পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রণষণ কাৰ্য-বিচারের নিকষ-পাথর ہجسb� দিয়ে পাঠকের হৃদয়কে যুদ্ধ করাই কবিতার একমাত্র কাজ নয়। কথার যাদু বলতে ভাষার সেই অনিৰ্ব্বচনীয় শক্তিকেই বোঝায় যার স্পর্শে আমাদের মনে জাগে স্বতীব্র চেতনা । যাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের মন ছিল অচেতন, ভাষার তাড়িত-স্পর্শে অকস্মাং তারা আমাদের চেতনায়ু জীবন্ত হয়ে দেখা দেয়। শব্দের সোনার কাঠি ছুইয়ে কবি আমাদের অহঙ্কৃতিকে পরেন জড়তা থেকে মুক্ত। যে-ছবি কখনও চোখ মেলে আমরা দেখি নি, ধে-গান আমরা কান পেতে কখনও শুনি নি—বাক্যের মেরু-জ্যোতিকে আশ্রয় করে আমাদের চিত্তলোকে তার অপূৰ্ব্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে । তার পর থেকে যত বার আমরা সেই ছবি দেখি, সেই গান গুনি, তত বা আমাদের মনের মধ্যে গুaারত হয়ে ওঠে কবিতার সেই চরণগুলি যার। অনাবিষ্কৃত জগতের স্বারোদঘাটন ক’রে প্রকৃতির সৌন্দর্ঘ্যের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় ক’রে দিয়েছিল । আমাদের বক্তব্য বিষয়টিকে আরও স্বম্পষ্ট করবার জন্ম এখানে রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে কিছু কিছু দৃষ্টাৰ দেওয়া গেল । 'বর্ষামঙ্গল' নামক বিখ্যাত কবিতাটির প্রথমেই আছে— এ আসে ঐ অতি ভৈরব হরযে জলসিঞ্চিত ক্ষিতিসৌরভ-ব্লভসে ঘনগেীরবে নবযৌবন বরব। শুামগম্ভীর সরসী । শুক্রগঞ্জনে নীপমঞ্জরী শহরে, শিধীদম্পতি কেকা-কল্পোলে বিহরে । খিৰুচিত হবৰ ঘন গৗরবে আসে উন্মদ বরষ । এখানে শব্দের অপূৰ্ব্ব ঐশ্বধ্য আমাদের অস্তরে পুলকের শিহরণ জাগিয়েই আপনার ক্ষমতাকে নিঃশেষ ক'রে ফেলে নি। নববর্ধার রূপের একটি বর্ণনা দিয়েই ভাষার শক্তি এখানে লুপ্ত হয়ে গেল না। শব্দের সমারোহকে অবলম্বন করে নূতন বর্ষার এমন একটি মূৰ্ত্তি আমাদের চিন্তুপটে অস্থিত হয়ে রইল যা কোন কালেই মুছবার নয় । ‘বলাঙ্কা'র এই কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত ক’রেও আমাদের বক্তব্য বিষয়টি আরও পরিষ্কার করতে পারি— শূন্ত প্রাস্তরের গান বাজে ওই এক ছায়াবটে ; মদীর এপারে ঢালুতটে চাষী করিতেছে চাষ ; উড়ে চলিয়াছে ভাস ওপারের জনশূন্ত তৃণশূন্ত বালুতীরতলে । চলে কি ন চলে ক্লাস্তুশ্ৰোত শীর্ণ নদী, নিমেষ-নিহত আাধ-জাগ লয়নের মত । পথখানি ৰাক। বহুশত বরষের পদচিহ্ন জাকা চলেছে মাঠের ধারে—ফসল-ক্ষেতের ধেন মিত নদাসাথে কুটরের বহে কুটুম্বিত । এখানে নববর্ষার ছবির পরিবর্তে আর একটি ছবিকে কবি ইন্দের সাহায্যে আমাদের মনের মধ্যে জীবস্ত করে তুলেছেন । আগের কবিতায় মেঘের শুরুগর্জন, নীপমঞ্জরীর শিহরণ, শিথীদম্পতীর কেক-কল্লোল, ভিজে মাটির সৌরভ প্রভৃতি নানা উপাদানসম্ভার নিয়ে নবীন বর্ষার পরিপূর্ণ রূপ আমাদের চিত্তকে অধিকার করেছিল। পরবর্তী কবি ভার চরণগুলিতে যে-ছবি অঁাকা হয়েছে সেখানে আছে ফসলের ক্ষেত, জনহীন বালুচর, উড়ন্ত বুনে ইাস, দিগন্তব্যাপী প্রান্তরের নিঃসঙ্গ ছায়াবট, বহুবর্ষের পদচিহ্নআঁকা পথখানি এবং আধজাগ নয়নের মত শীর্ণ ও ক্লাস্তস্রোত নদীটি। এই সমস্ত দৃগুকে আশ্রয় ক'রে এমন একটি সম্পূর্ণ চিত্র আমাদের মনশ্চক্ষের সম্মুখে মূৰ্ত্ত হয়ে উঠল যা একেবারেই উপেক্ষার বস্তু নয়। প্রকাশের অনিন্দনীয় ভঙ্গিমা পাঠকের মনে আনন্দের হিল্লোল তুলেই আপনার ক্ষমতার পুজিকে নিঃশেষ হ’তে দিল না। বঙ্গদেশের পল্লী-অঞ্চলের যে-দৃশুটি এখানে ফুটে উঠেছে তাও “গরুর দুটি শিং, একটি লেজ এবং চারিটি পা আছে" এই কথাসমষ্টির মত একটি বর্ণনা মাত্র নয় । বর্ণনা এখানে মনের উপরে এমন একটি ছাপ রাখে যা মুছে ফেলা কঠিন । একদা ফাঙ্কনের কোন অপরাহ্লবেলায় পদ্মার বুকে চলড়ে চলতে যে-ছবিখানি কবির মনের মধ্যে জাগিয়েছিল অপূৰ্ব্ব একটি অনুভূতি সেই ছবিখানিকে তিনি ছন্দের মধ্যে রেখে দিলেন শাশ্বত ক’রে । কথার এমন যাদু দিয়ে পল্লীর এই নিভৃত রূপটিকে তিনি রচনা করলেন যে সেই রূপ শুধু একটি বর্ণনা হয়েই রইল না। কবিতার চরণগুলি পাঠ করবার সঙ্গে সঙ্গেই পদ্মার তটভূমি, তার খেয়াঘাট আর নীল নদীরেখ, শূন্ত মাঠ