পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাগ্যচক্র ঐ সীতা দেবী পরীক্ষা শেষ করিয়া কলিকাতায় বসিয়া থাকা যে কি বিরক্তিকর ব্যাপার, তাহ গিরীশ আগে ভাবিয়া দেখে নাই। ভাবিলে বোধ হয় সহর ছাড়িয়া ষাইবার পূরাপুরি ব্যবস্থা আগে হইতেই করিয়া রাখিত। তাহার বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী সকলেই যে যার পথ দেখিয়াছে, তাহাকে সঙ্গদান করিবার জন্ম কেহই এখানে বসিয়া নাই। পাশের বাড়ীর বস্থরা গরম পড়িতে-না-পড়িতেই পোটলা-প্টলি বাধিয়া দার্জিলিং চলিয়া গিয়াছে। গিরীশের সঙ্গে সেবাড়ীর কোন মানুষেরই সাক্ষাৎ ভাবে পরিচয় নাই, কিন্তু মনে মনে সে তাহাদের সকলকেই বন্ধু বলিয়া সম্ভাষণ করিত। এত নিকটের বন্ধু বুঝি তার পরিচিতদের মধ্যেও কেহ ছিল না। এতখানি মানবপ্রীতির অবশু একটা কারণ কোথাও-না-কোথাও ছিল । কারণটির নাম ললিত, বয়স বছর পনেরো ষোলো হইবে। সে বস্থ মহাশয়ের ভাগ্নী, কলিকাতায় থাকিয় পড়াশুনা করে, এবং প্রতিবেশী যুবক গিরীশের কবিতার খোরাক জোটায়। গিরীশের টেবলের দেরাজ ত নীলরংএর মলাটের খাতায় ঠাশা হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু রাজধানীতে জ্যৈষ্ঠ মাসের আরম্ভট কাব্যচর্চার পক্ষে একেবারেই উপযোগী নয়। এত গরমে কাব্য-লক্ষ্মীও হয়ত মূছ। যাইবার জোগাড় করিতেছিলেন। ঘরের ভিতর গিরীশ ছট্‌ফট্‌ করিয়া বেড়াইতেছিল। বিছানাট। যেন আগুন হইয়া আছে, শুইতে গেলে পিঠে ফোস্ক পড়ে। বাবার কি অন্যায়, বাড়ী যাইবার খরচ কোন্‌কালে পাঠাইবার কথা, আর এখন পৰ্য্যস্ত একটা পয়সার সন্ধান নাই। আচ্ছা, টাকা আক্ষক, তাহার পর কে বাড়ী যায়, দেখা যাইবে। তাহার আর যাহারই অভাব থাক, বন্ধু-বান্ধবের অভাব নাই, এবং বন্ধুগুলির বাড়ীম্বরেরও অভাব নাই। গিরীশকে অস্তুতঃ তাহার গোটা দশ বারো বন্ধু গ্রীষ্মের ছুটা কাটাইতে নিমন্ত্ৰণ করিয়া পাঠাই য়াছে। কাহারও-না-কাহারও বাড়ী தே সে দু-টা মাস অতি স্বচ্ছন্দেই কাটাইয়া আসিতে পাব্লিবে । কিন্তু সম্প্রতি দুপুর-বেলাটা যে কি করিয়া কাটান যায়, তাহাই সে ভাবিয়া পাইতেছিল না। হোষ্টেলের যত ঘরে যত উপন্যাস, গল্পের বই, মাসিক পত্র, সংবাদপত্র ছিল, সব তাহার বার দশ করিয়া পড়া শেষ হইয়া গিয়াছে। বাহিরে ত অগ্নিবৃষ্টি হইতেছে, সেদিকে পী বাড়াইবার জো নাই। বিছানা এত গরম এবং গৃহস্বামীটির মেজাজও এত উত্তপ্ত যে, ঘুমের কথা ভাবিয়াও লাভ নাই। চাকর হতভাগাকে ডাকিয়া ডাকিয় গলা ত তাহার প্রায় ভাঙিয়া গেল, কিন্তু তাহার টিকির সন্ধানও মিলিল না। কোথাও বেড়াইতে বাহির হইয়াছে বোধ হয়। গিরীশ নিজেই নীচে গিয়া চা করিয়া ফেলিবে, প্রায় প্রতিজ্ঞ করিয়া ফেলিয়াছে এমন সময় সদর দরজার শিকলটা ঝৰ্‌ঝৰ্‌ করিয়া বাজিয়া উঠিল । গিরীশ মিনিটখানিক অপেক্ষা করিল, যদিই চাকরটা নীচে থাকে। কিন্তু দরজা খুলিবার কোনো শব্দ ত শোনা গেল না, বাহিরের শিকলট। আরও অধৈর্য্যভাবে আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল। গিরীশকেই নীচে গিয়া দরজা খুলিতে হইবে, তাহা বেশ ভাল করিয়াই বোঝা গেল। ছেড়া চটি জোড়ার ভিতর পা ঢুকাইয়া বিরক্তমুখে সে দরজা খুলিতে চলিল । দরজা খুলিয়াই দেখিল সাম্নে দাড়াইয়া তাহার পরম বন্ধু অতুল। বিরক্তিটা তাহার তখনই স্বৰ্য্যালোকভীত কুয়াসার মত শূন্যে মিলাইয়া গেল। সে কোথায় ভাবিতেছে অতুল গ্রামে বসিয়া মায়ের রান্না মাছের মুড়া ধ্বংস করিতেছে, না হতভাগা এই গরমে কলিকাতায় দাত বাহির করিয়া হাজির ! অতুলের পিঠে এক চড় মারিয়া লে চীৎকার করিয়া