পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রকৃতির বর্ণ-বৈচিত্র্য
১৬৭

পাওয়া যাইতেছে। পতঙ্গ জাতীয় প্রাণিগণ পক্ষযুক্ত হইবার পূর্ব্বে কিছুদিন স্বরচিত আবরণের মধ্যে নিদ্রিত থাকে। এই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ভিতরে ভিতরে দেহের পরিবর্ত্তন হইলে তাহারা প্রজাপতির আকারে গুটি বা আবরণ ভেদ করিয়া বহির্গত হয়। পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে, এই বিনিদ্র অবস্থাতেও পতঙ্গের গাত্রাবরণের বর্ণ পরিবর্ত্তিত হয়। বলা বাহুল্য, জীবনের এই অবস্থায় প্রজাপতিদের দৃষ্টিশক্তি থাকে না, তথাপি ইহারা, কি প্রকারে পার্শ্বের রঙের সহিত নিজের দেহের রঙ মিলাইয়া অবস্থান করে, তাহার ব্যাখ্যান পূর্ব্বোক্ত সিদ্ধান্ত হইতে পাওয়া যায় না। মেরু প্রদেশের জীবজন্তুর বর্ণ প্রায়ই শ্বেত। এই ব্যাপারের ব্যাখ্যানেও বলা যায় না যে, চারি পার্শ্বের তুষাররাশির সহিত বর্ণ মিলাইয়া রাখিবার জন্য ইহারা বহুরূপীর মত নিজেদের বর্ণ পরিবর্ত্তিত করে। বৈজ্ঞানিকগণ ইহার অপর ব্যাখ্যান দিয়া থাকেন। সূর্য্যালোকই যে অনেক জীবদেহে রঙ্ ফলায় তাহার প্রমাণ আছে;—অন্ধকার ঘরে একটি গাছ রাখিয়া দাও, কয়েকদিন পরে তাহার ডাল ও পাতার রঙ্ স্পষ্ট সাদা দেখা যাইবে। এই প্রকার প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া প্রাণিতত্ত্ববিদ্‌গণ বলেন, মেরু প্রদেশের আকাশ প্রায় সর্ব্বদাই মেঘ বা তুষারকণিকায় আচ্ছন্ন থাকে, এজন্য সে দেশে সূর্য্যালোক দুর্লভ। কাজেই ইহাতে জীবজন্তুর বর্ণ সাদা হওয়া বিচিত্র নয়। গ্রীষ্মপ্রধানদেশে অপর্য্যাপ্ত সূর্য্যালোকে যত বিচিত্র বর্ণের পুষ্পপত্র জন্মায়, শীতপ্রধানদেশে তত দেখা যায় না। ইহাও বৈজ্ঞানিকদিগের পূর্ব্বোক্ত উক্তির প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করা যাইতে পারে। কিন্তু তাই বলিয়া এই অনুমানটিকে সকল স্থানে প্রয়োগ করা যায় না। গভীর জলে সূর্য্যালোক প্রবেশ করে না, অথচ সেইসকল স্থানের মৎস্য প্রভৃতিকে বিচিত্রবর্ণে রঞ্জিত দেখা যায়। প্রাণীর রক্ত লাল, কিন্তু ইহা কখনই সূর্য্যার মুখ দেখে না; নির্জীব জিনিষকে যদি টানিয়া লওয়া যায়, তাহা হইলে যে-সকল আকরিক প্রস্তর