পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] আমার রান্নার বেশ সৰ্থ ছিল । বাবাও রান্ধিতে ভাল বাসিতেন । আমি বাল্যাবধিই মায়ের কাছে বসিয়৷ তাহার রান্নাবাড়া দেখিতাম ! আজি পর্য্যন্তও আমার রান্নার সখ যায় নাই। আমাদের মেসে যখনই পাচক ব্রাহ্মণ অনুপস্থিত থাকিতেন তখন অনেক সময়ই আমি সেকাজ করিতাম । আমাদের একজন ব্রাহ্মণ-বন্ধুকে একবার জিজ্ঞাসা করিলাম, তার খাওয়ার কি ব্যবস্থা হইবে। তিনি বলিলেন, ভাত ছাড়া আর যা-কিছু তুমি গিয়া রান্ধ, ভাতেব ফেন গড়াইবার সময় আমাকে ডাকি ও । আমি যাইয়৷ ভাত নামাইব । শুনিয়া, আমরা হাসিয়া উঠিলাম । বলিয়াম, এ কেমন ? ডাল তরকারী সবই আমাদের হাতে খাইতে পারেন, ভাতের বেলাই অপরাধ ? তিনি গম্ভীর ভাবে কতিলেন—ভাত খাইতেও আমার কোন আপত্তি নাই, কিন্তু বাড়ী ধাইয়। মিছা কথা কহিতে পারিব না । আব্রাহ্মণের হাতে ভাত খাইয়াছি কি না, লোকে এই কথাটাই আমাকে জিজ্ঞাসা করিবে । ডাল, ভাজ খাইয়াছি কিন। জিজ্ঞাসা করিবে না । সুতরাং ভাত না থাইলে আমি তোমাদের সহিত ভাত থাই নাই, স্বচ্ছন্দচিত্তে এ কথা বলিতে পারিব । জাত বাচাই বার রফ আমাদের মেসে হিন্দুয়ানী রক্ষা করিবার জন্য ক্রমে এক নূতন বিধান প্রবর্তিত হয়। বেশ কষাকষি করিলে মেস ভাঙ্গিয়া যাইবে, যারা হিন্দুয়ানী মানিতেন না তাদের সংখ্যাই বেশী ছিল। তারা সে-অবস্থায় মেস ছাড়িয়া চলিয়া যাইতেন। অতএব উভয় পক্ষের মধ্যে একটা রফ হইল । রফাটা এই হইল যে, মেসের কোন সভ্য হিন্দুর কোন অখাদ্য মেসের ভিতরে আনিতে পরিবেন না । বাহিরে যার যেমন ইচ্ছা সেইরূপই থাইতে পারেন। এই রফার ফলে সুন্দরীমোহন এবং আমাকে একদিন বড় মুস্কিলে পড়িতে হইয়াছিল। বোধ হয় তখন পূজার ছুটি । একদিন ঝি বামুন কেহই আসে নাই। বাজার হইতে লুচি ও সন্দেশ আনিয়া থাইতে আমাদের প্রবৃত্তি হইল না। এখন কলিকাতার প্রায় সৰ্ব্বত্র রান্না মাছ মাংস প্রভৃতির খাবার দোকান হইয়াছে। সেকালে কেবল মদের দোকানের সত্তর বৎসর boo o নিকটেই এইরূপ রান্না মাছ মাংস প্রভৃতি পাওয়া যাইত। বহুবাজারের নিকটে, মদন বড়ালের লেনে, আমাদের বাসা ছিল। আর বহুবাজারের রাস্তায় অনেকগুলি মদের দোকান ও তারই আশেপাশে রান্না মাছ মাংসের দোকানও ছিল । সুন্দরীমোহন এবং আমি খাদ্য অন্বেষণে বহুবাজারের রাস্তায় যাইয়া এইরূপ একটা চাটের দোকান হষ্টতে গরম লুচি ও মাংসের কারি কিনিয়া লইলাম। দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করিলাম, কোথাও বসিয়া খাবার জায়গা আছে কি না । সে-ব্যক্তি আমাদিগকে একটা ফটক দেখাইয়া দিয়া বলিল, ঐ দিকে একটি খাবারের ঘর আছে। আমরা সেই ফটক দিয়া যাহয় একটা একতালা ঘরে চুকিয়াম। সেখানে একটা কেরোসিনের আলো ঝুলিতেছিল । মাঝখানে একখানা টেবিল পাতা, তার দুদিকে সুপান। লস্ব বেঞ্চি । আমরা ভাবিলাম যে বেশ জায়গা পাওয়া গেল, এখানে বসিয় নিৰ্ব্বিঘ্নে রাত্রের খাওয়াটা সারিতে পারিব । এই ভাবিয়া আমরা যেই লুচির চুপড়ী ও মাংসের মালদা টেবিলের উপরে রাপিয়া খাইতে বসিব, এমন সময় একজন বয়স্ক ব্যক্তি একটা গ্লাস হাতে ও একটা বোতল বগলে করিয়া সেখানে আসিয়া উপস্থি গু হইলেন । ইতাকে দেখিয়া আমাদের মুখ শুকাইয়া গেল। আমরা তখন তাড়াতাড়ি আমাদের লুচি মাংস হাতে তুলিয়া লইলাম । আমরা চলিয়া যাইবার আয়োজন করিতেছি দেখিয়া সেই ব্যক্তি বলিলেন—সাজ্জা কি বাবা তোমরা যা কর্তে এসেছ, আমিও তাই কষ্ট্রেই এসেছি। তাহাকে দেখিয়াই আমাদের পিত্তি শুকাইয়া গিয়াছিল । আমরা সেখানে আর তিলাদ্ধ অপেক্ষ না করিয়া চুটিয়া সদর রাস্তায় আসিয়া হাফ ছাড়িয়া বাচিলাম । তারপর সমস্ত হইল, কোথায় বসিয়া খাইব । বাসায় লইয়া যাইবার হুকুম নাই, রাস্তায় দাড়াইয়া লুচি মাংস খাওয়া যায় না । আমাদের বাসার সামনেই এক প্রতিবেশীর বৈঠকখানা ঘরের পাশে একটা রোয়াক ছিল, সেখানে যাইয় কোনও মতে খাওয়া গেল ; তারপর বাসায় যাইয়া ঘরের কুঁজার জলে সেই খাদ্য গলাধঃকরণ করিলাম। ঐ রোয়কটা প্রতিদিন প্রত্যুষে মিউনিসিপ্যালিটির কৰ্ম্মচারীদের যে কাজে লাগিত, সে কথা মনে না করাই ভাল । ( ক্রমশঃ }