পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কেরোসিন তৈল
১৯১

মৃতদেহ পেষণ করিয়া সাহেবেরা তৈল বাহির করেন না, প্রকৃতিই ভূপ্রোথিত জীবদেহের উপর চাপ দিয়া কোন প্রকারে তৈল উৎপন্ন করিয়া থাকেন। আধুনিক বৈজ্ঞানিকদিগের উক্তির ইহাই সারমর্ম্ম।

 কেরোসিন তৈল যে একটা জৈব পদার্থ, তাহাতে আর সন্দেহ, নাই। বৈজ্ঞানিকদিগের মধ্যে সকলেই ইহাতে একমত হইয়াছেন। অনুসন্ধান করিলে দেখা যায়, পৃথিবীর যে-সকল অংশে অতি প্রাচীন কয়লার খনি আছে, কেরোসিন তৈল সেই সকল স্থানেই প্রচুর পাওয়া যায়; সুতরাং কয়লা যেপ্রকার ভূপ্রোথিত উদ্ভিদের দেহ হইতে উৎপন্ন হয়, কেরোসিনও সেই প্রকার যুগ-যুগান্তরের মাটিচাপা বৃক্ষাদি হইতে প্রস্তুত হয় বলিয়া সিদ্ধান্ত করাই স্বাভাবিক। উদ্ভিদশরীরে কেরোসিনের ন্যায় পদার্থের অভাব নাই। টার্পিন তৈল ধুনা প্রভৃতি দাহ্য বস্তু উদ্ভিদ্ হইতেই উৎপন্ন হইয়া থাকে। কাজেই বৃক্ষাদির যে-সকল অংশ হইতে টার্পিন্ প্রভৃতির উৎপত্তি হয়, তাহাই বহুকাল প্রোথিত থাকিয়া ভূ-গর্ভের চাপ ও তাপে যে শেষে কেরোসিন্ হইয়া দাঁড়াইবে, তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি?

 বৈজ্ঞানিকের নিকট হীরক ও কয়লা একই জিনিষ। বিশ্লেষণে এক অঙ্গার ব্যতীত অপর কোন জিনিষই হীরকে পাওয়া যায় না। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, কয়লাই বহুকাল ভূপ্রোথিত থাকিলে, পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ উত্তাপে ও উপরের মৃত্তিকার চাপে তাহার মলিনতা ঘুচিয়া যায়। ধরা-কুক্ষির বৃহৎ কর্ম্মশালায় কি প্রকারে কেবল চাপ ও তাপের সাহায্যে তুচ্ছ কৃষ্ণ অঙ্গার অতুজ্জ্বল ও বহুমূল্য হীরকে পরিণত হয়, তাহা জানা ছিল না। অল্পদিন হইল একজন ফরাসী বৈজ্ঞানিক কয়লাকে ভূগর্ভের অবস্থায় ফেলিয়া তাহাকে হীরকে রূপান্তরিত করিয়াছেন। বৃক্ষনির্য্যাসকে ঐ প্রক্রিয়ায় কেরোসিনে পরিববর্ত্তিত করিবার চেষ্টা চলিতেছে।