পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা] so দেখিয়া বুঝিতে তার বাকী রহিল ন যে, স্নেহময় দাদার তাহাকে অতিমাত্রায় চমৎকৃত করিবার জন্যই ঘূণাক্ষরেও তাহাকে কোনো কথা না জানাইয়া বই ছাপাইয়। ফেলিয়াছে । যাহা হউক, আত্মদোষ ক্ষালনের জন্য এবং কতকটা সত্য স্বীকারের জন্য সে মূছকণ্ঠে বলিল, “আমায় বৃথা দোষ দিচ্ছ। আমি কোনো কথাই জানি ন। দাদার। আমাকে কিছু ব’লে যায়নি ত ।” মেঝেয় সশব্দে জুতা কিয়া স্বামী কহিলেন, “ন্যাক সাজতে ভারি পটু। বলি সোহাগ ক’রে লেখাগুলি দাদাকে দিয়েছিলে, তবেই ত সে পেয়েছিল, না তার চুরি ক’রে নিয়ে গেছে ? ত৷ যদিই হয়, এখুনি তাদের আমি জেলে দিতে পারি। তাছাড়, এসব মাথামুণ্ডু তোমার লেখবারই বা কি দরকার ছিল, শুনি ? খেয়েদেয়ে কি আর কোনো কাজ পাওনি ? দুনিয়ায় যারা নেহাৎ হতচ্ছাড়া ভবঘুরে তারাই ব’দে ব’সে এইসব রাবিশ জিনিষ লেখে, আর পড়ে যারা তারাও এদেরই জুড়িদার।” একটি কথা ন কহিয়া নেলী নীরবে উঠিয়। স্বামীর স্নানাহারের ব্যবস্থা করিতে গেল । স্নানাস্তে আহারে বসিয়াই ডাক্তার মাছের ঝোল ভাতে মাখিয়৷ একগ্রাস মুখে দিয়াই ঝোলের বট ঠেলিয়া ফেলিয়া দিয়া কহিলেন, “হিন্দুস্থানী ঠাকুরে আর কত ভাল রাধবে ; বাড়ীর গিল্প লেখাপড়াতেই ব্যস্ত, এসব সংসারের কাজে চোখ দেবার তার অবসর কই ?” যাহা যউক, অতঃপর ডাক্তার আহারাস্তে বিশ্রাম করিতে গেলে নেলী আর-একবার তার প্রথম সাধনার ফল সেই বইখানিকে কোলে লইয়া বসিল । স্বামীর নিকট অপরিসীম লাঞ্ছনা-গঞ্জনার কারণ হইলেও, এই তার মানসজাত ভাবশিশুগুলির নবকলেবর তার মনে নূতন আনন্দের শিহরণ জাগাইতেছিল—সংসারের কাজকর্মের অবসরে, নিরালা রজনীর কৰ্ম্মহীন ক্ষণে, সে এগুলিকে কলমের মুখে ফুটাইয়া তুলিয়াছে। তার কল্পনাদৃষ্টি প্রত্যক্ষ-সংসারের পারপাখিক গণ্ডীকে অতিক্রম করিয়া কত কি দেখিয়াছে, অনুভব করিয়াছে । তাহারি চিত্র সে আপন মনে সরল ভাষায় লিখিয়া গিয়াছে, তাহাতে যে কুলনারীর কি মহিমা ক্ষুণ্ণ হয় তাহা সে বুঝে প্রকাশকের বিড়ম্বন৷ సిసిసి নাই,—চেষ্টা করিয়াও বুঝিতে পারে নাই । তাই স্বামীর কঠোর মন্তব্যগুলি স্মরণ করিতে করিতে তার ডাগর চোখ দুটিতে জল ভরিয়া আসিতে লাগিল । চার ডাক্তার ফুটপাথের উপর দাড়াইয়া প্রকাও সাইনবোর্ডের উপর লেখা “মিক্স এণ্ড রায়, পুস্তকপ্রকাশক, কলেজ ষ্ট্রীট মার্কেট” দেখিয়াই দোকানের মধ্যে ঢুকিয়। পড়িলেন, অৰ্দ্ধবয়স্ক একজন ভদ্রলোক টেবিলের সম্মুখস্থ চেয়ারের উপর বসিয়া নিকটেই উপবিষ্ট দুইজন ভদ্র লোকের সহিত কথা কহিতেছিলেন । তিনি ডাক্তারকে অভ্যর্থনা করিয়া কহিলেন,—“আম্বন মশাই কি বই চান ?” ডাক্তার কহিলেন,—“আজ্ঞে ‘কালীর আঁচড়’ বইখানা কি আপনার দোকানে পাওয়া যাবে ?” ভদ্রলোক কহিলেন, “পাবেন বৈ কি, খুব পাবেন। আমরাই এই বইখানার প্রকাশ ক—সোল এঞ্জেন্সি আমাদের হাতে। বহন মশাই—আর কিছু বই চাই ।” আজ্ঞে না, বলিয়া ডাক্তার বেঞ্চির একপাশে বসিয়৷ পড়িলেন, ইতিমধ্যে ভদ্রলোকদের একজন প্রকাশককে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, বইখানার বেশ কাটতি, মশাই। অথচ আপনি বলছিলেন এ বইখানি লেখিকার প্রথম রচনা, আর বয়সও তার বেশী নয়।” প্রকাশক কহিলেন, “সে সত্যি কথা । চেষ্টা করলে আর হাত পাকৃলে উনি একজন নাম-করা লেখিকা হ’তে পারবেন। এই দেখুন, আজকালকার ডাল (dull) বাজারেও ভিনমাসের মধ্যেই এ বই ছ’শো কেটে গেছে। স্বদেশী গল্প যে দু’টো লিখেছেন, খুব প্রাণ ঢেলে না লিখলে আমন লেখা কলম থেকে বেরোয় না ।” দ্বিতীয় ভদ্রলোক কহিলেন,—“খুব লেখাপড়া জানা, পাশ, টাস্ করা বোধ হয়—থাকেন কোথা ?” প্রকাশক কহিলেন,—“থাকেন শুনেছি মফঃস্বলে । কলেজেপড়া মোটেই নন। বাড়ীতেই লেখাপড়া শিখেছেন । এই নিন মশাই আপনার বই—দাম দেড়টাকা ।”