পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলখ-ঝোর শ্রীশান্ত দেবী s & গহনার দোকালে নামিয়া গহনার বাক্ষাগুলি খুলিয়া নাড়িয়াচড়িয়া হৈমন্তী একেবারে তন্ময় হইয় গেল। মহেন্দ্র বলিল, “তুমি কবিতা পড়, লুকিয়ে লেখও কিছু কিছু এই ত জানতাম । গহনার যে তুমি এত ভক্ত তাত জানতাম না। বাহিবে যে যেমনই দেথাক্‌, দ্বীলোকের এক জায়গায় সব এক রকম। শুধু গহনার গল্প করে আর গহনা দেখেই তারা এক যুগ কাটিয়ে দিতে পারে।” হৈমন্ত্রী সে কথায় কান না দিয়া একটা মস্ত সরস্বতী-হার দুষ্ট হাতে তুলিয়া ধরিয়া বলিল, “মহেন্দ্র-দ, Isn't it a heauty ?” তারের দিকে তিন-চার মিনিট সে একদুষ্টে তাকাষ্টয়া রহিল। মহেন্দ্র বলিল, “মুন্দর বটে, তবে তোমার চোখ দিয়ে ত আমি দেখতে পাই না । জানি না তোমরা এক তাল সোন কি এক সার মুক্তোর ভিতর কি খুঁজে পাও। হৈমন্তী বলিল, “work of art তারিফ করতে হ’লে মনটাকে তেমনি করে তৈরি করতে হয় । আগে থেকেই গহলাব প্রশংসায় সীজনোচিত দুৰ্ব্বলতা আছে মনে ক’রে চোপ বুজে থাকুলে দেখতে পাবেন কি ক’রে ?” মহেন্দ্র বলিল, “তোমার এই হারটা ভয়ানক ভাল লেগেছে দেখছি, পেলে একটা নাও ?” হৈমন্তী বলিল, “নিশ্চয়, একশ বার নিই।” মহেন্দ্র একটু মিষ্ট ঠাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, “আচ্ছ, দেখি আমি একটা দিতে পারি কি না।” হৈমন্তী মুখটা লাল করিয়া বলিল, “থাক, আপনাকে আর আমায়ু সরস্বতী-হার দিতে হবে না।” গহনা লইয়া তর্কবিতর্কে তপন বিশেষ যোগ দিতে পারিতেছিল না। বাক্সগুল গাড়ীতে তুলিয়া সে বলিল, “আমার ইস্কুলে জন কতক বাইরের লোককে দিয়ে মাঝে মাঝে কিছু বলাব ঠিক করেছি। আজ তাদের সঙ্গে আমাকে একবার দেখা করতে হবে। আমি সে কাজটা সেরে রাত্রে খাবার সময় ঠিক এসে যথাস্থানে হাজির হব। আমাকে থানিক ক্ষণের জন্য মাপ করবেন ।" তপন গাড়ী ছাড়িয়া পায়ে স্থাটিয়াই চলিয়া গেল । মহেন্দ্র গাড়ীতে উঠিয়া বলিল, “আচ্ছ, গাড়ীটা যদি এক চকর গড়ের মাঠ দিয়ে ঘুরে যায়, তোমার আপত্তি আছে ?” হৈমন্তী মহেন্দ্রের মুখের দিকে তাকাইয়া বলিল, “ন, আপত্তি ঠিক নেই, কিন্তু প্রয়োজন কি ?” মহেন্দ্ৰ যেন একটু রাগিয়াই বলিল, “প্রয়োজন আমার এই মাথাটাকে একটু ঠাণ্ড করা। তোমরা ত অামাকে নারদ মুনি ব'লে নিশ্চিস্ত, কিন্তু আমার ঘাড় থেকে তিক্ত রসের বোঝাট নামাতে ত কাউকে একটু চেষ্টা করতে দেখলাম না ।” হৈমন্তী অপরাধীর মত মুখ করিয়া বলিল, “আমি কি করব বলুন না, মহেন্দ্র-দ, আমি ত কোন অন্যায় জেনেশুনে করি নি।” মহেন্দ্র তৈমষ্ঠীর মুখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল, “অন্যায় কর নি বটে, কিন্তু ন্যায়ই বা কি করেছ ? আমি যে একটা মাত্য পৃথিবীতে আছি, তোমাদের দরজায় রোজ এসে ঘুরছি, তা তোমরা কি একবার দেখতেও পাও না ? কবিতা পড়ে এই বুঝি মামুষের মন বুঝতে শিখেছ ?” হৈমন্তী চুপ করিয়া মুখ নীচু করিয়া রহিল। মহেন্দ্র জোর দিয়া বলিল, “বল না, তোমারও কি আমাকে একটা ঝগড়টে তাকিক ছাড়া আর কিছু মনে হয় না ? আমি ত তোমাকে কত দিন ধরে পড়িয়েছি, কত কাছে থেকে তুমি আমায়ু দেখেছ, তখন কি আমি কেবল ঝগড়াই করতাম ? তার চেয়ে ভাল কোন গুণ তুমিও কি আমার মধ্যে দেখ নি ? হৈমন্তী সহস্যে বলিল, “ও কি কথা মহেন্দ্র-দ, আপনি