পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীদের উত্তরাধিকার বিষয়ে ব্যবহার নির্ণয়
১১৯

 বরদরাজ বলেন, এইসব কথায় বুঝা যায়, ব্যবস্থাপকদের মতে বিধবা জ্ঞাতিদের কাছে খোরাকি মাত্র পাইবেন। দায়াধিকার বিধবার নাই, কিন্তু সেইসব কথায় কোনো যুক্তি নাই।

 বিষ্ণুর মতকে প্রমাণ করিয়া বরদরাজ বলেন, পুত্রহীন পরলোকগতের ধন পত্নীতেই যাইবে, পত্নী না থাকিলে দুহিতা, দুহিতার অভাবে পিতা অধিকারী—

 অনপত্যস্য প্রমীতস্য ধনং পত্ন্যভিগামি। তদভাবে দুহিতৃগামি। তদভাবে পিতৃগামি। তদভাবে মাতৃগামি। ইত্যাদি পৃ ৪৪৮

 বৃহস্পতি বলেন, ভার্যাসুতবিহীন পরলোকগতের ধনাধিকারিণী মাতা বা তদাজ্ঞায় ভ্রাতা—

ভার্যাসুতবিহীন্স্য পুরুষস্য মৃতস্য চ।
মাতা রিক্‌থহরা জ্ঞেয়া ভ্রাতা বা তদনুজ্ঞয়া। ঐ

 বৃদ্ধমনু বলেন, অপুত্রা সাধ্বী পত্নী স্বামীর পিণ্ডদানের ও সম্পূর্ণ অংশের অধিকারিণী—

পত্যৈব দদ্যাৎ তৎপিণ্ডং কৃৎস্নমংশং লভেত চ। ঐ

 প্রজাপতিকে উদ্ধৃত করিয়া বরদরাজ বলেন, ভার্যা অর্ধাঙ্গিনী, পুণ্যাপুণ্যফলভাগিনী, তিনি বাঁচিয়া থাকিতে স্বামীর ধন কেন অন্যে পাইবে?—

আম্নায়ে স্মৃতিতন্ত্রে চ লোকাচারে চ সূরিভিঃ।
শরীরার্ধং স্মৃতা জায়া পুণ্যাপুণ্যফলে সমা।
যস্য নোপরতা ভার্যা দেহার্ধং তস্য জীবতি।
জীবত্যর্ধশরীরেঽর্থং কথমন্যঃ সমাপ্নুয়াৎ।[১]পৃ ৪৪৯

 শ্রুতির মতেও স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে এক পূর্ণ স্বরূপেরই দুই অংশ। স্ত্রী যদি স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী হন তবে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর মধ্যে তিনিই বর্তিয়া থাকেন (continues to exist), কাজেই তখনও উত্তরাধিকারের প্রশ্নই উঠে না।


  1. এখানে বরদরাজ একটি চমৎকার যুক্তির অবতারণা করেন। শ্রুতি অনুসারে স্বামী ও স্ত্রী দুইই এক। এক সত্তারই দুই অর্ধ ভাগ। কাজেই স্বামীর মৃত্যুর পরেও স্ত্রীতে স্বামী অনুবর্তন করেন (continues to exist)। তাই স্বামীর অভাবে স্ত্রীর যে অধিকার তাহাকে ‘উত্তরা’ধিকার বলা উচিত নহে। স্ত্রীর মধ্যে যে স্বামী তখনও বর্তিয়া আছেন। এ যেন ব্যাঙ্কের Payable to either or surivor। অর্থাৎ এখানে উভয়ের যুক্তাধিকার। এক জনের অভাবেও অন্যজনে সেই অধিকারই চলিতে থাকিবে। কাজেই ইহা উত্তরাধিকার নহে। ইহাতে অধিকারের অনুবৃত্তি (continuation) মাত্র বুঝায়। শ্রুতির দোহাই দিয়াই এই বিচারের আরম্ভ।