পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
প্রাকৃতিকী

হইলেই হইল, জৈব পদার্থকে আমরা ভাঙ্গিতে পারি কিন্তু গড়িতে পারি না।

 একটা উদাহরণ দিয়া কথাটা বুঝানো যাউক। জল একটা অজৈব জিনিষ। বিজ্ঞানাগারে ইহাকে বিশ্লেষ করিলে, দুই পরমাণু হাইড্রোজেন্ ও এক পরমাণু অক্সিজেন্ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এখন যদি আমরা দুই পরমাণু হাইড্রোজেনের সহিত এক পরমাণু অক্সিজেন্ মিশাই তাহা হইলে ঠিক এক অণু প্রমাণ জল গড়িয়া তুলিতে পারিব। কিন্তু জৈব পদার্থে এই প্রকার সংগঠন-কার্য্য চালানো যায় না। চিনি একটা জৈব পদার্থ, আমাদের দেশে প্রধানত ইক্ষুরস হইতেই ইহার উৎপত্তি। জিনিষটাকে বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে ভাঙ্গিলে, বারো পরমাণু অঙ্গার, বাইশ পরমাণু হাইড্রোজেন্ এবং এগারো পরমাণু অক্সিজেন্ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এখন যদি কেহ অঙ্গার, হাইড্রোজেন্ ও অক্সিজেনকে ঠিক ঐ প্রকারে ওজন করিয়া মিশাইয়া চিনি প্রস্তুত করিতে চেষ্টা করেন, তাহা হইলে একটা কিম্ভূতকিমাকার জিনিষ প্রস্তুত হয়, চিনি হয় না। হিতোপদেশের রাজপুত্র মৃত পশুর অস্থি যোজনা করিতে পারিতেন, শুষ্ক অস্থিতে মাংসও লাগাইতে পারিতেন, পারিতেন না কেবল প্রাণ দিতে। আমাদের বৈজ্ঞানিকগণ হাড়, মাংস, প্রাণ কিছুই প্রস্তুত করিতে পারেন না। পারেন কেবল ভাঙ্গিতে। প্রকৃতিদেবী অন্তঃপুরে বসিয়া কি কৌশলে আমাদের অতি সুপরিচিত অক্সিজেন্, নাইট্রোজেন্, হাইড্রোজেন্, অঙ্গার প্রভৃতিকে মিলাইয়া, লতাপাতা পুষ্পফল নরবানর গড়িতেছেন, তাহা আমাদের বৈজ্ঞানিকগণ আজও জানিতে পারেন নাই। জীবনসৃষ্টির কৌশল এক প্রকৃতিই জানেন। আধুনিক বৈজ্ঞানিক দুই চারিটি জৈব পদার্থ বিজ্ঞানাগারে প্রস্তুত করিয়াছেন সত্য, যথা,—রেশম, কর্পূর, নীল, রবার,—কিন্তু আসল জিনিষের সহিত এই এই কৃত্রিম দ্রব্যগুলির অবিকল মিল দেখা