পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রকৃতির বর্ণ-বৈচিত্র্য
১৬৫

একটি ফুলকে লাল এবং অপরটিকে সাদা করায় প্রকৃতির কোন্ উদ্দেশ্য সফল হইতেছে, তাহারও কিনারা হয় না। সমগ্র বর্ণতত্ত্বটাই মনে হয় যেন আজও রহস্য যবনিকার অন্তরালে আছে।

 যাহা হউক পশুপক্ষী ইত্যাদির বর্ণবৈচিত্র্যের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করিতে গিয়া আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ যে একটা তত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছেন, আজকাল কাগজপত্র সভাসমিতি ও কথাবার্ত্তায় তাহার উল্লেখ দেখা যাইতেছে। তত্ত্বটা এই যে, পশুপক্ষী কীটপতঙ্গ প্রভৃতি ইতর প্রাণীর গায়ে যে নানা রঙ্‌ দেখা যায়, তাহা কেবল প্রবল শত্রুর কবল হইতে দুর্ব্বল প্রাণীদিগকে রক্ষা করিবার একটা ব্যবস্থা মাত্র। পক্ষীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াইয়া জীবিত থাকিবার জন্যই ঘাসের ভিতরকার ফড়িঙের রঙ্ সবুজ এবং শুষ্ক তৃণমধ্যস্থ ফড়িঙের রঙ্ পাটল হইয়াছে। শিকারী জন্তুর খরদৃষ্টি এড়াইয়া নিরীহ শশকের টিকিয়া থাকা বড় সহজ নয়। এই প্রাণিকুলকে শত্রুর গ্রাস হইতে রক্ষা করিবার জন্যই প্রকৃতি তাহাদের দেহ শুষ্কতৃণের বর্ণের ন্যায় লাল্‌চে লোমে আবৃত রাখিয়াছেন; একবার শুষ্ক লতাপাতার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিলে, শিকারী মানুষ বা শিকারী জন্তু শশককে চিনিয়া বাহির করিতে পারে না। বহুরূপী সরীসৃপ এবং কয়েক জাতীয় ভেক ক্ষণে ক্ষণে নিজেদের বর্ণ পরিবর্ত্তন করিতে পারে। ইহার কারণ প্রসঙ্গেও জীবতত্ত্ববিদ্‌গণ ঐ কথাই বলেন;—বহুরূপী যখন আহারান্বেষণে ডালে ডালে বেড়ায় তখন তাহার গায়ের রঙ সবুজ থাকে এবং মাটীতে নামিলেই রঙ্ ঠিক্ মাটীর রঙের মত হইয়া দাঁড়ায়।

 কিপ্রকারে এইসকল প্রাণী ক্ষণে ক্ষণে বাহিরের রঙের সহিত নিজেদের রঙ্ মিলাইয়া আত্মত্রাণ করে তাহা আবিষ্কার করিবার জন্য চেষ্টার ত্রুটি হয় নাই। পাঠক অবশ্যই অবগত আছেন, প্রাণীর চর্ম্মে এক প্রকার বর্ণকোষ থাকে, তাহাতে যে বর্ণসঞ্চিত হয় প্রাণীর চর্ম্মও