পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
প্রাচীন ভারতে নারী

দায়বিষয়ে মিতাক্ষরাই মান্য। মিতাক্ষরা রক্তের সম্বন্ধ দিয়াই দারাধিকারের ক্রম-ব্যবস্থা করিয়াছেন। দায়ভাগে পিণ্ডাধিকার দিয়াই বিচার। অর্থাৎ মিতাক্ষরার মতে রক্তসম্বন্ধে যেই যত ঘনিষ্ঠ তাহারই তত বেশি দায়াধিকার। আর দায়ভাগে জীমূতবাহন দেখিয়াছেন, শ্রাদ্ধে এবং পিণ্ডে কাহার দাবি বেশি। ‘সপিণ্ড’ কথাতে দুইই সূচিত হয়। পিণ্ডের অর্থ দেহও হয়।

 আসলে বৈদিক যুগের পর নারীগণের অধিকার যে ক্রমে একটু ভালো হইল তাহার কারণ এই পিণ্ড দিবার অধিকার।

 যুক্তির দিকেও দেখা যায়, নারীদের যদি স্বাধীনতা না-ই দেওয়া হয়, আর অভিভাবকের মৃত্যুর পর তাহারা যদি তাহার ধনাধিকারও না পায় তবে তাহাদের ভরণপোষণের হইবে কি? স্বাধীন উপার্জন অসম্ভব, কারণ স্বাধীনতা নাই। জ্ঞাতিরা পোষণ করিবেন এইরূপ শাস্ত্রীয় বিধান থাকিলেও হয়তো প্রত্যক্ষ দেখা গেল জ্ঞাতিরা পোষণ করেন না। তাহাতে পেটের জন্য নারীদের নানা নৈতিক অধোগতি স্বীকার করিতেই হয়। কখনও যাহাকে স্বাধীনতা দেওয়া হয় নাই, সাধু স্বাধীন অর্জনের কোনো পথই যাহার পক্ষে উন্মুক্ত নাই, তাহার পক্ষে হঠাৎ বিষম দশায় পড়িলে খুবই হীনবৃত্তি স্বীকার ছাড়া গতি কি? এমন করিয়াই অনেক ক্ষেত্রে পতিতাদের দলবৃদ্ধি হয়। বাল্যকালে কাশীতে দেখিয়াছি বহু বহু অভিজাতা নারী জ্ঞাতিদের ও পিতৃকুলের লোকের দ্বারা বৃত্তিবঞ্চিত হইয়া কাশীতে দাসী বা পাচিকার বৃত্তি গ্রহণ করিয়া জীবন কাটাইয়াছেন। কেহ কেহ ভিক্ষা করিতে বাধ্য হইয়াছেন। দুরবস্থায় পড়িয়া অনেকে পতিতা হইতেও বাধ্য হইয়াছেন। ইঁহাদের অনেকেরই নাম ধাম ও ইতিহাস সেখানে অনেকে জানিতেন। এইসব কারণেই হয়তো নিবন্ধকারগণের অনেকেই নারীদের দায়াধিকার অল্পবিস্তর সমর্থন করিলেন। অবশ্য সেক্ষেত্রেও পুরুষদেরই প্রাধান্য সর্বাগ্রে দেওয়া হইল।

 এখন তো প্রাচীন যুগের একান্নবর্তী-পরিবার-প্রথা ভাঙিয়াই গিয়াছে। চাকুরির জন্য ভদ্রলোকেরা সবাই এখন ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই। এখন যদি চাকুরির স্থলে কেহ মারা যান তবে একমুহূর্তে পরিবার নিরাশ্রয়। একান্নবর্তীপরিবার প্রথা-লোপের সঙ্গেসঙ্গে এই এক মহাসমস্যা দাঁড়াইয়াছে। ইহাতে যে দায়ে পড়িয়া কতস্থানে কত দুর্গতি ও দুর্নীতি বাড়িয়া চলিয়াছে তাহা বলা যায় না। অবস্থা দেখিয়া ব্যবস্থা না করিলে আর গতি নাই। এখনও যদি