগৰ্ব্বে বললে, “চিনবে না কি ! হবে যে। আর আমরা সফর মাত্য ; তা পরের বাড়ী যাচ্ছি, তারা একবারটি চোথ মেলে দেখুক যে কেমন বাড়ীর বেীরে তারা ঘরে ঠাই দেবার ভাfগ্য পেয়েছে। ঘরে ঠাই দেওয়া, সে কি সোজা কথা বাবু?—ম আমার রাজরাণী।” শচীন্দ্ৰ মনে মনে হেসে ব্যাপারটি বুঝল ; আর কথা বাড়াল না। তার রাজরাণী বোমাকে যে লোকের সামান্য ভেবে কৃপা ক’রে আশ্রয় দেবার স্পদ্ধ রাখবে এ তার পক্ষে চিনতেই অসহ । তাই আশ্রয়দাতার স্পৰ্দ্ধার বিরুদ্ধে এ যেন তার যুদ্ধসাজ । একটা ট্যাকৃসি ক’রে দুজনে বেরিয়ে পড়ল । ভোলানাথের উৎসাহ যেন বধি মানতে চাইছে না। কি ক'রে এক মুহূৰ্বেই থোকনবাবুর মনটা জয় ক'রে তার পূর্ব গৌরব প্রতিষ্ঠিত রাখবে এই তার এক সমস্তা। সামনের