পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পৃথিবীর শৈশব
২৩১

পৃথিবী আমূল কঠিনাকার প্রাপ্ত হইয়াছিল। কিন্তু তখনও ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ কখনই সেণ্টিগ্রেডের এগারো শত সত্তর ডিগ্রির কম ছিল না, কাজেই সে সময়ে আকাশ এখনকার মত নির্ম্মল হইতে পারে নাই; প্রাথমিক বাষ্পের অবশেষ এবং জলীয় বাষ্প আকাশকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিত। পৃথিবীকে আমরা এখন যে আকারে দেখিতে পাইতেছি, তাহা এই সময়েই একে একে প্রকাশ পাইতে আরম্ভ করিয়াছিল। বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকগণ এই বিষয়টি লইয়া দীর্ঘ গবেষণা করিয়াছিলেন। তাঁহাদের মতে এই অবস্থাটি আজ হইতে অন্ততঃ দুই কোটী বৎসর পূর্ব্বে পৃথিবীতে দেখা দিয়াছিল। ভূপৃষ্ঠ কঠিনাকার প্রাপ্ত হইলেও তখন উহার উপরের কিছু দুর কর্দ্দমবৎ কোমল ছিল ইহা স্বীকার করিতেই হয়। কাজেই ভূপৃষ্ঠের যে অংশে আকাশের চাপ অধিক গড়িত তাহা তখন নীচু হইয়া যাইত এবং যে-সকল স্থানের উপরে চাপ অল্প ছিল তাহা উঁচু হইত। ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থিত পাহাড়পর্ব্বতে এবং নদীসমুদ্রে এখন যে উঁচুনীচু ভাবটা সুস্পষ্ট হইয়া দাঁড়াইয়াছে, পৃথিবীর এই সময়টাকেই তাহার আরম্ভ বলা যাইতে পারে।

 পৃথিবী নিজের দেহের তাপ বর্জ্জন করিতে করিতে যখন ৩৭ ডিগ্রি পরিমিত উষ্ণ হইয়া পড়িয়াছিল, তখন ভূপৃষ্ঠের আর একটি বিশেষত্ব দেখা দিয়াছিল। আকাশের জলীয় বাষ্পরাশি তাপাধিক্যপ্রযুক্ত এ পর্য্যন্ত জমাট বাঁধিতে পারে নাই, কাজেই ভূ-পৃষ্ঠে বিন্দুপ্রমাণ জলেরও অস্তিত্ব ছিল না। এই সময়ে উত্তাপ ৩৭ ডিগ্রিতে নামিয়া পড়ায়, আকাশের জলীয় বাষ্পরাশি অত্যুষ্ণ বৃষ্টির ধারাকারে ভূতলে পতিত হইতে আরম্ভ করিয়াছিল, এবং তাহাই নিম্নভূমিতে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া আধুনিক সমুদ্রের ভিত্তি স্থাপন করিতেছিল।

 ভূপৃষ্ঠের অগভীর প্রাথমিক সমুদ্রগুলি কিপ্রকারে গভীরতর হইয়া