পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ ধারণ করিতেন না। বৈদ্যে কায়স্থে আদান-প্রদান হইত। এইসকল কারণে সকলেই শূন্ত্র বলিয়া পরিগণিত হইতেন । আর লৌকিক বিদ্যায় এবং ধন-সম্পত্তিতে ইহারাই শ্রেষ্ঠ ছিলেন। স্বতরাং ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা নিজেদের জীবিকার জন্য ইহাদের মুখাপেক্ষী হইয়। থাকিতেন । শুঞ্জের বাড়ীতে অন্নগ্রহণ করিলে ব্রহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব নষ্ট হয় ইহা আমরা কখনও জানিতাম না। আমাদের বাড়ীতে ফুর্গোৎসবাদিতে দেবতার নিকটে অন্ন-ব্যঞ্জনাদি ভোগ দেওয়া হইত। ব্ৰহ্মণেরাই ভোগ রান্ধিতেন এবং আমাদের পুরোহিতেরা নিঃসঙ্কোচে আমাদের বাড়ীতে দেবপূজা উপলক্ষে দেবতার প্রসাদ গ্রহণ করিতেন। কলিকাতা অঞ্চলে শুনিয়াছি ব্রাহ্মণের বাড়ীতেই কেবল দেবতাকে অন্ন ব্যঞ্জনাদি ভোগ দেওয়া যায় । কায়স্থ প্রভৃতি ব্রাহ্মণেতর জাতির নাকি এ অধিকার নাই। তারা কেবল দেবতাকে র্কাচ ভোগই দিতে পারেন। আমরা এ অদ্ভুত কথা শুনি নাই। আমাদের জেলায় এরূপ ব্রাহ্মণ্য-প্রভাব পূৰ্ব্বে কখনও ছিল না। কাগবশে এখন এই ভাবট। নব্যশিক্ষিত ব্রহ্মণদিগের মধ্যে গঙ্গাইতে আরম্ভ করিয়াছে । তবে “অশুদ্ৰ-প্রতি গ্রাহী" হইতে পারিলে ব্রাহ্মণের বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণত্ব যে রক্ষা পাহঁত এ কথাটা জানা ছিল, এবং এমন দুই একটি ব্রাহ্মণ পরিবার আমাদের অঞ্চলে ছিলেন, যাহারা “শুদ্রের অল্প” গ্রহণ করিতেন না। তবে ইহার সকলেই বিষয়ী ব্রাহ্মণ ছিলেন । ইহাদের ছোটখাট জমিদারী ছিল । টাকা লগ্নি করিয়াও অর্থ উপার্জন করিতেন। শ্রেষ্ঠ ব্ৰহ্মণের যে শাস্ত্রীয় ব্যবসায় বা কৰ্ম্মঅধ্যয়ন-অধ্যাপন, ইহারা তাহা অবলম্বন করিয়া সংসারযাত্রা নির্বাহ করিবার চেষ্টা করিতেন না । নিজেদের জমীদারীর জোরে ব্রাহ্মণ্যকে ঠেকা দিয়া রাখিবার চেষ্টা করিতেন । আমার বাল্যকালে কেবল একটি মাত্র ব্রহ্মণ পরিবারের কথা জানিতাম, র্যাহারা কায়স্থ-বৈদ্যদিগের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিতেন না ; বৃন্দাবনের স্ব প্রসিদ্ধ মোহাম্ভ ব্ৰজবিদেহী শাস্তদাস বাবাজী এই পরিধারের লোক ছিলেন। পূৰ্ব্বাশ্রমে ইহার নাম ছিল ঐযুক্ত তারাকিশোর চৌধুরী। ইনি আমার সতীর্থ ছিলেন। একই বৎসর ইংট্র গভৰ্ম্মেণ্ট ইস্কুল হইতে প্রবেশিক পরীক্ষা পাশ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩১ করিয়া আমরা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষ৯ লাভের জন্য আসিয়া ভৰ্ত্তি হই । তারাকিশোর-বাবুর। পরিবারের লোকে শূত্রের অন্ন গ্রহণ করিতেন না। বেশ একটু জমিদারী তাহাদের ছিল, এবং কুসীদ-ব্যবসায়ও করিতেন বলিয়া ইহার “অশুদ্ৰ-প্রতিগ্রাহী" হইতে পারিয়াছিলেন। এরূপ আরও দু পাচটি বিষী ব্রাহ্মণ, পরিবাবু ছিলেন, যাহার শূত্রের দান গ্রহণ করিতেন না। এ ছাড়া শ্ৰীহট্টে প্রায় সকল ব্রাহ্মণই শুভ্ৰ-মুধাপেক্ষী ছিলেন । অন্ন-ঋণ ব্রাহ্মণেতর ভদ্র লোকদিগের নিকটে আবদ্ধ হইয়া ইহার সে-কালে আমাদের সমাজে ব্রাহ্মণ, প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত করিতে পারেন নাই । যুজন-যাজন ব্যবসায় অবলম্বন করিয়াও ইহার অধিকাংশ স্থলেই সেই ব্যবসায়ের উপযোগী শিক্ষাও লাভ করিতেন না . পুজা-পদ্ধতির হাতে লেখা পুথি ইহাদের বাড়ীতে থাকিত। সেই পুথি মুখস্থ করিয়াই ইহারা যজমানদিগকে মন্ত্র, পড়াইতেন, নিজেরাও দেবতার পুজায় পৌরোহিত্য করিতেন। সংস্কৃত ব্যাকরণ বা অভিধানের সঙ্গে ইহাদের সম্পর্ক ছিল না বলিলেও হয়। বড় বড় ভদ্র লোকদিগের গ্রামের টোল ছিল । এসকল টোলে ভিন্ন গ্রাম হইতে ব্ৰহ্মণ বালকের। আসিয়া ব্যাকরণ এবং স্মৃতি পড়িতেন । কিন্তু র্যাহার টোলে পড়িয়া কোন উপাধি পাইতেন, তাহারা সাধারণ যঞ্জন-যfজন ব্যবসা অবলম্বন করিতেন, না। হয় নিজের টোল খুলিতেন, না হয় দুর্গোৎসবাদিতে সম্রাস্ত গৃহস্থের বাড়ীতে “তন্ত্ৰধারকের” কৰ্ম্ম করিতেন । এসকল বৃহৎ যজ্ঞাদিতে পুরোহিত ছাড়া এক একজন তন্ত্ৰধারক থাকিতেন । তন্ত্ৰধারকের পুরোহিতকে মন্ত্র, পড়াইয়া পূজার অধ্যাদি দেওয়াইতেন। এই সাধারণ, পুরোহিতেরা অতি অল্পই লেখাপড়া জানিতেন। পূৰ্ব্ব পুরুষদিগের সংগৃহীত পুথি মুখস্থ করিয়াই ইহারা পৈতৃক ব্যবসায় রক্ষা করিতেন । - ( Sb. ) ঐসকল অবলম্বনে নানা কৌতুককর গল্পেরও স্বট হইয়াছিল। একটা গল্প সেদিন ঐযুক্ত স্বন্দরীমোহন দাস মহাশয়ের মুখে শুনিয়াছি। এক ব্রাহ্মণ যুবক একবার