পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন হয়েছিল এই যে, র্যাকে দেখে ওর শ্রদ্ধা হয়েছিল তিনি ওকে মোটেই আমল দিচ্ছিলেন না ; এমন বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন যে সে চেষ্টা করেও তার কাছে বসে থাকতে পারছিল না—তবু সে আশা ছাড়ে নি। সঙ্কোবেল সিতাংশু গঙ্গার দিকে যাচ্ছিল । সারাদিন সে কিছু খায় নি, খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তার সামনে দিয়ে দু-জন লোক চলছিল। আগে তারা অনেক দূরে ছিল কিন্তু এত আস্তে আস্তে যাচ্ছিল যে সিতাংশু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ঠিক পিছনে এসে পড়ল। তার খুব আস্তে আস্তে কথা বলছিল কিন্তু সিতাংশুর বুঝতে একটুও অসুবিধে হ’ল না। তারা দু-জনেই বাঙালী, এক জন সুট পরে ছিল । স্কট-পরা লোকটি বললে, “সাধুজী কুম্ভে এসেছেন অথচ ঐ রকম নির্জন জায়গায় রয়েছেন কেন বল ত ? সাধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেন না ?” “করেন কি না-করেন কি ক'রে বলব বল ? ওঁর কতটুকুই বা জানি ? হয়ত রাত্রে যাওয়া-আসা আছে।” “তুমি যখন প্রথম-প্রথম ওর ক্ষমতার কথা বলতে, আমার মনে হ’ত তোমায় যাদু করেছে ।" “সেই জন্যেই তোমায়ু নিয়ে গেলাম । কি আলৌকিক ক্ষমতা ।” “বাস্তবিক, চোখের সামনে লোহার চাকাটা সোনার হ’য়ে গেল, এ যে ধারণাও করা যায় না।” কথাটা বলেই ভদ্রলোকটি একটা সোনার চাকা পকেট থেকে বার করলেন । অপর লোকটি বললে, “এবার বিশ্বাস কর ত, তোমার সম্বন্ধে তোমায় ন-দেখে সব কথা বলা ওর সম্ভব ?” “নিশ্চয়।” “মজা কি জান ? তোমার মত যারা অবিশ্বাসী উনি কেবল তাদের কাছে ঐ রকম এক-একটা অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় দেন একবার মাত্র।” সিতাংগুর পক্ষে আর চুপ করে থাকা অসম্ভব হ’ল। সে এগিয়ে এসে বললে, “ক্ষমা করবেন, আপনাদের কথার কিছু কিছু কানে এসেছে। সাধুজীর ডেরাট আমায় ব’লে দেবেন ?” লোক দুটি সিতাংশুকে দেখে চমকে উঠেছিলেন, বললেন, “আঞ্জে সেটা ঠিক হবে না । তিনি বিরক্ত হবেন ।”

  • আমি তাকে বিরক্ত করব না । কুম্ভের প্রায় সব সাধুকেই দেখলাম, তাকেও দেখবার ইচ্ছে হচ্ছে।"

স্বট-পরা লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি সংসার جة اث سددناه لا দেখলে ত ষার লাগি তোর--- じ〜3。 ত্যাগ করেছেন ? আশা করি জিজ্ঞেস করলাম বলে কিছু মনে করবেন না ।”

  • আজ্ঞে না, মনে কিছু করব না। হা, সংসার প্রায় এক রকম ছেড়েই এসেছি ।”

“আপনার মত লোক গেলে সাধুজী নিশ্চয় বিরক্ত হবেন না । আচ্ছ, আপনি এক কাজ করুন । কাল সকালে এই জায়গায় ঠিক সাতটার সময় আসবেন, আমরাও যাব, আপনাকে নিয়ে যাব ।” নমস্কার ক’রে সিতাংশু এগিয়ে চলে গেল । 豪 孕 擎 শহরের বাইরে বেশ নির্জন স্থানে স্বামী জটিলানন্দের অস্তায়ী আশ্রম স্বামীজী সুখদুঃখবোধের বাইরে গ্রেলেও প্রাকৃতিক সৌন্দধ্যের প্রতি একেবারে উদাসীন নন তা বেশ বোঝা যায় । চেলা-সঙ্ঘের বালাই নেই, একটি মাত্র লোক তার সঙ্গে আছে দেখা গেল । স্বামীজীর চুল আর দাড়ি ধবধবে সাদা, কিন্তু মুখের দিকে তাঙ্কালে মনে হয় বয়স বেশী হয় নি । সিতাংশু ভাবলে এই ত আসল সন্ন্যাসী । স্বামীজীকে দেখে তার অস্তিরিক শ্রদ্ধা হচ্ছিল । সিতাংগু আর তার গত রাত্রের চেনা লোক দুটি স্বামীজীকে প্রণাম করতে তিনি হাত তুলে আশীৰ্ব্বাদ করলেন, তার পর সিতাংশুকে কাছে ডাকলেন । স্বামীজী ইসারা করতে পিছনের লোক দু-জন চলে গেল। সিতাংগুকে বললেন, “ক’দিন ত খুব ঘুরলে, কি পেলে ?” সিতাংশু আশ্চৰ্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করলে, “আপনি সে কথা জানেন ?” “কিছু কিছু জানতে পারি, যা তিনি দয়া করে জানতে দেন তার বেশী জানতে চেষ্টাও করি না।” “ঠাকুর, আমি হতাশ হই নি। দুঃখ দিয়ে তিনি পরীক্ষা ক’রে নেন, এ-কথা আমি বিশ্বাস করি।” “ঘর ছেড়ে যে বাইরে এলে, মনে কর কি ঘরের জন্যে কথনও মন র্কাদবে না "ি “আজ্ঞে না ।” “তোমার ত খুব সাহস দেখছি। আমি ত তোমায়ু সাহায্য করতে পারব বলে মনে হয় না। পুৰ্ব্বগ্রামের জন্ম এখনও মাঝে মাঝে মন চঞ্চল হয় ।” “আপনার কথা ত কিছুই জানি না, কিন্তু আমার ত কোন বাধন নেই ।” “বোনের বিয়ে হয়ে গেলেই কি বাধন খুলে যায় ?” সিতাংশুর বিস্ময় ক্রমশঃ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল । স্বামীজী তা বুঝতে পেরে বললেন, “এতেই এত আশ্চৰ্য্য হচ্ছ ? এ ত খুব ছোট জিনিষ ; চেষ্টা করলে সবাইপারে।” - “আমি ঘরে ফিরতে অার চাই না।”