পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
প্রাকৃতিকী

পরম উপকারী উদ্ভিজ্জ-বস্তু দুর্লভ। দেহস্থ হইলে ইহা স্নায়ুমণ্ডলীকে উত্তেজিত করে, কিন্তু অপর উত্তেজক-পদার্থ গ্রহণ করিলে উত্তেজনার পশ্চাতে যে এক একটা অরসাদ উপস্থিত হয়, ইহাতে তাহার চিহ্নমাত্র দেখা যায় না। এটা বড় কম কথা নয়। সুরা, অহিফেন প্রভৃতি পদার্থ শরীরকে খুবই উত্তেজিত করে, কিন্তু উত্তেজনার শান্তি হইলে যে অবসাদ আসিয়া দেখা দেয়, তাহা পূর্ব্বের উপকার টুকুকে নষ্ট করিয়া মোটের উপর অপকারই আনিয়া ফেলে। এতদ্ব্যতীত প্রাণীর মস্তিষ্কের উপরে কাফিনের প্রভাব অতি আশ্চর্যজনক। কুচিলার সার অর্থাৎ স্ট্রিক‍্নাইন (Strychnine) জিনিষটা কখন কখন মস্তিষ্কের উত্তেজক ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু ইহা কখনই প্রত্যক্ষভাবে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করিতে পারে না। কাফিন্ জিনিষটা কোন প্রকার অবসাদের সূত্রপাত না করিয়া প্রত্যক্ষভাবে মস্তিষ্ক উত্তেজ়িত করিতে পারে।

 কাফিনের পূর্ব্বোক্ত গুণগুলির কথা শুনিলে চায়ের সহিত কাফিন‍্ভক্ষণে সুনিদ্রার ব্যাঘাত হইবার কথা আমাদের মনে পড়িয়া যায়। যাহা মস্তিষ্কের উত্তেজক তাহাই অনেক সময়ে সুনিদ্রার বিঘ্নকর, কাজেই চা জিনিসটাকে নিদ্রানাশক বলিতেই হইতেছে। কিন্তু চা’য়ের বহু গুণের মধ্যে এই ক্ষুদ্র দোষটুকু গুণগুলিকেই উজ্জল করিতেছে বলিয়া চা-পায়ী পাঠক সান্ত্বনা পাইতে পারিবেন। তাছাড়া যে চা কাফি আমরা প্রতিদিনই দুইবেলা ব্যবহার করিতেছি, তাহাকেই যখন অহিফেনসেবনে নিদ্রালু ও লুপ্তচেতন ব্যক্তিকে সজাগ করিয়া দিতে দেখা যায়, তখন বাস্তবিকই আনন্দ হয়। চা’য়ের যে ধর্ম্মটিকে সাধারণ লোকে দোষ বলিয়া মনে করেন, তাহাই সুচিকিৎসকের হাতে পড়িয়া গুণে পরিণত হয়।

 যাহা হউক, পূর্ব্বোক্ত আলোচনা হইতে স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে, আমরা প্রাতে উঠিয়াই যখন এক পেয়ালা চায়ের জন্য তাগিদ দিতে আরম্ভ করি, তখন গরম জল পানের ইচ্ছা এবং তাহারি সঙ্গে একটু