পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] সম্পাদকের চিঠি 8 o X উদ্যানাবলী, নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রভৃতির জন্য ড়ে সঙেন বিখ্যাত । আমরা রেলওয়ে ষ্টেশন হইতে প্রথমে গেলাম চিত্রশাল দেখিতে ; উহা মিউজিয়ুমের অন্তর্গত। চিত্রশালার প্রবেশদ্বারে প্রায় পৌঁছিয়াছি, এমন সময় একজন ফোটগ্রাফার চটুকরিয়া ক্যামের খাটাইয়া আমাদিগকে একটু দাড়াইতে বলিল। হয়ত সে ভাবিয়ছিল রবীন্দ্রনাথকে পাকড়াও করিয়াছে। ডাহা না হইলেও, সাড়পরিহিতা হিন্দুমহিলার ছবি তোলা ত তাহার ভাগ্যে হয় ত আর ঘটিবে না। সে ছবি তুলিয়া লইল; আমাদিগকে বালিনে একথান পাঠাইতে বলিয়াছিলাম, তাহা পাঠায় নাই । ড়ে স্ডেনের চিত্রশাগ, ইটালীর বাহিরে, ইউরোপের বৃহত্তমগুলির মধ্যে একটি। ইহাতে প্রায় ২৪০০ ছবি আছে ; অধিকাংশ শ্রেষ্ঠ ইটালীয় ও ফ্লেমিশ চিত্রকরদের অঁাক।। শ্রীমতী প্রতিম দেবী স্বয়ং চিত্রশিল্পী ; কোন ছবি তাহার বিশেষ ভাল লাগিলে আমাকেও দেখিতে বলিতেছিলেন। রাফেলের সিষ্টিন ম্যাডোনা (মাতৃমূৰ্ত্তি) চিত্রশালার অমূল্য সম্পত্তি বিবেচিত হইয়া থাকে । ইহা অন্তান্ত ছবির সঙ্গে দেওয়ালে টাঙাইয়া রাখা হয় নাই ; একটি আলাদা কামরায় কেবল এই ছবিটি রাখা হইয়াছে। এথানে সৰ্ব্বদাই বহু দশক বসিয়া বসিয়া ইহা দেখে । কেহ কেবল ছবিটির সৌন্দৰ্য্য দেখে, কিন্তু অনেকেই যিশুর মাতার ও যিশুর ছবি বলিয়া ভক্তির সহিত ইহা দশন করে । চিত্রশালায় আরো কয়েকটি স্ববিখ্যাত ছবি আছে। কিন্তু উহাতে রক্ষিত বড় বড় কয়েকটা ফ্লেমিশ চিত্রের স্থূলকায় নগ্ন স্ত্রীলোকদের চিত্র ললিতকলার দিক্ দিয়াও আমার ভাল লাগে নাই । আমরা যখন ছবি দেখিয়া দেখিয়া কক্ষে কক্ষে ঘুরিতে ছিলাম, তখন একটি জামান স্ত্রীলোক আমাকে ইংরেজীতে বলিল, “আপনার সহিত ফুঞক মিলিট কথা কহিবার অনুমতি পাইতে পারি কি ?” আমি বলিলাম, "আপনি ভুল করিতেছেন ;-আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নহি, যদিও তাহার দেশে আমারও বাড়ী, এবং তাহার পুত্রবধু আমাদের সঙ্গে আছেন বটে।” স্ত্রীলোকটি তখন তাহার সঙ্গী অন্ত কতকগুলি স্ত্রীলোকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ to-3 & করিয়া বলিল,“আমিও তাহাই ভাবিয়াছিলাম, কিন্তু উহার বলিতেছিল, ‘না ; উনি নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথ’ ” চিত্রশালা হইতে আমরা রাজপ্রাসাদ দেখিতে গেলাম। এখন সেখানে কোন রাজা নাই, সমগ্র জামেনী সাধারণতন্ত্র হইয়া গিয়াছে। প্রাসাদটি আমরা কেবল বাহির হইতে দেখিলাম, ভিতরে ঢুকিবার সময় তখন উত্তীর্ণ হুইয়া গিয়াছে। বেশ জমকাল। প্রাসাদসংলগ্ন যে বাড়ীতে মণিমুক্ত স্বর্ণরৌপ্য হস্তিদন্তের দ্রব্যাদি রাখা হয়, তাহ খোল ছিল। তাহার সমৃদ্ধি দেখিয়া চমৎকৃত হইতে হয় । একজন রক্ষী আমাদিগকে ভারতবর্ষ হইতে সংগৃহীত জহরাং দেথাইল। ভারতবর্ষ কত দেশকে সমৃদ্ধ করিয়াছে, কিন্তু নিজে দরিদ্র । চিত্রশাল হইতে আমরা একটি অন্তর্জাতিক চিত্রপ্রদর্শনী দেখিতে গেলাম। ইহাতে ইউরোপের সব দেশের এবং আমেরিকার বহুসংখ্যক আধুনিক ছবি দেখান হইতেছে । ভারতবর্ষ হইতে কোন ছবি যায় নাই । অল্পসংখ্যক ছবি আমার মন্দ লাগে নাই। কিন্তু অধিকাংশ ছবিই অতি আধুনিক রীতিতে অঙ্কিত বলিয়া এবং চিত্রবিদ্যা সম্বন্ধে আমার বিশেষ কোন জ্ঞান না থাকায়, আমি তাহীদের রস গ্রহণে সমর্থ হই নাই। কতকগুলি ছবি এরূপ ছিল, যে, সেগুলি কোন বাস্তবিক বা কল্পিত জিনিষ, প্রাণী, ভাব বা দৃশ্বের ছবি তাহা অনুমান করিতে পারি নাই। এইটুকু কেবল বুঝিলাম, যে, রং ফাইয়াছে ভাল । অন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর হাতায় একটি উদ্যান ও পুষ্পের প্রদর্শনীতে পৃথিবীর নানা দেশের বিখ্যাত উদ্যানসমূহের ছোট ছোট প্রতিরূপ রক্ষিত হইয়াছিল। তা ছাড়া, কল্পিত নানাবিধ স্বন্দর যাগানের নমুনাও সেখানে ছিল। ফুলের প্রদর্শণীর শোভা বর্ণনার যোগ্য, কিণ্ড বর্ণনার ক্ষমতা আমার নাই । প্রদর্শনী দুইটি দেখা হইবার পর আমি ট্রামে হোটেল ইউনিয়নে রবীন্দ্রনাথের নিকট গেলাম। ট্রামে খুব বেশী ভিড় ছিল, অনেকে দাড়াইয়া ছিল । একজন - বুদ্ধ বিদেশীকে গাড়ীতে উঠিয়া দাড়াইয়৷ থাকিতে দেখিয়া দু-একটি বালিকা ও অন্য কোন কোন যাত্রী উঠিয়া দাড়াইল এবং আমার জন্ত জায়গা করিয়া দিল। বিদেশী ও অপরিচিত হইলেও, বম্বোবুদ্ধের সুবিধা করিয়া দিবার