পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
প্রাকৃতিকী

ভূগর্ভের অন্ধকারে থাকিয়া বিচিত্র বর্ণ প্রাপ্ত হয়, তাহাদের বর্ণোৎপত্তির কারণ খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। মুসুরি খেঁসারি, ও মটরের ডাল আজন্ম বীজকোষের মধ্যে আবৃত থাকিয়া কেন এত সুন্দর রঙে রঞ্জিত হয়, তাহারো কারণ নির্দ্দেশ করা যায় না।

 যাহাই হউক শত্রুর গ্রাস হইতে রক্ষা করিবার জন্য যে, কতকগুলি প্রাণীর দেহে বিচিত্র বর্ণ যোজিত হইয়াছে তাহা স্বীকার করিতেই হইতেছে, কিন্তু তাই বলিয়া রঞ্জিত জীবমাত্রেরই দেহাবরণের বর্ণ তাহার আত্মরক্ষার জন্য উৎপন্ন হইয়াছে একথা বলা যায় না। সামুদ্রিক জলচর পক্ষীমাত্রেরই বর্ণ শ্বেত। ঈগল পাখী সাদা, আমাদের দেশের বক সাদা। এই শ্বেতবর্ণকে কখনই আত্মরক্ষার ছদ্মবেশ বলা যায় না। গল্ যখন নীলসমুদ্রে ভাসে, তখন তাহাকে চিনিয়া লইতে শত্রুপক্ষের অণুমাত্র কালবিলম্ব হইবার সম্ভাবনা থাকে না। স্থলচর পক্ষীদের ত কথাই নাই;—কাক, কোকিল, শালিক, ফিঙে, হাঁড়িচাচা, মাছরাঙা, চন্দনা, ময়ূর, মোরগ, পায়রা, ঘুঘু, নীলকণ্ঠ, প্রভৃতি পক্ষীর পালকের বর্ণ তাহাদের পরম শত্রু। আমাদের সুপরিচিত পাখীদের মধ্যে কেবল টিয়ার রঙ গাছের রঙের মত সবুজ এবং ছাতারে ও চড়াইয়ের রঙ মাটির রঙের মত মেটে।

 প্রাণী ছাড়িয়া উদ্ভিদের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেও যথেষ্ট বর্ণ-বৈচিত্র্য দেখা যায়। গাছপালায় লতাপাতা পুষ্পফলের বর্ণলীলা দেখিয়া সত্যই অবাক্ হইতে হয়। কিন্তু কোন্ শক্তির অধীন হইয়া এবং কোন্ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রত্যেক ঋতুতে উহারা নব নব উৎসববেশে সজ্জিত হইতেছে তাহা স্থির করা বড় কঠিন। বর্ষার শেষে, শীতে ও বসন্তে যেসকল ফুল ফোটে প্রায়ই তাহাদের রঙ সাদা হয়, শেফালি, গন্ধরাজ, মাধবী, মল্লিকা, কুন্দ, চামেলি, মালতী, ইহাদের সকলেরি রঙ্ সাদা! গ্রীষ্মের ফুল,—চাঁপা, অতসী, বলরামচূড়া, সোঁদাল, করবী প্রভৃতির