পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WXVNV প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড আমার চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া উপায় কি ? তা না হ’লে ত দিব্যি বিয়ে ক’রে honeymoon trip এই বিলাত চলে যাওয়া যেত। সে কি grand হ’ত ব’ল ত ? কল্পনা ক’রেই জিবে জল আসে ।” চন্দ্র বলিল, “আরে, সবুরে মেওয়া ফলে। এখন থেকে অত ঘাবড়াস কেন ? চল একটু বাইরের থেকে ঘুরে আসা যাকু। এই গরমে কি ঘরে টেকা যায় ?” দুই বন্ধু বাহির হইয়া পড়িল । ( ه د) জমিদার-বাড়ীতে তথনও সবাই নিদ্রিত, ঝি-চাকরগুলির শুদ্ধ নিদ্রাভঙ্গ হয় নাই । ভোরের আলো সবে খোলা জানালার ফঁাকে ফঁাকে ঘুমন্ত অধিবাসীদের চোখের উপর জাগরণের তাগিদ বহন করিয়া আনিতেছে। দ্বিভলের একটি বড় ঘরে দুইটি মাহুষ ঘুমাইতেছিল। এই আধ-আলো আধ-অন্ধকারেও বুঝা যায় যে দু’জনেই রমণী । একজনের ঘুমের পরমায়ু প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছিল। সে দু' চারবার এপাশ ওপাশ করিয়া আলস্য ভাঙিয়া উঠিয়। বসিল । চোখ রগড়াইতে রগড়াইতে ডাকিল, “ভানুও ভাস্ক, ওঠ গো । কাল সারাটা দিন ত দাতে কুটে দিয়ে কাটিয়েছ। এখন উঠে চান ক’রে, মুথে কিছু দাও, তা না হ’লে আবার শরীর খারাপ করবে। কাল রাত্তিরেই আমি সব জোগাড় ক’রে রেখেছি।” আর-একটি রমণীও ডাকাডাকিতে খাটের উপর,উঠিয়া বসিল । দিনের আলো এখন বেশ পরিষ্কার হইয়। উঠিয়াছিল, ঘরের ভিতরটায় আর আবছায় ছিল না। ঘরের একধারে একটি ছোট অথচ মুল্যবান পালঙ্ক, তাতে একটি মাহুবই শুইতে পারে, অন্য দিকে একটি তক্তপোষ । একটা আলনা দেয়ালের গায়ে থাড়া হইয়া আছে, তাহাতে তিন চারখানি থান ধুতি, একটি গরদের চাদর এবং একটি সেমিজ রক্ষিত। ছোট একটি আলমারী এক কোণে, তাহাতে সারি সারি বাংলা ও সংস্কৃত পুস্তক । স্বরের অন্ত এক কোণে, একটি লোহার সিন্ধুক, তাহার ভিতরে যে কি আছে, তাহ বুঝিবার উপায় t নাই। যে দুইটি মানুষ এতক্ষণ এ ঘরে ঘুমাইতেছিল, তাহারা যে আমাদের পূর্বপরিচিত ভবানী এবং ভানুমতী, তাহ বোধহয় আর বলিয়া দিতে হইবে না । ভবানী এখন বৃদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে। মাথার চুল পাকা, মুখ গভীর বলিরেখায় অঙ্কিত। গায়ের রং হলদে, তুলট কাগজের মত হইয়া উঠিয়াছে। দাড়াইলে বোঝা যায়, তাহার দীর্ঘ দেহ অনেকখানিই চুইয়৷ পড়িয়াছে। দেখিলেই তাহাকে এখন আর পুরুববেশী নারী মনে হয় না। শরীরে সে-শক্তি আর নাই। ভিতর হইতে কিসে যেন তাহার শরীর-মনের বল শুবিয়া থাইতেছে । তাহাকে এখন সাধারণ বাঙালী ঘরের একটি বৃদ্ধ বলিয়। বেশ স্বচ্ছন্দে চালাইয়। দেওয়া যায়, যদিও চোথের দৃষ্টিতে আগেকার দিনের রুদ্র তেজের ঝলক এখনও মাঝে মাঝে জলিয়। ওঠে । আগের চেয়ে সে কথাবার্তাও ঢের কম বলে । ভাস্থমতী এখন প্রৌঢ়ত্বের সীমানায় আসিয়া পৌঁছিয়াছে। অকাল-বৈধব্য ও সংসারের নানা দুঃখদুশ্চিস্তার আঘাত তাহাকে বয়সের চেয়েও দ্রুতগতিতে বাৰ্দ্ধক্যের দিকে ঠেলিয়া লইয়। চলিয়াছে । তবুও এখনও হাজার লোকের মাঝে দাড় করাইলে সকলে একবার সসম্ম দৃষ্টিতে তাহার দিকে চাহিয়া দেখে। সে যে রাণী হইতেই জন্ম লইয়াছিল, তাহার প্রমাণ তাহার শুভ্র রক্তহীন মুখে, দৃপ্ত চলার ভঙ্গীতে, আয়ত চোখের দৃষ্টিতে এখনও ; বর্তমান । ঝরিয়া-পড়ার মুখে শ্বেত শতদলের যে শোভ, তাহা এখনও তাহার দেহকে ত্যাগ করে নাই । মাথার চুলে এখনও পাক ধরে নাই, অন্ততঃ উপর হইতে দেখিয়া কিছুই বোঝা যায় না । ভবানার ডাকে সে বিছানার উপর উঠিয়া বসিয়া বলিল, "ওম, এfর মধ্যে দিব্যি রোদ উঠে গেছে দেখছি। কাল অত ঘোরাঘুরি ক’রে এমন দশা হ’য়েছিল যে একেবারে মড়ার মত ঘুমেয়েছি। অত যে স্বপ্ন দেথি রোজ রাতে, কাল ভাও দেখিান । যাই স্নানট। ক’রে আসি ।” ভবানী ইতিমধ্যে বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িয়াছিল। বিছানা উঠাইয়। রাখিতে রাখিতে বলিল, “রোস, তেল