পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরভৃতিক ঐ সীতা দেবী ) শোভাবতীকে আনিবার জন্য যে গাড়ী গিয়াছিল, সেট ঘণ্টা দুই পরে ফিরিল। সুবীর ততক্ষণে বাহির হইয়। গিয়াছে। ভানুমতী সিড়ির গোড়ায় দাড়াইয়া দিদিকে অভ্যর্থনা করিল, “মেজদি, উপরে উঠে এস, সোজা । ডাক্তারে ত আমার নীচে যাওয় বারণই ক'রে দিয়েছে, আমি পারতপক্ষে আর সিড়ি মাড়াই না ।” শোভাবর্তী অতিকষ্ট্রে একটা একটা করিয়া সিড়ি ভাঙিয়া উপরে উঠিতে লাগিল । তাতার সহিত প্রথম সাক্ষাতের সময়ও ছিল একটি শিশুকন্যা, এবারেও তাই । তফাতের মধ্যে প্রথমবারের সঙ্গিনীটি ছিল তাহার কন্যা, এবারেরটি তাহার নাতনী, দুর্গার কন্যা ইল । শোভাবতীর নিজের চেহারার ও যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটিয়াছে। সে উজ্জ্বল গৌরবর্ণ ক্রমে স্নান হইতে হইতে একরকম কালেই হইয়া গিয়াছে । চব্বিশ বৎসর বয়সের সে সঞ্চারিণী পল্লবিনী লতা’র মত দেহঘষ্টি আর নাই, এখন সে বিপুলায়তনা বাঙালী গৃহিণী। মাথার সাম্নের চুলে পাক ধরিয়াছে, টাকও একটুখানি দেখা দিয়াছে, সেট ঢাকিবার জন্য সীমন্তে খুব চওড়া করিয়। সিন্দুর লেপা। পরণে তাহার সেমিজের উপর বিপুল লালপাড়যুক্ত গরদ ; ব্লাউদ,পেটকোট পরার উৎপাত সে অনেকদিন চুকাইয়া দিয়াছে। গিন্নি মচুেষের আর সে সবে প্রয়োজন কি ? অঙ্গে কয়েকটি খুব মোটা মোট সোনার গহন । সচরাচর এগুলি ব্যবহার না করিলেও, ভানুমতীর বাড়ী আসিতে হইলে শোভাবতী সৰ্ব্বদাই যথাসাধ্য গহন পরিয়া আসে। নাই বা সেখানে কেহ থাকিল, তবু একে জমিদারবাড়ী, তাতে কুটুম্বের বাড়ী। --> ইলাকে লইয়া উপরে উঠতে শোভাবতী স্থাপাইয়া পড়িয়াছে দেখিয়া ভানুমতী বলিল, “নামিয়ে দাও মেজদি, (نامے- c s و ইলাকে। এদানীং যা মোটা হ’য়ে পড়েছ, আর ছেলে পিলে কোলে নিয়ে সিড়ি ভাঙা তোমার পোষায় না। ওরে ও মাধি, এদিকে আয়, ইলাকে উপরে দিয়ে যা ।” .# মাধবী ছুটিয়া আসিয়া ইলাকে বহন করিয়া আনিল । শোভাবতী কোনোমতে উপরে উঠিয়া হাফাইতে হাফাইতে বলিল, “কেন রে চোখ দিচ্ছিস্ ? মোটা হব না ত কি ? মোটা হবার ত বয়েসই হয়েছে, নাতী নাতু নীর মুখ দেখেছি। তোর মত কি চারকাল প্যাকাটীর মত শরীরই থাকবে ? দেখি এখন, বৌ এলে তোকে কি রকম বেমানান দেখাবে তার পাশে ।” শোভাবতীকে মোট বলিলে সে বড়ই চটিয়া যায়। ভানুমতী হাসিয়া বলিল, “আচ্ছা, আগে বউই আসুক, তারপর আমায় যেমন দেখাবার দেখাবে। চল ঘরে বসবে চল, একেবারে হাফিয়ে পড়েছ। মাৰী, খুকীকে নিয়ে তুই নীচে যা, ভবানীকে বল ওকে মিষ্টি দিতে। উপরে পান আর থাবার জল পাঠিয়ে দে।” কথা বলিতে বলিতে, দুইবোনে আসিয়া ভানুমতীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করিল। দিনের বেলার অসহ গরম কাটিয়া গিয়া, এখন সন্ধ্যার সময় বেশ একটুখানি ঝিরঝির করিয়া হাওয়া বহিতে আরম্ভ করিয়াছে। মেঝের উপর একখানা মাদুর পাতিয়া ভামুমতী বলিল, “বোস ভাই মেজদি। তারপর, তোমার কর্তাটির খবর কি ? আর যে , একেবারেই এ-মুখে হন না ?” শোভাবর্তী বলিল, “আছেন একরকম। শীতটা গিয়ে বাতের বেদনাটা খানিকট গিয়েছে। কোন মুখোই বা হন ? সারাদিন ত আছেন নিজের কাগজপত্র, মক্কেল আর আদালত নিয়ে । ছেলেটার কাটা ভাল ভাল সম্বন্ধ এসে ফিরে গেল, তা সেদিকেও খেয়াল নেই। নিজের কেশ । নিয়েই আছে। আমি আছি ব'লে তাই, তা না হ’লে খাওয়ানাওয়াও এতদিনে উঠে যেত বোধ হয়।”