পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণী ও উদ্ভিদের বিষ
১৪৯

 কাঁটা হানিয়া বা নখ দিয়া আঁচড়াইয়া প্রাণীরা যে বিষ শত্রুর দেহে প্রবেশ করাইয়া দেয়, তাহার প্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য বৈজ্ঞানিকগণ অনেক পরীক্ষা করিয়াছেন। আশ্চর্য্যের বিষয় বিছুটি প্রভৃতি উদ্ভিদের বিষে যে ফর্‌মিক্ এসিড দেখা গিয়াছে, ইহাতেও তাহাই ধরা পড়িয়াছে। স্নায়ুমণ্ডলীকে অসাড় করিয়া দেওয়া ফর্‌মিক্ এসিডের একটা প্রধান কার্য্য। বিষের সহিত এই জিনিষটা মিশ্রিত থাকায় দুর্ব্বল প্রাণীদিগকে শিকার করার কার্য্যে ইহা খুবই সাহায্য করে। কাঁচপোকা যখনি বৃহৎ আরসুলাকে শিকার করিতে যায়, তখন কোন গতিকে আরসুলার গায়ে একবার হুল ফুটাইতে পারিলেই সেটি ঐ ফর্‌মিক্‌ এসিড দ্বারা পক্ষাঘাতের রোগীর মত্ত অবশাঙ্গ হইয়া পড়ে। তা’র পর কাঁচপোকা উহার সুঁয়ো ধরিয়া অনায়াসে যথেচ্ছা লইয়া যাইতে পারে।

 মৌমাছি ও ভীমরুলের ন্যায় বিচ্ছুর বিষও তাহাদের পুচ্ছে থাকে। ইহাদের সম্মুখের দুটা দাঁড়া এবং দাঁত একেবারে নির্বিষ। পুচ্ছের প্রান্তস্থিত ধারালো হুল এবং তৎসংলগ্ন ক্ষুদ্র বিষকোষই ইহাদের আত্মত্রাণের মহা অস্ত্র। সূক্ষ্মাগ্র হুলটিকে ইহারা অতি সাবধানে কুণ্ডলী পাকাইয়া উপরে উঠাইয়া রাখে, তা’র পর শত্রুপক্ষ সম্মুখে আসিলেই তাহা দেহে বিদ্ধ করিয়া দেয়।

 জেলি মৎস্য (Jelly fish) নামক এক প্রকার সামুদ্রিক প্রাণীর দেহেও বিষ আবিষ্কৃত হইয়াছে। ইহাদের হুল বিষদন্ত বা শিঙ্গি মাছের মত বিষময় কাঁটা কিছুই নাই। দেহ হইতে মাকড়সার সূত্র অপেক্ষাও সূক্ষ্ম বিষপূর্ণ সুঁয়ো বাহির করিয়া ইহারা শত্রুকে আঁকড়াইয়া ধরে। সুঁয়োর বিষে শত্রুর দেহে বিছুটির মত যন্ত্রণা উপস্থিত হয়। এই জন্য জেলি-মৎস্য সামুদ্রিক বিছুটি (Sea Nettles) নামে অভিহিত হইয়া থাকে।