পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ce সাহায্য মাত্র ; এরূপ সাহায্য শিশু, বৃদ্ধ, রুগ্ন, অশক্ত লোকদিগের পক্ষে ; এবং সামাজিক অবস্থা ব্যবস্থার জন্ত যাহার কোন প্রকার কায্য করিয়া সাহায্য লক্টতে অক্ষম, যেমন পরদানসিন স্ট্রীলোকদিগের জন্ত । (২) যাহা পরোক্ষভাবে ভবিষ্ণু মঙ্গলপ্রস্থ হয়, যেমন পথ ও রেল তৈয়ারি । এবং (৩) যাঙ্গ প্রত্যক্ষ কল্যাণকর, যেমন কুপ খনন, বtধ দ্বারা জল রক্ষা, ক্ষেত্র সেচন ব্যবস্তা, থাল তৈয়ারি, , প্রভৃতি যাহা ভবিষ্ণু দুর্ভিক্ষের প্রতিরোধক ও শস্তোৎপাদন কার্য্যে সহায়’ । ১৯০০ সালে বড়োদার রাধ এই তৃতীয় উদ্দেশ্য লক্ষ্য করিয়াই প্রস্তুত হইয়াছিল। সেই ১৯০০সালেই মহারাজ যুরোপভ্রমণে গমন করেন । সেই সময় হইতে তিনি লোকপরিচিত ইষ্টতে আরম্ভ করেন। আমাদের দেশের রাভ বর্গ সম্বন্ধে আমাদের একটা উৎকট ধারণা আছে । একদল একেবারে জাতীয়তা বর্জত পোনে ষোল আন সাহেব ; আর একদল অন্তদার সঙ্কীর্ণচন্তু গোড়া । মহারাজ গায়ক বাড় যপন বিলাত গেলেন, তখনো তাহার প্রকৃতি কেহ জানিত না ; একজন মহারাষ্ট্রীয় রাজাকে হঠাৎ সকল সঙ্কীর্ণত পরিহার করিয়া বিলাতযাত্রী দেগিয়৷ লোকে আশ্চর্য্য হষ্টয়াছিল এবং জাতীয়তা নষ্ট করিয়া সাহেব সাজিতে দেখিবার ভয় হইয়াছিল। কিন্তু মহারাজা সকল আশঙ্কা মিথ্যা করিয়া দিয়াছেন ; এমন জাতীয়তা রক্ষণশীল স্বদেশী মহারাজা আমাদের দুর্ভাগ্যক্রমে অতি বিরল । এই সময়ে মহারাজা বক্তারূপে, দেশব্রতরূপে পরিচিত হইয়া উঠিলেন। ১৯০২ সালে আহম্মদাবাদের কংগ্রেস সংলগ্ন প্রদর্শনী উদঘাটন করিয়া তিনি সকলকে চমৎকৃত করেন ; লোকের ধারণ ছিল কংগ্রেসের নামলিপ্ত বিষয় হইতে ভারতের ভূস্বামীগণ, কি নাম গোত্রহীন জমিদার আর কি করদ-ভূপতি, জলাতঙ্ক রোগীর মত চমকাইয়া পশ্চাৎপদ হইতে থাকেন। মঙ্গরাজ গায়কবাড়ের নির্ভীক সদৃষ্টাস্তে আমরা বাংলার প্রধান প্রধান জমিদার মহাশয়দিগকে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সাহায্যকারী পঠিয়া উপরুত হইয়াছি। সেই সময় হইতে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্ক ভিন্ন ( কারণ সেরূপ করিতে ভারতগভর্ণমেণ্টের নিযেধ আছে ) কংগ্রেসের অদ্যান্স ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট থাকিতেছেন । মহারাজের বাক্যের সহিত কৰ্ম্মের বিলক্ষণ সামঞ্জস্ত দেখা যায় । তিনি স্বদেশের শিল্পপণ্যের উন্নতির জন্ত যে সকল উপদেশ দিয়াছেন তাহ যেমন আমাদের প্রণিধান-যোগ্য, তিনি স্বীয় রাজ্যমধ্যে নানাপণ্যের কল স্থাপন করিয়া, নুতন শিল্প প্রচলনের চেষ্টা করিয়া, স্বদেশী বস্তুর ব্যবহার দ্বারা স্বদেশীর মর্য্যাদা বৃদ্ধি করিয়া, বাক্যে, কৰ্ম্মে আমাদের আদর্শ হইয়াছেন । স্বীয় রাজ্যে রেশমচাযের ব্যবস্থা করিবার জন্ত ৮ নৃত্যগোপাল মুখোপাধ্যায় মহাশয় দ্বারা দেশের অবস্থা পরীক্ষা করাইয়াছেন ; এই নূতন শিল্প শীঘ্রই