পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কেরোসিন্ তৈল

প্রায় ত্রিশ বৎসর পূর্ব্বে যখন আমাদের পরিবারে কেরোসিন্ তৈলের ব্যবহার প্রথম আরম্ভ হয়, তখনকার একটা ক্ষুদ্র ঘটনার কথা আজ মনে পড়িয়া গেল। আমাদের একটি অতি বৃদ্ধা ধাত্রী ছিল। প্রাকৃতিক বা অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারসম্বন্ধে খট্‌কা উপস্থিত হইলেই আমরা সেই বৃদ্ধার শরণাপন্ন হইতাম। ব্যাখ্যানপ্রদানে সে সিদ্ধবিদ্যা লাভ করিয়াছিল। মেঘের চলাচল, বজ্রপাত, বিদ্যুৎস্ফুরণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ব্যাপার হইতে আরম্ভ করিয়া ভূত প্রেত ব্রহ্মদৈত্যের আবির্ভাব প্রভৃতি অতিপ্রাকৃত ব্যাপারের ব্যাখ্যান তাহার জিহ্বাগ্রে থাকিত। তত্ত্বজিজ্ঞাসু হইয়া তাহার শরণাগত হইয়া, আমরা কখনই নিরাশ হই নাই। বৃদ্ধা কেরোসিন্ তৈল কোনক্রমে স্পর্শ করিত না, এবং আমাদিগকেও স্পর্শ করিতে দিত না। একদিন এই বিতৃষ্ণার কারণ-জিজ্ঞাসু হইয়া তাহার নিকট উপস্থিত হইয়াছিলাম। ধাত্রীর ব্যাখ্যানে জানিয়াছিলাম, দেশের সমস্ত মৃত জন্তুর গলিত দেহ কলের ঘানিতে ফেলিয়া সাহেবেরা যে তৈল বাহির করে, তাহাই কেরোসিনের রূপ পরিগ্রহ করিয়া বাজারে বিক্রয় হয়।

 কেরোসিন তৈলের প্রস্তুতপ্রণালীর পূর্ব্বোক্ত বিষরণটি বহুদিন ধরিয়া সত্য বলিয়া বিশ্বাস ছিল। অবশ্য এখন আর সে বিশ্বাস নাই। সুদূর পল্লীবাসীও এখন ঐ প্রকার একটা অদ্ভুত প্রস্তুতপ্রণালীতে বিশ্বাসস্থাপন করিবে না; কিন্তু কেরোসিনের উৎপত্তিতত্ত্ব জানিবার জন্য বিজ্ঞানগ্রন্থ খুলিলে আমাদের সেই বৃদ্ধা ধাত্রীর কথার সহিত একদল বৈজ্ঞানিকের উক্তির মুলে মিল দেখা যায়। কলের ঘানিতে