পুত্র না থাকিলে কন্যা অধিকারী এই কথা মনু নারদ উভয়েরই সম্মত (ঐ পৃ ১৯৪)। দুহিতাদের মধ্যে প্রথমে কুমারীরই দাবি, কুমারী কন্যা না থাকিলে বিবাহিত কন্যাও পাইবে (ঐ পৃ ১৯৫)। এ বিষয়ে পরাশরই মত দিয়াছেন[১]—কলিতে পরাশরমতই সকলের উপরে— ‘কলৌ পারাশরঃ স্বতঃ’। তবু বিজ্ঞানেশ্বর কন্যাদের অধিকার সমর্থন করিতে গিয়া পরাশরের এই বচন উল্লেখ করেন নাই, অথচ কাত্যায়ন ও বৃহস্পতির বচনের উপর নির্ভর করিয়াছেন।
বৈদিক যুগের শেষভাগে কন্যাদের দায়াধিকার যে যাইতে বসিয়াছিল তাহার ক্রমে একটু উন্নতি দেখা গেল যাস্কের যুগে। তিনি কন্যাদের অধিকারবিরোধী, এবং অধিকার-সমর্থক, উভয়দলের কথা লইয়া বিচার করিয়া অপুত্রের ধনের অধিকার কন্যাতে দিয়া সমস্যার মীমাংসা করিতে চাহিলেন। কৌটলীয় অর্থশাস্ত্রে দেখা যায়, নারীদের দায়াধিকার আর-একটু ভালো হইয়াছে। মনু প্রভৃতি স্মৃতিকর্তাদের সময়েও নারীদের দায়ের অধিকার অনেকটা স্বীকৃত হইল। কিন্তু বৈদিক যুগ হইতে ভারতে নারীদের সামাজিক স্থান যে সংকীর্ণ হইয়া আসিতেছিল তাহার আর উন্নতি হইল না। মনু নারীদের সম্বন্ধে ‘স্ত্রিয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু বিশেষোনাস্তি কশ্চন’ (৯. ২৬) বলিলেন। মনু বলিলেন, যে গৃহে নারীরা সুখী সে গৃহে দেবতারা প্রসন্ন,; স্ত্রীদের তিনি ‘রত্ন’ ও বলিলেন (২.২৩৮), স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রীতি থাকিলেই কল্যাণ (৩, ৬০)। তথাপি তিনি সামাজিকভাবে (২. ২৩৮) স্বামী ও স্ত্রীর অধিকারে সমতা দিতে রাজি ছিলেন না (৫. ১৪৭-১৪৯; ৯. ৩ ইত্যাদি)।
তার পর আসিল নিবন্ধকারদের যুগ। অর্থাৎ বিজ্ঞানেশ্বর, রঘুনন্দন প্রভৃতি সব আচার্যগণ নানা স্মৃতি তুলনা ও বিচার করিয়া দেশ ও কালধর্ম আলোচনা করিয়া যেসব ব্যবস্থাগ্রন্থ লিখিয়া গেলেন তাহাই নিবন্ধ। মাধবের লেখা ‘পরাশর’ টীকাগ্রন্থ হইলেও তাহা নিবন্ধের মতই বৃহৎ এবং সেইরূপ বিচার ও আলোচনায় পূর্ণ এবং তাহা নিবন্ধেরই মত সর্বত্রমান্য। ইহা চতুর্দশ শতাব্দীতে লেখা।
বঙ্গদেশে দায়বিষয়ে চলে জীমূতবাহনের দায়ভাগ, আর অন্যত্র প্রায় সর্বত্রই
- ↑ অপুত্রস্য মৃতস্য কুমারী রিক্থং গৃহ্ণীয়াৎ তদভাবে চোঢ়া। ঐ, ১৯৫