পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
প্রাকৃতিকী

ঠিক্ সেই বর্ণে রঞ্জিত হইয়া পড়ে। আমাদের গায়ের বর্ণকোষের রঙ্ কালো না হউক কতটা ময়লা; তাই আমাদের রঙ্‌টাও ময়লা। শীতপ্রধান দেশের অধিবাসীদের বর্ণকোষের রঙ্ শ্বেত, তাই তাহাদের গায়ের রঙ সাদা। যাহা হউক, প্রাচীন পণ্ডিতগণ বহুরূপীর বর্ণ পরিবর্ত্তনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়া বলিতেন,—এই প্রাণিগণ যখন কোন বিশেষ বর্ণযুক্ত পদার্থের মধ্যে আসিয়া লুকায়, তখন চারিপার্শ্বের রঙ্ প্রতিফলিত হইয়া তাহাদের গায়ে লাগিতে আরম্ভ করে, এবং ইহাতেই তাহাদের গায়ের বর্ণকোষের রঙ্ পরিবর্ত্তিত হইয়া ঠিক পার্শ্ববর্ত্তী পদার্থের রঙের অনুরূপ হইয়া দাঁড়ায়। কিন্তু আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ এখন আর এই সিদ্ধান্তটিকে গ্রাহ্য করিতেছেন না। ইঁহারা বলিতেছেন, বহুরূপী তাহার চক্ষু দ্বারা যে বর্ণ দেখে, তাহা মস্তিষ্কের এক নির্দ্দিষ্ট অংশকে উত্তেজিত করে এবং পরে এই উত্তেজনা বিশেষ স্নায়ুমণ্ডলীর দ্বারা চর্ম্মের বর্ণকোষগুলিতে নীত হইলে গায়ের রঙ্ বদলাইয়া যায়।

 আধুনিক সিদ্ধান্তটিই যে অভ্রান্ত কয়েকজাতীয় বহুরূপী প্রাণীর দেহব্যবচ্ছেদ করিয়া প্রসিদ্ধ জীবতত্ত্ববিৎ ডাক্তার ওয়ের (Dr. Weir) তাহা দেখাইয়াছেন। ইনি বিষপ্রয়োগ করিয়া কয়েকটি বহুরূপীর মস্তিষ্ক অসাড় করিয়া ফেলিয়াছিলেন, ইহার ফলে উহাদের বর্ণপরিবর্ত্তনশক্তি লোপ পাইয়াছিল। তা ছাড়া তিনি আরো দেখাইয়াছিলেন যে, বহুরূপী জাতীয় যে-সকল প্রাণীর দৃষ্টিশক্তি কম, তাহারা কখনই সহজে বর্ণপরিবর্ত্তন করিতে পারে না। কাজেই এখন স্বীকার করিতে হইতেছে, চারিপার্শ্বের বর্ণ রশ্মি চক্ষুতে আঘাত করিলে মস্তিষ্কের স্থানবিশেষে যে উত্তেজনা উপস্থিত হয়, তাহাই স্নায়ু দ্বারা সর্ব্বাঙ্গে পরিবাহিত হইলে দেহের বর্ণপরিবর্ত্তন ঘটে।

 বহু গবেষণা ও পর্য্যবেক্ষণের পর এই সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা হইলেও এখন ইহার সাহায্যে কেবল কতকগুলি প্রাণীর বর্ণপরিবর্ত্তনের ব্যাখ্যা