পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8छरे [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড শিষ্টাচার জামে নীতে অাছে দেখিয় প্রীত হইলাম । কবির হোটেলে তথন তিনি ছাড়া তাহার সঙ্গে পণ্ডিত তারাচাদ রায়, ঐযুক্ত প্রেমচাদ লাল, শ্ৰীযুক্ত প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ এবং শ্ৰীমতী নিৰ্ম্মলকুমারী দেবী ছিলেন। সন্ধার সময় বক্তৃতার কিছু পূৰ্ব্বে আমরা একটি প্রকাও হলে গেলাম। দেখিলাম, হলে একটুও জায়গা খালি নাই, কতকগুলি লোক দাড়াইয়া আছে, শ্রোতাদের মধ্যে বেশী রকম একটি অংশ স্ত্রীলোক । ইংরেজীতে বক্তৃতা বুঝিবার লোক সেখানে অনেক ছিল, কিন্তু বোধ হয় ইংরেজী না-জান লোকের সংখ্যাই বেশী ছিল । তাহারা পণ্ডিত তারাচাদ রায় কথিত অনর্গল জামান অনুবাদ হইতে কবির বক্তৃতা বুঝিল । পণ্ডিতজীর গলাও বেশ দরাজ । রিপোর্টার অনেক ছিল । তাহাদের মধ্যেও স্ত্রীলোকের সংখ্যা কম নয়। একজন নারী রিপোর্টারই সকলের চেয়ে কম বাদ দিয়া রিপোট" লিখিতেছিলেন মনে হইল। বক্তৃতার পর কবি র্তাহার কয়েকটি ইংরেজী ও বাংলা কবিতা আবৃত্তি করিলেন। এগুলি, বিশেষত: “দি ক্রেসেণ্ট মুনের” কবিতাগুলি, শ্রোতাদের এত ভাল লাগিয়াছিল, যে, কবি যত কবিতা আবৃত্তি করিবেন, মনে করিয়াছিলেন, তাহা অপেক্ষা অনেক বেশী আবৃত্তি তাহাকে করিতে হইয়াছিল ša বক্তত ও আবুত্তির পর আমরা ভিড় ঠেলিয়া কষ্টে গাড়ীতে উঠিলাম এবং থিয়েটার গৃহে গেলাম। সেখানেও একটুও জায়গা খালি ছিল না । অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাহারও কাহারও পোষাক বেশ মজার হইয়াছিল ;– বিশেষতঃ স্বধার সাড়ী । ইউরোপীয়ের বাঙালীদের পোষাক যত দেখে, আমরা তাহাঁদের পোষাক তার চেয়ে অনেক বেশী দেথি । তথাপি আমরাও বোধ করি ইউরোপীয় পোষাক অনেক সময় ঠিক মত পরিতে পারি না—ফ্যাশন ত খুব আধুনিক প্রায়ই হয় না। অমল সাজিয়াছিল একজন অভিনেত্রী। যে-সব বালক অমলের সঙ্গে খেলা করিতে আসিয়াছিল, তাহারাও অভিনেত্রী। প্রাগের চেক্ ও জামান থিয়েটারদ্বয়ের ‘ডাক ঘর" অভিনয়েও অভিনেত্রীরা ঐ ঐ ভূমিকার অভিনয় করিয়াছিল। কবি ড্রেসডেন ও প্রাগে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, - বালকের কেন এই সব বালকের ভূমিকার অভিনয় করে না। উভয় সহরেই উত্তর পাইলেন, বালক অভিনেতা পাওয়া যায় না বলিয়া। কিন্তু বাঙালী অনেক ছেলে অমলের ভূমিকার বেশ অভিনয় করিয়াছে। ড্রেসডেনে অভিনয়ের পর থিয়েটারের কর্তৃপক্ষ সাতিশয় সম্মানের সহিত কবির উদ্দেশে একটি অভিনন্দন পত্র পাঠ করিলেন এবং দর্শকেরাও র্তাহার প্রতি বিপুল সম্মান প্রদর্শন করিলেন । ড্রেসডেন সহরের স্থাপত্য বালিনের স্থাপত্য অপেক্ষ আমার উৎকৃষ্ট ও বৈচিত্র্যপূর্ণ মনে হইয়াছিল । ড্রেসডেনে দেখিলাম, কবিকে সকাল সন্ধ্য র্তাহার নানা বহির জামান সংস্করণে অঞ্জস্র স্বাক্ষর করিতে হইতেছে, তাহার ফোটোগ্রাফে সহি করিতে হইতেছে, মুলাকাতের তাসে (ভিজিটিং কার্ডে ) দস্তখত করিতে হইতেছে। হোটেলের চাকর চাকরানী প্রভৃতি সামান্য অবস্থার লোকরণও তাহার বহি কিনিয়া দস্তখত করাইতেছে । তাছাড়া ফোটোগ্রাফার ও চিত্রকরও কাহাকেও কাহাকেও আসিতে দেখিলাম । একজন চিত্রকর অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহার ছবি আঁকিল। সেট। ঠিক্‌ না হওয়ায় আবার আঁকিল। সেটাও ঠিকৃ হইল না । কবি আমাকে বলিলেন, “দেখুন ত, এটা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছবি হইয়াছে কি না ’ বলিয়া তাহাতে দস্তখত করিয়া দিলেন। বস্তুতঃ তাহ রবীন্দ্রনাথ অপেক্ষ মাইকেলের ছবি বলিয়াই সহজে চালান যায়। ড্রেসডেন হইতে কবির সহিত আমরা সকলে বালিনে ফিরিয়া আসিলাম। ট্রেনে অনেক কথা হইয়াছিল, অধিকাংশই ভুলিয়া গিয়াছি । অল্পস্বল্প যাহা মনে আছে, তাহা বলিতে গেলে ভাষাটা হইবে আমার, সুতরাং সে চেষ্টা করিব না। দু-একটা কথার কেবল উল্লেখ করিব । কষি বলিলেন, “স্বজলাং স্বফগাং শস্যামলাং মাতরম্; সব ঋতুতে বাংলা দেশের বা ভারতবর্ষের সব অংশের প্রতি তেমন প্রযোজ্য নহে, যেমন ইউরোপের অনেক অংশের প্রতি প্রযোজ্য ।” অামি ইউরোপের যতটুকু দেখিয়াছি, তাহার সম্বন্ধে আমারও ঐ কথা মনে হইয়াছে। পৃথিবীর যে-ভূখণ্ডে দেবতার এমন স্বপালন, তাহার অধিবাসীদের