পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮ম সংখ্যা । ] --,, প্রত্যেকের কাছে গিয়া সাস্তুনার কথা কহিছেন, করিছেন আশীৰ্ব্বাদ সবে। এইরূপে অগ্রসরি উপনীত তিনি মলিনা নলিনী যেথা পিতার সহিত । বীরবল বাক্যশূন্ত, নিজীবের প্রায় চাহিয়া রয়েছে সেই অগ্নিশিখা পানে । নলিনী কাতরে কহে সাত্বনার কথা, কখনো আহার দ্রব্য হাতে তুলে লয়ে আহার করিতে কহে, সকলি বিফল বাকশূন্ত বৃদ্ধ শুধু নীরব নিশ্চল। কহিলেন পরোহিত “উঠ বীরবল।” আর সরিল না কথা সে কম্পিত কণ্ঠে, হেরি সে বিষাদপূর্ণ বিষন্ন আনন, আদর্শ শোকের যেন চিত্ৰপট খানি। স্থাপিয়া আপন হস্ত নলিনীর শিরে চাচি অশ্রপূর্ণ নেত্রে বিমল তারকাময় গগনমণ্ডলে, ফুল্ল পুষ্প সম বালিকার তরে, যাচিলেন আশীৰ্ব্বাদ । তার পর ধীরে বসে নিকটে তাহার নীরবে বর্ষিলা অশ্র দয়ার আধার। সহসা দক্ষিণ হতে উঠিল জলিয়া আলো শিখা, শরতের পূর্ণশশী সম, যেন স্বচ্ছ আকাশের প্রাচীরের গায় সহস্র কিরণ রাশি পড়িছে ছড়ায়ে । উচ্চ শৈলে প্রান্তরেতে নদ নদী বুকে । সেই মত অগ্নি শিখ, ধীরে ধীরে জলি ক্রমশঃ পড়িল, গ্রাম বাসী গৃহ হতে বাহিরায় ধূম শিখা। সেই আলো রাশি আকাশে ফুটেছে যেন, সমুদ্রের বুকে , ভাসিতেছে। ক্রমে বাড়িতে লাগিল শিখা ধু ধু করি জলে যায় গৃহ গুলি সব। তুরস্তু পবনে শিখা, ছিন্ন ভিন্ন হয়ে ছড়ায়ে পড়েছে যেন শত শত গৃহ এইরূপে জলিতেছে অনল শিখায় । এই দৃপ্ত দেখে বসি সমুদ্রের কুলে 8이S) সমস্বরে “হায় হায় এই গ্রামে আর দেখিব না আমাদের যতনের গৃহ।” হেরি আলো শিখা ভাবি হয়েছে প্রভাত’ নীরব বিহঙ্গকুল করিছে কুজন । ভীত পশু পাল সব আকুল কণ্ঠেতে জানায় প্রাণের ভয় । মুক্ত অশ্বপাল ত্রস্ত ভাবে ছুটিতেছে দুর্গম কাননে, ভাঙ্গিয়া প্রাচীর দ্বার, পদতলে দলি শু্যাম শস্যক্ষেত্র গুলি । কত না যতন করিয়াছে গ্রামবাসী যাহার কারণ। সেই দৃশ্যে বিচলিত হয়ে পুরোহিত চাহিলা তাহার পানে। ব্যাকুলা নলিনী দেখিছে আতঙ্কে সেই দৃষ্ঠ ভয়ঙ্কর। সহসা ফিরিয়া চায়, যেথা পিতা তার বসিয়াছিলেন ; সমুদ্রের কুলে হায় প্রাণ হীন দেহ তার রয়েছে পড়িয়া । পুরোহিত ধরিলেন উঠাইয়া শির, দেখিলেন প্রাণহীন। নলিনী বিবশ কঁাদিছে আকুল দুঃখে, সহসা বালিকা জ্ঞানশূন্ত মৃত প্রায় পড়িল ধূলায়। সেই ভাবে অচেতনে মৃত পিতৃবক্ষে রাখি শির সারানিশি রহিল পড়িয়া । প্রভাতে মেলিয়া আঁখি দেখে চারিদিক, শোকপূর্ণ মুখে সবে চারিদিক ঘিরে রেখেছে সে মৃত দেহ । সকলের আঁখি অগ্রপূর্ণ। এখনও দেখা যায় দূরে অনলের রাঙা শিখা প্রাস্তরের পরে, আকাশ হয়েছে রাঙা সেই আলো দিয়া, সেই ছায়া মানবের মুখে প্রভাসিত। শুনিল নলিনী কহে পরিচিত স্বরে গ্রামবাসী সবে “হেত এই সিন্ধু কুলে হউক সমাধি তার। কখনো আমরা যদি ফিরে আসি হেতা, শেষ ধুলি তার