গৃহীত হইবে। প্রবাসী । ৭ম ভাগ। বড়োদার স্বনাম প্রসিদ্ধ কলাভবন নানা বিষয়ে কারিগরী শিক্ষা দিয়া প্রজাপুঞ্জকে জীবনসংগ্রামের উপযুক্ত করিতেছে। মিউজিয়মে যে কত শিক্ষণীয় সামগ্রী সংগৃহীত হইয়াছে, তাহা যে দেখিবে সেই মহারাজের শিক্ষানুরাগ দেখিয়া মুগ্ধ হইবে । বড়োদার কলেজও অতি উৎকৃষ্ট । ১৯০৩ ( ? ) সালে মহারাজা ও মহারাণী যখন কলিকাতায় গিয়াছিলেন, তখনই বাংলায় নবজীবনের সূত্রপাত । শ্ৰীমতী সরলা দেবীর শক্তিসংঘ বীরভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া বলচর্চা করিতেছে, শিবাজা উৎসব, উদয়াদিত্য উৎসব প্রভৃতিতে বীরপূজা অনুষ্ঠিত হইতেছে, মদনমোহন ত্রিভঙ্গিমঠাম বংশধারী শ্ৰীকৃষ্ণের পরিবর্তে অর্জুন-সারথি শ্ৰীকৃষ্ণের ( জ্ঞান ও বলের সমন্বিত মুৰ্ত্তির ) পূজা হইতেছে, রঙ্গমঞ্চে ভাষণ জনতার সম্মুখে রাতের পর রাত প্রতাপাদিত্য প্রভৃতি অভিনীত হইয়া বাঙালীর পিতৃধনের পরিচয় দিতেছে, বাস্তবিক তখন “নবজীবনের পসরা বহিয়া এসেছে কালের তরণ", এবং তখন মহারাজ গায়কবীড় বঙ্গের বলকেন্দ্র কলিকাতায় উপস্থিত হইয়াছেন । এষ্ট দেশহিতেচ্ছ স্বাধীনপ্রাণ মহারাজকে অভ্যর্থনা করিয়া হৃদয়ের শ্রদ্ধা ও মাদ্য দেখাইবার জষ্ঠ যে কিরূপ হুড়াহুড়ি লাগিয়াছিল, তাহার ইয়ত্ত নাই। সৌভাগ্য ক্রমে আমি তিন স্থানে উপস্থিত ছিলাম ; বঙ্গীয় ভূম্যধিকারী সভায়, শ্ৰীযুক্ত জানকী ঘোষাল মহাশয়ের গৃহে ও সঙ্গীত সমাজে প্রথম যখন তাহাকে দেখিলাম, তখন তদ গুগামী চাপরাসীকেই মহারাজ স্থির করিয়াছিলাম ; কারণ তাহার পোষাক পরিচ্ছদের বাহারই বা কি এবং তাঙ্গার দেমাকভরা চলিবার কায়দাই বা কি, সকলষ্ট রাজেচিত ছিল ; আর তাঙ্গর পশ্চাতে সাদা চুড়িদার পায়জামা ও মুনিদার চাপকান পরিয়া, লাল শালু কাপড়ের পাগড়ী বাধিয়া বিনয়নম ছোট মানুষটি ভিড়ের মধ্যে আপনাকে হারাষ্টয়া দিয়া আসিতেছেন যিনি, তিনি ত’ ঠিক মাড়োয়ারি পটির চিরপরিচিত কাপড়ের দালালের মত। হায় নিবোধ আমরা মহত্ত্বের আত্মবিলোপ দেখিয়া ভ্রান্ত হইব আশ্চৰ্য্য কি ? সৰ্ব্বত্রই তাহার চিত্তরঞ্জনার্থ তামাসার আয়োজন ছিল, কিন্তু ঠাহীকে সেদিকে মনোযোগী দেখি নাই, সৰ্ব্বদা কাজের কথা লষ্টয়া ব্যস্ত, সৰ্ব্বদা বিনীত উপদেশ লক্টয়া প্রস্তুত । ঘোষাল মহাশয়ের নাড়ী ছোট ছোট বালকদের তরবারি ক্রীড়া দেখিয়া সস্তুষ্ট হইয়া বালকদিগকে ডাকিয় তাহীদের পেশী পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছিলেন । তাহার দৃষ্টি বর্তমানে আবদ্ধ নহে, দূর ভবিষ্যৎ পর্যান্ত প্রস্থত ; তাহার চিত্ত উপায় দেখিয়া সস্তুষ্ট নহে সিদ্ধির জন্য ব্যগ্র । তিনি কিরূপ জাতীয়তাপূর্ণ স্বদেশ তাহা একটি দৃষ্টান্তে বেশ বুঝা যায়। সেই সময় কলিকাতার কোন ধনীগৃহে তাহার নিমন্ত্রণ হয় । সদ্য বিলাত প্রত্যাগত মহারাজের জন্ত সেই ধনী বিলাতী থানার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।