পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা] চণ্ডীদাস-গণ 8õዓ সাহিত্য পরিষদ হইতে প্রকাশিত চণ্ডীদাসের পদাবলীর ৭৮৬ ও ৮১৫ সংখ্যক পদে আমরা আদি চণ্ডীদাসের ভণিতা পাই, ২৯১, ৩৮৩ সংখ্যক পদে কবি চণ্ডীদাসের ভণিতা আছে ; ২, ২৭, ৩• প্রভৃতি সংখ্যক অনেক পদে দ্বিজ চণ্ডীদাসের ভণিতা দৃষ্ট হয় ; ২৭৩, ৪৬১ প্রভৃতি সংখ্যক বহুপদে আবার দীন চণ্ডীদাসের ভণিতা পাওয়া যাইতেছে ; ৪৮৩, ৫২২ সংখ্যক পদে দীন ক্ষীণ চণ্ডীদাসের ভণিত আছে ; এবং ৬২৬ সংখ্যক পদ দীন হীন চণ্ডীদাসের ভণিতা যুক্ত। ইহা ব্যতীত বাস্থলীপূজক চণ্ডীদাস, বড়, চণ্ডীদাস, ও শুধু চণ্ডীদাসের ভণিত-যুক্ত পদের সংখ্যাও অনেক। অতএব আমরা আদি চণ্ডীদাস, বড় চণ্ডীদাস, বাস্থলীগণের চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস, দীন ক্ষীণ চণ্ডীদাস, দীনহীন চণ্ডীদাস, কবি চণ্ডীদাস, ও শুধু চণ্ডীদাস উল্লেখ করা ভণিতা পাইতেছি । এখন দেখা যাউক, চণ্ডীদাসের রচিত কোন পুস্তকে ভণিতার কোন নির্দিষ্ট ধারা পাওয়া যায় কি না । শ্ৰীকৃষ্ণ-কীৰ্ত্তনে সাধারণতঃ নিম্নলিখিত প্রকার ভণিতা मृठे शम्न বাসলী শিরে বন্দী চণ্ডীদাস গtএ । অথবা, গাইল বড়, চণ্ডীদাস বাসলী-গণে । অখবা, বাসী চরণ শিরে বঙ্গিম। গাইল বড়,চণ্ডীদাসে। উক্ত গ্রন্থে ৪১৫টি পদ আছে তাহার একটি পদেও দ্বিজ, দীন, দীনহীন, আদি, কবি প্রভৃতি বিশেষণ-যুক্ত ভণিতা পাওয়া যায় না। অতএব স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে যে, এই বামুলীগণের বড় চণ্ডীদাসের ভণিত দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট ধারা ছিল । নিবিড় অন্ধকারের মধ্যে আমরা এই একটি আলোক-রশ্মি দেখিতে পাইতেছি, অতএব আমরা তাহাই অবলম্বন করিয়া অগ্রসর হইতে চেষ্টা করিব । উক্ত ভণিত হইতে আমরা ইহাই বুঝিতে পারিতেছি যে, বাস্থলীগণের চণ্ডীদাস ও বড়ু চণ্ডীদাস অভিন্ন ব্যক্তি, অর্থাৎ বড়ু চণ্ডীদাস বাসলীর সেবক ছিলেন, এবং তিনি নিজেকে বাসলীগণের চণ্ডীদাস রূপে ভণিতায় প্রচার করিয়াছেন। যেহেতু কৃষ্ণকীৰ্ত্তনের একটি পদেও দ্বিজ, দীন প্রভৃতি বিশেষণ-যুক্ত ভণিতা পাওয়া ধায় না, অতএব আমরা বলিতে পারি যে, বড়, চণ্ডীদাস এইসকল আধ্যায় কখনও নিজেকে প্রচার করেন নাই। কাজেই এই ভণিতা-স্বত্র অবলম্বন করিয়া আমরা দেখিতে পাইতেছি যে, দীন চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস প্রভৃতি বড় চওঁীদাস হইতে ভিন্ন ব্যক্তি । আমাদের এই প্রাথমিক ধারণা কতদূর সত্য, এখন তাহাই বিচার করিতে প্রবৃত্ত হইব । যে দুইটি পদে আমরা আদি চণ্ডীদাসের ভণিত পাইতেছি সেই দুইটি পদই হেঁয়ালীর মত। কিন্তু যখন আদি চণ্ডীদাস বলিয়া ভণিতা আছে, তখন বুঝিতে হইবে যে, এই দুইটি পদের একটিও আদি চণ্ডীদাসের রচিত নয়, —সেই আদি চণ্ডীদাস যিনিই হন না কেন, তিনি এই পদদ্বয় রচনা করেন নাই। কারণ র্তাহার সময়ে নিজেকে । *আদি” আখ্যায় প্রচার করিবার কোনই প্রয়োজন থাকিতে পারে না । “আদি” শব ব্যবহারের দ্বারা ইহা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, যখন এই পদদ্বয় রচিত হইয়াছিল, তখন একাধিক চণ্ডীদাসের প্রচার হইয়াছে ; তাই এই আদি আখ্যাদ্ধার কোন একজন চণ্ডীদাসকে বুঝান হইয়াছে, যিনি অন্যান্ত চণ্ডীদাসের পূর্ববর্তী। কোন তার্কিক হয়ত বলিতে পারেন যে,আদি চণ্ডীদাসের সময়েই যদি অক্সান্য চণ্ডীদাসের উদ্ভব হইয়া থাকে, তাহা হইলে আদি চণ্ডীদাসের এইরূপ ভণিতা প্রদানের সার্থকতা অকুমান করা যায়। আমরা বলিব যে,এই অনুমানও প্রমাণ-বিরুদ্ধ ; কারণ চরিতামৃতে যে ভাবে রামানন্দ রায় ও বিদ্যাপতির সঙ্গে চও দাসের কথ। উল্লিখিত আছে, তাহাতে একজন চণ্ডীদাসের কথাই মাত্র জানা যায় ; বিশেষত: এমন কোন রচনা এপর্য্যস্ত প্রকাশিত হয় নাই যাহতে একই সময় একাধিক চণ্ডীদাস বিদ্যমান ছিলেন , এমন কথা আমরা জানিতে পারি। আর এই আদি চণ্ডীদাসের রচিত কেবল মাত্র দুইটি পদই যখন আমরা পাইতেছি, তখন বুঝিতে হইষে যে, এই দুই পদের চণ্ডীদাস হইতে অন্যান্য চণ্ডীদাসকে এইভাবে পৃথক করিবার কোনই দরকার ছিল না, কারণ এই দুইটি পদের অসাধারণ বিশেষত্ব কিছুই নাই, তাহদের লোপেও পদ-সমুদ্রের কোন বিশেষ ক্ষতি হইবার সম্ভাবনা নাই। এই দুইটি পদ এমন সময়ে রচিত হইয়াছিল যখন একাধিক চণ্ডীদাস প্রতিষ্ঠা